(বাঁ দিকে) ফিরহাদ হাকিম। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র ।
আর জি কর মামলায় রায় ও সাজা ঘোষণার পর থেকেই নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। এ বার সেই তর্কে সরাসরি জড়িয়ে গেল নির্যাতিতার পরিবার ও রাজ্যের শাসক দল। গোটা ঘটনার দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন আর জি কর হাসপাতালের নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা। এমন কথা বলার এক্তিয়ার তাঁদের নেই বলে দাবি করে রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম অভিযোগ করেছেন, নির্যাতিতার বাবা-মা এখন ‘রাজনীতি’ করছেন! এমন মন্তব্যের জন্য ফিরহাদের বিরুদ্ধে বিরোধীরা আবার সম্মিলিত ভাবে সরব হয়েছে। ‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে’ উঠে পশ্চিমবঙ্গের সব মানুষের কাছে ওই বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক-কন্যার খুন ও ধর্ষণের ঘটনা এবং তা ‘ধামাচাপা’ দিতে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য ও পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। ‘বিচার’ চেয়ে ইতিমধ্যে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছেন। তাঁদের সমালোচনায় আগেই মুখ খুলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এর পরে মন্ত্রী ফিরহাদ রবিবার ওই পরিবারের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ওঁদের প্রতি। কিন্তু পুত্রীশোকে এমন কিছু বলা উচিত নয়, যা ওঁদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না! এখন যা হয়ে গিয়েছে, যাঁদের পাল্লায় পড়েছেন, এখন রাজনীতি করছেন ওঁরা। এটা ঠিক নয়।’’ ফিরহাদের আরও মন্তব্য, ‘‘ মুখ্যমন্ত্রী ওঁদের দয়ায় বা বামপন্থী দলগুলির দয়ায় পদে বসে নেই! বাংলার মানুষ চেয়েছেন বলেই চেয়ারে বসে আছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারও দয়ায় বসে নেই! মানুষের সমর্থন নিয়ে বসে রয়েছেন।’’
নির্যাতিতার বাবা-মা অন্যদের দ্বারা ‘প্রভাবিত’ হচ্ছেন, এই অভিযোগই তুলছে শাসক দল। ফিরহাদ যেমন বলেছেন, ‘‘আবার ওঁকে বলব, এক্তিয়ারের মধ্যে থাকুন। নিশ্চিত ভাবে ন্যায় চাইবেন। সিবিআই যে ভাবে তদন্ত করেছে, আমিও দুঃখিত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনাকে দিয়ে যা বলাবে, তা-ই বলবেন! এতে মানুষের যে সহানুভূতি রয়েছে আপনার উপরে, তা নষ্ট হয়ে যাবে!’’ তৃণমূলের কুণালও এর মধ্যে বলেছেন, ‘‘কেন মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন ওঁরা? মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ তো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীকে ধরেছে! তাঁরা কিছু অন্ধ, তৃণমূল-বিরোধী, বাম-অতি বাম এবং চক্রান্তকারীর কথায় বিভ্রান্ত হয়ে সমানে অবস্থান বদলে চলেছেন!’’
শাসকের আক্রমণের মুখে পড়েও নিজেদের অবস্থানে অনড় নির্যাতিতার মা-বাবা। অভয়া মঞ্চের ডাকে সোদপুরে শনিবার ‘দ্রোহের প্রজাতন্ত্র’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যিনি, তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পুলিশমন্ত্রীও। তাই এখনও একই কথা বলব। আমরা কোনও চক্রান্তের ফাঁদে পা দিইনি। শিয়ালদহ আদালতের বিচারক যে রায় দিয়েছেন, তা পড়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রিত্বের অধিকার হারিয়েছেন! রায়ের প্রতিলিপিটা অবিলম্বে পড়ে, বুঝে, গোটা ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত ওঁর।’’ সিবিআইয়ের ভূমিকার বিরুদ্ধেও মুখর তাঁরা। প্রসঙ্গত, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এবং অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করেছে রাজ্য সরকার। যার শুনানি হওয়ার কথা সোমবার।
এই বিতর্কে বিরোধীরা নির্যাতিতার পরিবারের পাশেই দাঁড়িয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর কথায়, ‘‘আমি সর্বতো ভাবে বাবা-মায়ের পাশে আছি। পশ্চিমবঙ্গের সব মানুষের কাছেও আবেদন করব, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ওঁদের পাশে দাঁড়ান।’’ মামলায় সাজা ঘোষণার পরেও নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর সংযোজন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে অনেক বার কথা বলেছি। ঘটনার তদন্ত এবং মামলার একেবারে ভিতরে ঢুকে ওঁরা গোটা বিষয়ের খোঁজ রেখেছেন। নিজেরা যা বুঝতে পারছেন, সেটাই বলছেন। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া আর্থিক সাহায্য এবং তার পরে আদালতে দাঁড়িয়ে ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর জন্য সাহস লাগে! সেই সাহস নিয়েই ওঁরা লড়াই করছেন, তার পাশে আছি।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই তো ওঁরা প্রথমে ভরসা রেখেছিলেন। তার পরে বুঝতে পেরেছেন, মুখ্যমন্ত্রী সন্দীপ ঘোষদের পাশে থেকেছেন। স্বাস্থ্য ও পুলিশ-প্রশাসন তথ্য-প্রমাণ লোপাট করেছে। তাই এখন বাবা-মা এই কথা বলছেন। আর মেয়র প্রশ্ন তুলছেন এক্তিয়ার নিয়ে! কলকাতায় যে ভাবে একের পর এক বাড়ি হেলে পড়ছে, মেয়রেরই তো পদে থাকার এক্তিয়ার নেই!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়েরও মন্তব্য, ‘‘পদত্যাগের দাবি যে কেউই করতে পারেন। তার জন্য সন্তানহারা বাবা-মাকে যে ভাবে আক্রমণ করছেন রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা, তার নিন্দার ভাষা নেই। বিচার দিতে পারেননি, পুলিশ ধামাচাপা দিয়েছে। এর পরেও বাবা-মায়ের প্রতি এমন কথা কি মুখ্যমন্ত্রী অনুমোদন করেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy