গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভাইফোঁটার চমক জল্পনা তৈরি করেছে তাঁদের ‘ঘর ওয়াপসি’ নিয়ে। শুক্রবার রাজ্য সরকার শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা বাড়ানোয় সেই জল্পনা আরও অক্সিজেন পেল। কিন্তু সে সবের মাঝেও হালকা খচখচানি তৈরি হল একটা জন্মদিনের পার্টিকে ঘিরে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ের বার্থডে পার্টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপি অবশ্য মৃদু সৌজন্য বহাল রেখে শোভনকে ধরে রাখার প্রচ্ছন্ন চেষ্টা চালিয়ে গেল।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র মেয়ে রিলিনার জন্মদিন ছিল শুক্রবার। সেই উপলক্ষে পার্টি আয়োজিত হয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গোলপার্কের আবাসনের কমিউনিটি হলে। তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই দলের নেতৃত্বই নিমন্ত্রিত ছিলেন পার্টিতে। তৃণমূলের কেউ গেলেন না। বিজেপিরও প্রথম সারির কাউকে সেখানে দেখা গেল না। কিন্তু কেউ ফোন করে, কেউ উপহার পাঠিয়ে সৌজন্যটুকু বহাল রাখার চেষ্টা করলেন। পরের সারিতে থাকা কয়েকজন নেতা পৌঁছেও গেলেন।
ভাইফোঁটার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে গিয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বেহালা পূর্বের বিধায়ক তথা অধুনা বিজেপি নেতা শোভনকে সে দিন ফোঁটা দেন মমতা। ফোঁটা দেন বৈশাখীকেও। উপহার দেওয়া-নেওয়া হয়। ফুরফুরে মেজাজে ঘণ্টা দুয়েক গল্প-গুজবও চলে বলে খবর। তার ফাঁকেই মেয়ের জন্মদিনের পার্টিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিমন্ত্রণ করেছিলেন বৈশাখী। তবে ১ নভেম্বর ওই পার্টিতে যেতে পারবেন না বলে তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। অন্য কোনও সময়ে যাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন, দাবি শোভন ঘনিষ্ঠদের।
আরও পড়ুন: মুঘলদের মতো হুমকি দিচ্ছে বিজেপি, তোপ দাগল শিবসেনা
আরও পড়ুন: ফের রক্তদানের নামে রক্ত ‘বিক্রি’ খাস কলকাতায়! মিলল বড় ইলিশ, ইনডাকশন
কিন্তু নিমন্ত্রণ শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল না। শোভনের বাড়িতে আয়োজিত পার্টিতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও নিমন্ত্রিত ছিলেন। পার্থর সঙ্গে বৈশাখীর সম্পর্ক বরাবরই ভাল। নিজের কলেজের একটা সমস্যা নিয়ে এক বার সাংবাদিক বৈঠক করে পার্থর বিরুদ্ধে বৈশাখী তোপ দেগেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাতেও সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। শোভনদের বিজেপিতে যোগদানের পরেও পার্থ-বৈশাখী সমীকরণ অটুট থেকেছে। সেই সমীকরণের সেতু বেয়েই গোটা একটা বছর ধরে জমতে থাকা বরফ লহমায় গলিয়ে ভাইফোঁটার দিন কানন পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁর ‘দিদি’র বাড়ি। শোভনের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের দাবি অন্তত সে রকমই। কিন্তু এ হেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ের জন্মদিনের পার্টিতে দেখা যায়নি। কোনও প্রতিনিধিও পার্থ পাঠাননি।
তৃণমূলের কেউ কেন গেলেন না? প্রশ্ন তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। প্রায় এক বছর পরে শোভন চট্টোপাধ্যায় ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমীপে হাজির হলেন, মাত্র কয়েক দিন আগের ঘটনা। ভাইফোঁটায় মমতার বাড়িতে হাজির হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কিন্তু খুব একটা সহজ কাজ ছিল না খাতায়-কলমে বিজেপিতে থাকা শোভনের পক্ষে। তা-ও তিনি গেলেন, সে নিয়ে কোথাও কোনও সাফাই দেওয়ার চেষ্টাও করলেন না। শোভনের সেই কালীঘাট সফরের কয়েক দিনের মধ্যেই ফিরে এল তাঁর প্রত্যাহৃত নিরাপত্তা। ঘটনা প্রবাহ কী ইঙ্গিত দিচ্ছে, পড়তে অসুবিধা হয়নি রাজনৈতিক শিবিরের। তার পরেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ের জন্মদিনের পার্টি তৃণমূলের কাছে ব্রাত্য রইল কেন?
তৃণমূলের কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি এই বিষয়ে। কিন্তু ঘনিষ্ঠ পরিসরে তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা বলছেন, এই পার্টিতে দলের কোনও ওজনদার নেতার পক্ষে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ শোভন এবং বৈশাখীর সম্পর্ককে প্রকাশ্য সিলমোহর দেওয়ার রাস্তা তৃণমূল এখনও নিতে পারেনি। শোভন এবং বৈশাখী, দু'জনকেই যে তিনি গ্রহণ করতে প্রস্তুত, সে বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাইফোঁটার দিনই দিয়ে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু শোভনের বাড়িতে যখন বৈশাখীর মেয়ের জন্মদিনের পার্টি আয়োজিত হচ্ছে, তখন সেখানে উপস্থিত হলে অন্য তাৎপর্য তৈরি হয় বলে তৃণমূলের কারও কারও মত।
তৃণমূলের এই অনুপস্থিতিকেই কিন্তু কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিমন্ত্রিত হয়েও যাননি ঠিকই, তবে ওই পার্টি এড়াতে চাইছেন, এমন কথাও বলেননি। চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে যাবেন বলে ওই পার্টিতে যেতে পারবেন না বলে দিলীপ জানিয়ে দিয়েছিলেন। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যে রাহুল সিংহের জন্মদিনে শোভন-বৈশাখী হাজির হয়েছিলেন, সেই রাহুলকেও শুক্রবার সন্ধ্যায় শোভনের বাড়িতে দেখা যায়নি। কিন্তু রাহুল ফোনে শুভেচ্ছা জানান। রীতেশ তিওয়ারিকে পার্টিতে পাঠান। উপহারও পাঠান।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননও সৌজন্য দেখিয়েছেন বলে শোভনের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত সূত্রে জানা গিয়েছে। পায়ে প্লাস্টার থাকায় মেনন এখন কিছু দিন খুব একটা চলাফেরা করতে পারছেন না। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে সেই অক্ষমতার কথা মেনন আগেই জানিয়েছিলেন, শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় শোভনের বাড়িতে নিজের প্রতিনিধি পাঠান মেনন, তাঁর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেন জন্মদিনের উপহারও। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি চন্দ্র বসুও সস্ত্রীক নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন।
বিজেপির এই কৌশলের অর্থ কী? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শোভনকে নিজেদের দলে ধরে রাখার একটা চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে শোভন-বৈশাখীর ঘুরে আসা এবং তার পরে শোভনের নিরাপত্তা বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিজেপির মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে ঠিকই, সেই কারণেই রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতারা বৈশাখীর মেয়ের জন্মদিনের পার্টি এড়িয়ে গিয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশেষকদের ব্যাখ্যা। কিন্তু শোভনের বিষয়ে সম্পূর্ণ হাল ছেড়ে দিতেও বিজেপি চাইছে না বলেও তাঁরা মনে করছেন। তাই উপহার পাঠিয়ে বা ছোটখাটো নেতাদের পাঠিয়ে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগসূত্রটা বহাল রাখার চেষ্টা হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত।
কারা এলেন, কারা এলেন না, তা নিয়ে শোভন কিছু বলতে চাননি। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “কাউকে নিমন্ত্রণ করাটা আমার সৌজন্যের মধ্যে পড়ে। রক্ষা করাটা তাঁদের সৌজন্যের বিষয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy