উত্তপ্ত সন্দেশখালি। —ফাইল চিত্র।
কোপ কি তবে শুধু উত্তম সর্দারের উপরে? সন্দেশখালির গোটা এলাকায় শোষণ ও অত্যাচারের ‘মূল মাথা’ বলে যাকে স্থানীয়েরা বার বার চিহ্নিত করছে, সেই শিবপ্রসাদ হাজরাও তবে শেখ শাহজাহানের মতো ‘ধরাছোঁয়ার বাইরে’ থেকে যাবে?
শনিবার বিকেলে সন্দেশখালির মাম্পি দাস পুলিশকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘শিবপ্রসাদ আমাদের জমি, পুকুর কেড়ে নিয়েছে, মেয়েদের রেডিমেড পোশাকের দোকান আমাদের। ধারে বিভিন্ন পোশাক নিয়ে দোকান ভাঙার হুমকিও দেয়! প্রভূত সম্পত্তির মালিক শিবপ্রসাদ কেন গ্রেফতার হবে না?’’ মহিলা আধিকারিক মাম্পির বয়ান নথিবদ্ধ করেন। আর এখান থেকেই শিবপ্রসাদের সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তদন্তকারীদের মধ্যেও। সন্দেশখালির বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, দু’হাজার বিঘারও বেশি ভেড়ি আছে শিবপ্রসাদের। কয়েকশো একর চাষ জমি ও খামার। পাঁচটি মুরগি এবং ছাগলের খামার রয়েছে শিঙিপাড়া, সন্দেশখালি-ভোলাখালি, গান্ডার পাড়া, দাসপাড়া প্রভৃতি জায়গায়।
কে এই শিবপ্রসাদ? কী ভাবে তার উত্থান? স্থানীয়দের একাংশের কথায়, একটা সময়ে বামেদের সঙ্গে ছিল শিবু। তবে বড় কোনও নেতা নয়, তাকে মিটিং-মিছিলে দেখা যেত। তার বাবা নীলকান্ত হাজরা সেই আমলে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকেই। এর মধ্যেই হাওয়া ঘুরতে শুরু করে। ঠিক যে ভাবে শেখ শাহজাহান কূল বদলে তৃণমূলে এসে উঠেছিলেন, শিবুও একই পথের পথিক হয়েছিল। তবে তখনও দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়নি। ২০১৬ সাল থেকে শিবু ও শাহজাহানের সখ্য শুরু হয়। অনেকেই বক্রোক্তি করেন, এক রতন অন্য রতনকে চিনে নেয়।
সেই ঘনিষ্ঠতা কতটা? সন্দেশখালির বিভিন্ন এলাকায় দেওয়াল লিখনেই তা স্পষ্ট: ‘...শেখ শাহজাহানের স্নেহধন্য মনোনীত প্রার্থী শিবপ্রসাদ হাজরাকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন।’ শিবপ্রসাদ জেলা পরিষদের তিন বারের সদস্য। এর মধ্যেই তার যত বাড়বাড়ন্ত। স্থানীয় সূত্রে দাবি, শিবপ্রসাদ এই এলাকায় খুব বেশি থাকেনি। গড়িয়া, সোনারপুর, রাজারহাটে তার একাধিক বাড়ি আছে বলেও দাবি অনেকের।
সন্দেশখালির বাসিন্দারা জানান, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই শিবপ্রসাদ ঠিকাদারি, জমির দালালি-সহ নানা ব্যবসা শুরু করে। এবং ফুলেফেঁপে ওঠে। সেই সময়ে সন্দেশখালিতে বহু জমি লিজ়ে নিয়ে মেছো ভেড়ি তৈরি করে সে। সেই সব জমির টাকা সে দেয়নি বলেই অভিযোগ। তাই নিয়েই এ বারের আন্দোলনের সূত্রপাত। সূত্রপাত অশান্তিরও।
বিরোধীদের অভিযোগ, লিজ়ে জমি দখল করার নামে গত দশ বছরে তিনশো কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি করেছে শিবপ্রসাদ। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তুলসী দাস বলেন, ‘‘এই সব নিয়ে আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারি না। তবে এ বার মানুষ মুখ খুলছে।’’ তৃণমূলের তরফে এই নিয়ে কিছু বলতে চাওয়া হয়নি।
এই কাজে শিবু এলাকার মানুষকে ভয় পাইয়ে রাখত বলেই দাবি। আরও অভিযোগ, সেই কাজে তাকে সামনের সারিতে থেকে সাহায্য করত উত্তম সর্দার। এ বারে তারই বদান্যতায়, শাহজাহানের চেষ্টা জেলা পরিষদের টিকিট পায় উত্তম। এ বারে উত্তম পুলিশের জালে পড়েছে। কিন্তু শিবু কোথায়? মুখে কুলুপ পুলিশ-প্রশাসনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy