রাজীবের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কের কোল ঘেঁষে পাশাপাশি পেল্লায় বাড়ি দুটো দেখে অনেকেই মজা করে বলেন ‘জোড়া তাজমহল’। একটি চাপড়ার তৃণমূল নেতা রাজীব শেখের বড় বৌয়ের, অন্যটি ছোট বৌয়ের।
তৃণমূল এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে রাজীবের বাবা কাংলা শেখ একটি পেট্রল পাম্পে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন। নদিয়ার চাপড়া বাজার থেকে কৃষ্ণনগরের দিকে যেতে কাঁঠালতলা এলাকায় তাঁদের ছোট্ট পৈতৃক বাড়ি। সেখান থেকে কিছুটা গেলেই রাজ্য সড়কের উপর রাজীবের সেই জোড়া অট্টালিকা।
দু’টি বাড়িই দামি মার্বেল পাথরে মোড়া। বড় বৌয়ের বাড়ি একটু বড়। নীচে সুসজ্জিত হলঘর, দোতলায় একাধিক ঘর, আধুনিক সরঞ্জামে ঠাসা শৌচাগার আর রান্নাঘর। দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িরও নকশা প্রায় একই। উপরে একটা ঘর কম। তবে দু’টি বাড়িই হাত খুলে সাজিয়েছেন রাজীব।
তৃণমূল আমলে কাংলা-রাজীবের উত্থান প্রায় জেট গতিতে। বাম আমলে সিপিএমের দাপটের মধ্যেও রাজীবের হাত ধরেই চাপড়া বাঙ্গালঝি কলেজে প্রতিষ্ঠা পায় টিএমসিপি। ২০০৮-০৯ সালে পর পর দু’বছর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হন রাজীব। ২০১১ সালে ‘পরিবর্তন’-এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী রুকবানুর রহমান চাপড়ায় জয়ী হওয়ার পরেই কপাল খুলে যায় রাজীবের। অতি দ্রুত রাজীব রুকবানুরের ডান হাত হয়ে ওঠেন।
তৃণমূলেরই একাংশের অভিযোগ, পুরনো কর্মীদের হটিয়ে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে শুরু করেন রাজীব। তাঁর বড় বৌ আসমাতারা বিবি বর্তমানে চাপড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। বাবা কাংলা শেখ ক’দিন আগে পর্যন্ত ছিলেন দলের অঞ্চল সভাপতি। রাজীব নিজে ছিলেন চাপড়া ব্লকের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি। পদ হিসাবে তা তেমন ওজনদার না হলেও মাথার উপরে বিধায়কের হাতই রাজীবের শক্তির আসল উৎস ছিল বলে দলেরই একাংশের দাবি।
এক সময়ে চাপড়া ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠিকাদারির আসল নিয়ন্ত্রণ ছিল কার্যত রাজীবের হাতেই। নিজেও ঠিকাদারি করেছেন। যত দিন গিয়েছে ততই বৈভব বেড়েছে রাজীব-কাংলার। দুটো বাড়ি, একাধিক গাড়ি, একাধিক দামি মোটরবাইক। এ ছাড়া বকলমে তিনটি ইটভাটা, শ্রীনগর মোড়ে বড় পাটের গুদাম, কয়েক জনের সঙ্গে অংশীদারিতে ‘সুপার মার্কেট’। চাপড়া ও ভান্ডারখোলা-সহ বিভিন্ন জায়গায় জমিও নাকি রয়েছে যার আর্থিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে রাজীব ঘনিষ্ঠদের দাবি।
কোন জাদুবলে মাত্র পাঁচ-ছয় বছরে এত সম্পত্তি করে ফেললেন বাবা-ছেলে? শাসক দলের পদ ও ক্ষমতা অপব্যবহার করে?
প্রায় ফুঁসে ওঠার ভঙ্গিতে রাজীব বলেন, “কে বলেছে এ সব কথা? সব পরিশ্রমের টাকা। সৎ ভাবে ঠিকাদারি করেছি। কখনও বেআইনি কোনও কাজ করিনি বা দলকে ভাঙাইনি।” এত কম দিনে এত টাকা আয় করা কী করে সম্ভব? রাজীবের দাবি, “আমার বাবার দীর্ঘ দিনের ভুসিমালের ব্যবসা ছিল। তা ছাড়া, বাবা প্রায় ২২ বিঘা পৈতৃক জমি পেয়েছিলেন, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।” কাংলার দাবি, “ফুলকলমি এলাকায় আমার অনেক পৈতৃক জমি ছিল। সেই জমি বিক্রি করেছি। তা ছাড়া কবে থেকে পাটের ব্যবসা করে আসছি। আমরা বাপ-বেটায় দিনরাত পরিশ্রম করে এই সম্পত্তি করেছি। সবটাই সৎ পথে পরিশ্রম করে করা।”
সম্প্রতি তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে বাবা-ছেলে পদচ্যুত হয়েছেন। চেনা হিসাব পাল্টে গিয়েছে। এক সময়ে যাঁর হাত ধরে রাজীবের উত্থান, সেই বিধায়ক রুকবানুর রহমানের বক্তব্য, “আমরা জানতাম, রাজীবের ঠিকাদারি ব্যবসা আছে। কিন্তু পরে আস্তে আস্তে ওর গোপন আয়ের উৎসগুলো সামনে আসতে শুরু করে। তা নিয়ে প্রশ্ন করলে কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। সেই কারণেই আমরা ওকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy