Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
DA

ডিএ মিছিলে ম্যাচ বেহাত রাজ্যের, মমতার ‘অতীত’ খুঁচিয়ে অস্বস্তি বাড়ালেন তৃণমূলের কর্মচারী নেতা

মহার্ঘ ভাতার দাবি নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন ১০০ দিন পার করেছে শনিবার। সেই দিনেই কলকাতায় মিছিলে প্রতিবাদ হয়েছে। মিছিল শেষে সভায় রাজনৈতিক রংও লেগেছে।

TMC leader Manoj Chakraborty wants standing order from Nabanna on DA issue

মহার্ঘ ভাতা নিয়ে মহা-অস্বস্তি তৃণমূলের। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৩ ১৩:৫০
Share: Save:

মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারের যে নমনীয় মনোভাব নেওয়া উচিত, তা আগেই বলেছিলেন তৃণমূলেরই সরকারি কর্মচারী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী। কিন্তু সেই প্রস্তাবে সরকার কান দেয়নি। শনিবার সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকে কলকাতার মিছিলের পরে মনোজ মনে করছেন, ‘ম্যাচ হাতছাড়া’ হয়ে গিয়েছে নবান্নের।

সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনে শনিবার যে ভাবে রাজনৈতিক রং লেগেছে, তার নিন্দা করলেও মনোজ বলেন, ‘‘যে ভাবে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা কর্মচারী সংগঠনের মঞ্চে উঠলেন, সেটা কখনও কাম্য নয়। সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টা বিবেচনাধীন। তবে আগে থেকে সরকার উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি এই জায়গায় যেত না।’’ মনোজ আরও বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে নয়, সরকারের অঙ্গ সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই আলোচনায় বসা দরকার ছিল। এখনও সময় রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেই পারেন, সরকারের যে আর্থিক অবস্থা তাতে তিনি কতটা করতে পারবেন।’’ মনোজের এই দাবি নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘এখন তো অদ্ভুত ভাবে সব কিছুই রাজনৈতিক হয়ে যায়। ডিএ নিয়ে আন্দোলন হতেই পারে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। শুধু বাংলা বা ভারত নয়, গোটা বিশ্বেই একটা আর্থিক সঙ্কট চলছে। বিষয়টা সরকারি কর্মচারীদের মাথায় রাখা উচিত।’’

বাম জমানায় সরকারি কর্মচারীদের মূল সংগঠন ছিল কো-অর্ডিনেশন কমিটি। সেই সময়ে তৃণমূলের সংগঠন গড়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন মহাকরণে কর্মরত মনোজ। তাঁর সভাপতিত্বেই তৈরি হয় তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। অবসরের পর তিনি দীর্ঘ সময় সংগঠনের ‘মেন্টর’ পদেও ছিলেন। এখন তৃণমূলের নদিয়া জেলা কমিটিতে রয়েছেন মনোজ। সেই মনোজ শনিবারের মিছিল দেখার পরে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এখন বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম ডিএ আন্দোলনকে একটা তৃণমূল বিরোধী মঞ্চে রূপান্তরিত করছে। এটায় আমার আপত্তি। রাজনৈতিক রং নিয়ে আন্দোলন ঠিক নয়।’’ একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, বৃহৎ শক্তির সবাইকে একসঙ্গে হতে হয়। এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘বাম আমলে তৃণমূলের ডিএ নিয়ে আন্দোলনে আমিই ছিলাম মূল চরিত্র। কিন্তু সেই সময়ে আমরা যে কথা বলেছিলাম তার থেকে আমার সরে গিয়েছি এটা তো অস্বীকার করা যাবে না। ২০১১ সালের ২ মার্চ সোনারপুরে সরকারি কর্মচারীদের একটি সমাবেশ হয়েছিল। সেখানে আমার থেকে বিভিন্ন পরিসংখ্যান জেনে নিয়েই মমতা বক্তব্য রেখেছিলেন। তখন তিনি ক্ষমতায় এলে ডিএ-র দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। আশা ছিল, ক্ষমতায় তৃণমূল এলে প্রাপ্য ডিএ মিলবে।’’

মমতা সেই সময়ে ডিএ নিয়ে ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডার’ সরকার দেবে বলেও জানিয়েছিলেন বলে দাবি মনোজের। তিনি বলেন, ‘‘অনেক রাজ্যেই ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডার’ রয়েছে। যে কেন্দ্রীয় সরকার ডিএ বাড়ালেই রাজ্যও ডিএ বাড়াবে। এখন ফেডারেশনের নেতারা এই দাবি থেকে সরে আসতে পারেন কিন্তু বাম আমলে এটাই ছিল আমাদের প্রধান দাবি। তাতে সমর্থনও ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।’’ এর পরেই মনোজ বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি বিজেপি ক্ষমতায় এলে বকেয়া ডিএ এবং স্ট্যান্ডিং অর্ডার দেবে কিন্তু সিপিএম রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরলে সেটা হবে না। কারণ, এমন দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অসীম দাশগুপ্তরা। ওঁরাই স্ট্যান্ডিং অর্ডার না দিয়ে ভুল করে গিয়েছেন।’’

এখন কি রাজ্য সরকারের স্ট্যান্ডিং অর্ডার চালু করা উচিত? মনোজ বলেন, ‘‘এই রাজ্য সরকার অনেক ভাল কাজ করছে। যা অতীতে হয়নি। সেই সঙ্গে কর্মচারীদের স্বার্থ দেখে স্ট্যান্ডিং অর্ডার দরকার। আমার অন্য বন্ধুরা এই দাবি থেকে সরে আসলেও আমি সরিনি।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আজ রাজনৈতিক মাত্রা পেয়ে গিয়েছে এই আন্দোলন। সরকারি কর্মচারী এবং স্কুলের শিক্ষকেরা তিনটে রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে চলবেন, এটা কাম্য নয়। এটা রাজনৈতিক ভাবেই প্রতিহত করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের প্রচার করতে হবে।’’ মনোজ সরাসরি না বললেও তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠনের অনেকেই মনে করছেন, একগুঁয়েমি না দেখিয়ে সরকার এই দাবিটা আগেই মেনে নিলে বিষয়টা রাজনৈতিক রং পেত না। এ বিষয়ে মনোজ কিছু না বললেও তাঁর দাবি, ‘‘সরকার যে সব প্রকল্পে সুনাম পাচ্ছে সেগুলি সফল করছেন সরকারি কর্মচারীরাই। তবে এই আন্দোলন যদি তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য হয়, তবে আমি তার পাশে নেই।’’

তৃণমূল বার বার দাবি তুলছে, কেন্দ্রীয় সরকার বকেয়া টাকা আটকে না রাখলে বকেয়া ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। অনেক নেতাই দাবি করেছেন, একশো দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখার জন্য সরকারের কোষাগার শূন্য। এই প্রসঙ্গে মনোজ বলেন, ‘‘এ সব বলে লাভ নেই। বোকা বোকা কথা। ওই সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা তো সংশ্লিষ্ট কাজেই খরচ করতে হবে। সেটাই তো নিয়ম। ওই টাকা দিয়ে কি সরকারি কর্মচারীদের বেতন বা বকেয়া ডিএ দেওয়া যায় নাকি?’’

অন্য বিষয়গুলি:

DA Mamata Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy