তৃণমূলের মনোজের গলায় বিরোধীদের সুর। ফাইল চিত্র।
মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) নিয়ে মহাচাপে রাজ্য সরকার। রাজ্য বাজেটের দিন ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেও সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়নি। আগে থেকেই চলছিল বিক্ষোভ-অনশন। সোমবার থেকে সরকারি কর্মচারীদের একাংশ কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন। এরই মধ্যে সরকারের চাপ বাড়িয়ে দিলেন তৃণমূলেরই সরকারি কর্মচারী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী। তিনি সরাসরি দাবি করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলকে নিয়ে সরকারের আলোচনায় বসা দরকার। একই সঙ্গে মনোজের পরামর্শ, সরকার তার আর্থিক পরিস্থিতির কথা বলে কতটা ডিএ দিতে পারবে, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক।
বাম জমানায় সরকারি কর্মচারীদের মূল সংগঠন ছিল কো-অর্ডিনেশন কমিটি। সেই সময়ে তৃণমূলের সংগঠন গড়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন মহাকরণে কর্মরত মনোজ। তাঁর সভাপতিত্বেই তৈরি হয় তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। অবসরের পর তিনি দীর্ঘ সময় সংগঠনের ‘মেন্টর’ পদেও ছিলেন। সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনকে মনোজ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উচিত ফেডারেশন-সহ সব পক্ষকে ডেকে নিয়ে আলোচনায় বসা। সরকারকেই আগ বাড়িয়ে কাজটা করতে হবে। যে আর্থিক অবস্থা রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হোক। এই ব্যাপারে একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক।’’
এর মাধ্যমেই সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে বলে মনে করেন মনোজ। তিনি বলেন, ‘‘আলোচনা করলেই ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হবে। সরকারও তার বর্তমান আর্থিক অবস্থাটা জানাতে পারবে। কতটা ডিএ সরকারি কর্মচারীদের দেওয়া সম্ভব, সেটাও জানাতে পারবে। কিন্তু সেই আলোচনাটাই সরকার করছে না!’’
তবে এখন যে আন্দোলন চলছে, তাতে সম্মতি বা সমর্থন নেই মনোজের। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে এটা প্রতিভাত হয়েছে যে, ডিএ একটা অধিকার। এটাকে অস্বীকার করার জায়গায় কেউ নেই। এর বিরোধিতা করতে গেলে আইনের মাধ্যমেই করতে হবে। সেই কারণেই আইনের মাধ্যমে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। ১৫ মার্চ তার শুনানি। এখন সকলেরই সেই রায়ের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।’’
সুপ্রিম কোর্ট সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে রায় দিলে রাজ্য সরকার কি তা পূরণ করতে পারবে? মনোজের জবাব, ‘‘সরকার দিতে পারবে কি না সেটা তো সরকারি কর্মচারীদের বলার কথা নয়! সরকার তো বিদ্যুৎ পর্ষদের কর্মীদেরও দিচ্ছিল না। আদালতের রায়ের পরে দিচ্ছে।’’
ডিএ-র দাবি যে ‘ন্যায্য’, তা জানিয়ে মনোজ বলেন, ‘‘সবাই চায় ডিএ। তবে আমরা এটাও চাই না যে, সরকারকে বিপদে ফেলে দিয়ে ডিএ নেব। সেই কারণেই সরকারের উচিত সকলকে নিয়ে বসা। যাঁরা মামলা করেছেন তাঁদের এবং বাকি সকলকে নিয়ে আলোচনা হোক। যে কোনও কর্মচারী বা শ্রমিক সংগঠনের প্রথম কাজ হল আলাপ-আলোচনা করা। সেটা না হলে কোনও সমাধান হবে না।’’
মনোজ জানান, বাম জমানায় তৃণমূলের হয়ে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন করার সময় তাঁকে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনবার বদলি হয়েছে। মহাকরণে এবং অন্যত্র তাঁর উপর আক্রমণও হয়েছে। ২০০৭ সালে সেচ ও জলপথ দফতরের প্রশাসনিক আধিকারিক পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরে চাকদহের বাসিন্দা মনোজ সংগঠনের ‘মেন্টর’ পদে ছিলেন। সেই সময়ে তিনি বাম সরকারের উপর ডিএ নিয়ে চাপ তৈরি করেছিলেন। এখন মনোজের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার যে সব প্রকল্প নিয়ে গর্ব করে, সেই কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী তো সরকারি কর্মচারীদের হাত ধরেই সফল হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পে মানুষকে টাকা দেওয়ায় আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সেই সব প্রকল্প যাঁরা রূপায়িত করছেন, তাঁদেরও তো কিছু দিতে হবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি সেই কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদের কথাও সরকারকে ভাবতে হবে।’’
এমন খোলাখুলি ‘বিরোধীদের সুরে’ সরকারের সমালোচনা করলে তাঁর দল এবং সংগঠন তো ক্ষুব্ধ হতে পারে? প্রশ্নের জবাবে মনোজ বলেন, ‘‘হলে হবে। সকলেরই তো কোনও ব্যক্তিগত মতামত থাকবে। আমি চাই আলোচনা হোক। আলোচনা না হলে ক্ষোভ জমে যায়। আমি লড়াই করতে চাইছি না। সমাধান চাইছি। মনে রাখতে হবে, সরকারি কর্মচারীরা সরকারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আলোচনা করলে অনেক সমস্যাই মিটে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy