কারাবাসের দিনগুলোর লড়াইয়ের কথা শোনালেন কুণাল। ফাইল চিত্র।
২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর। সারদা-কাণ্ডে বিধাননগর কমিশনারেটের হাতে গ্রেফতার হন তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। তার পর প্রায় দু’ বছর ১০ মাস কারাগারের দিনযাপনের যন্ত্রণা সয়েছেন। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। বরং জেলযাপন থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে ক্রমাগত আগামীর পথে হাঁটার সাধনা করে গিয়েছেন। সেই তপস্যার ফলস্বরূপ জেলের অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়ে ইতি টেনে অরুণ আলোর পথযাত্রী হয়ে ফিরেছেন কুণাল। আগামী প্রজন্মের কাছে তাঁর সেই ঘুরে দাঁড়ানোর ‘স্পিরিট’টাকেই জিইয়ে রাখার কথা বললেন তৃণমূলের মুখপাত্র।
শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ অনুষ্ঠান ‘অ-জানাকথা’য় জেল-জীবনের সেই কাহিনি তুলে ধরেছেন কুণাল। একাধারে তিনি বাংলার শাসকদলের মুখপাত্র। আবার অন্য দিকে দীর্ঘ কয়েক দশকের দুঁদে সাংবাদিক। সাহিত্যিক হিসাবে তাঁর কলমও ক্ষুরধার। আগামী ১০ বা ২০ বছরে মানুষ এই তিন সত্তার মধ্যে কুণালকে কী হিসাবে মনে রাখবে? এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কুণাল বললেন, ‘‘এগুলোর বাইরে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, মানুষ আমাকে একটা ‘সিম্বল’ হিসাবে মনে রাখুক। যে যাবতীয় ঝড়-ঝঞ্ঝা, খারাপ সময় ভগবানের আশীর্বাদে অতিক্রম করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পারফর্ম করছে। যেটা দেখে আরও অনেকে, যাঁরা অকারণে কোণঠাসা হয়ে যান, তাঁরা যেন অনুপ্রাণিত হন। আমার এই ‘স্পিরিট’টাকে যেন মানুষ ইতিবাচক দিক থেকে দেখে।’’
সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতারের পর প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি ছিলেন কুণাল। তৃণমূল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। একদা প্রিয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি’র জন্য দূরত্ব বেড়েছিল। নেত্রীর বিরুদ্ধে সরব হতেও দেখা গিয়েছিল কুণালকে। কিন্তু সেই ঘটনাবলিকে স্মৃতির খাতায় তুলে নতুন উদ্যমে আবারও জীবনের ‘নয়া ইনিংস’ শুরু করেছেন ‘কেজি’ (বাংলা সাংবাদিক মহলে কুণালকে এই নামেই ডাকেন তাঁর সহকর্মীরা)। এই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের নেপথ্যে কারাবাস যে তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, সে ব্যাপারে অকপট কুণাল। তিনি বলেছেন, ‘‘এই কারাজীবন শিখিয়েছে বা দেখিয়েছে, যে বেঁচে থাকতে একটা কম্বলের মতো জায়গা দরকার, যেখানে শরীরটাকে রাখা যায়, যার উপর শোওয়া যায়। সেটা ছেঁড়া হতে পারে বা পাতলা হতে পারে। বেঁচে থাকতে লাগে একটা চটের ব্যাগ, যেখানে দুটো টি শার্ট, বারমুডা, আর আদালতে যাওয়ার জন্য একটা প্যান্ট লাগে। সপ্তাহের সাত দিন হয়তো ওলের ঝোল খেয়েই কেটে যেত। বাঁচার জন্য এটুকুই দরকার।’’
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বললেন, ‘‘বাকি যেটা থাকে সেটা মুখ। আমি কী কাজ করছি, কী পারফর্ম করছি, কী ভালো করছি, আর কী খারাপ। তার সঙ্গে দামি শার্ট, ঘড়ি, গাড়ির কোনও সম্পর্ক নেই। যখন আমার কিছু ছিল না, মাটিতে শুয়েছিলাম। তখনও তো জীবনের মানে খুঁজে গিয়েছি। কোনটা মুখোশ, আর কোনটা মুখ। বিপদের বন্ধু কে, সুখের পায়রা কে, এটা দেখার জন্য জেলের থেকে ভাল শিক্ষণীয় স্থান কিছু হয় না। তবে কারও জেলযাত্রা কামনা করছি না...।’’
রাজনীতির আঙিনায় তাঁর সক্রিয় বিচরণ সত্ত্বেও সাংবাদিকতাই যে তাঁর ‘প্রথম পছন্দ’ সে কথাও বললেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার প্রথম পছন্দ সাংবাদিকতা। কাগজ সাজাতে খুব ভাল লাগে। আমি এই কাজগুলি নিয়ে আরও এগোতে চাই।’’
সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতারের পর কুণালের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল কুণালকে। কিন্তু জেলমুক্তির পর আবারও সেই তৃণমূলেই স্বমহিমায় প্রত্যাবর্তন ঘটেছে তাঁর। রাজনীতিতে তাঁর এই ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ প্রসঙ্গে ‘মন খুলে’ কুণাল বললেন, ‘‘রাজনীতি করছি জেদ থেকে, আর মনের ভালবাসা থেকে। কারণ, মাঝপথে সেখান থেকে চলে যেতে হয়েছিল। আমি কিন্তু সেই দলটাতেই আছি। আনুগত্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেনাপতি। আমার কাছে এমএলএ, এমপি, মন্ত্রী, পুরপিতা, কোনও জনপ্রতিনিধিত্ব, সরকারের কমিটির মাথায় বসে থাকা— এ সবে আগ্রহ নেই। আমার নেত্রী আমায় বিশ্বাস করেন কি না, পছন্দ করেন কি না, আমার নেতা আমার উপর আস্থা রাখছেন কি না, সহকর্মীরা ভালবাসেন কি না, সেটাই আসল। আমি মাথা তুলে, মাথা উঁচু করে রাজনীতি করব। আমার কোনও চাহিদা নেই। নেত্রী ও সেনাপতির সৈনিক হিসাবে গর্বের সঙ্গে তৃণমূল করব। লোকে যেন মনে রাখে।’’
‘অগ্নিপথ’ পার করে মাথা উঁচু করে কুণালের এ হেন প্রত্যাবর্তনের বাস্তব কাহিনি বঙ্গজীবনে সচরাচর খুব একটা দেখা যায়নি। আগামী প্রজন্মের কাছে তাঁর সেই লড়াকু কাহিনি যাতে প্রেরণা জোগায়, সেই বার্তাই বার বার দিতে চাইলেন কুণাল। বললেন, “অন্ধকার রাস্তা পার হয়ে লড়়াই করার ক্ষমতা রাখে ঈশ্বরবিশ্বাসী কুণাল ঘোষ, এই স্পিরিটটাকে যেন মানুষ ভালবাসে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy