তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফাইল চিত্র
দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে তাঁর নামে ‘নতুন তৃণমূল’ সংক্রান্ত যে হোর্ডিং পড়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এখন আছেন দুবাইয়ে। চলতি সপ্তাহেই তাঁর শহরে ফেরার কথা। শিবিরের একাংশের অনুমান, দুবাই থেকে ফিরে অভিষেক ওই বিষয়টি স্পষ্ট করলেও করতে পারেন। তবে সেটিও নিশ্চিত ভাবে কেউই বলতে পারছেন না।
যে হোর্ডিং পড়েছে, তাতে অভিষেকের ছবি রয়েছে। তার সঙ্গেই লেখা আছে,‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল।ঠিক যেমন সাধারণ মানুষ চায়।’দু’টি সংগঠনের নামে ওই হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। ওই দুই সংগঠনের সভাপতি কুমার সাহা বলেছেন, ‘‘অভিষেককে আলাদা ভাবে নেতা হিসাবে তুলে ধরার কোনও প্রয়োজন নেই। তিনি নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। আমরা তাঁকে ভালবাসি। তিনি দলে স্বচ্ছতার কথা বলেছেন। তাই পোস্টার দিয়েছি। এ বার ১০০টি হোর্ডিং দিয়েছি। আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়েও আমরা পোস্টার দিয়েছি।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ওই হোর্ডিং তো দলের নয়। উৎসাহী কেউ করে থাকতে পারেন। অভিষেকের বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃতি নেওয়া হয়েছে। কাউকে তুলে ধরার কথা অর্থহীন। মমতাদির নেতৃত্বে, অভিষেকের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কংগ্রেস চলছে।’’
এই ঘটনাপ্রবাহের সময় অভিষেক অবশ্য শহরে নেই। তাঁর ঘনিষ্ঠমহল জানাচ্ছে, গত রবিবার তিনি দুবাই গিয়েছেন। ফেরার কথা বৃহস্পতি বা শুক্রবার। কী কারণে তিনি দুবাই গিয়েছেন, তা অবশ্য জানাতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও অভিষেকের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, প্রতিবার চোখের চিকিৎসার জন্যই তাঁকে দুবাই যেতে হয়। এ বারও চোখের চিকিৎসার জন্যই অভিষেককে দুবাই যেতে হয়েছে।
এর আগে অভিষেকের দুবাই যাওয়া নিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তীব্র আপত্তি তুলেছিল। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে চোখের চিকিৎসার জন্য দুবাই যাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তাঁর আবেদনের বিরোধিতা করেছিল ইডি। সংস্থার আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেছিলেন, ফেরার বিনয় মিশ্র বর্তমানে দুবাইয়ে রয়েছেন। ইডির আশঙ্কা, অভিষেক বিনয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেও দেশ ছেড়ে যেতে পারেন। ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত অভিষেক একাধিক বার বিনয়ের সঙ্গে বিদেশসফর করেছেন বলেও আদালতে দাবি করেছিল ইডি। পাশাপাশিই তাদের প্রশ্ন ছিল, ভারতে এত ভাল চক্ষুচিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থাকতেও কেন অভিষেককে দুবাইয়ে যেতে হচ্ছে! ইডি আরও বলেছিল, অভিষেক কোন চিকিৎসকের কাছে চোখ দেখাবেন, তা-ও স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।
কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট অভিষেককে চিকিৎসার কারণে দুবাইযাত্রার অনুমতি দিয়েছিল। ৩ থেকে ১০ জুন সস্ত্রীক দুবাইয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তবে পাশাপাশিই অভিষেককে বিমানের টিকিট, হোটেল, ফোন নম্বর, হাসপাতালের নাম ইডির কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।সেই অনুযায়ীই সব নির্দেশ পালন করেছিলেন অভিষেক। তবে এ বার তিনি ইডিকে দুবাইযাত্রার সূচি জানিয়ে গিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট করে কেউই বলতে পারেননি। ঘটনাচক্রে, ইডি বাংলায় এখন যথেষ্ট ‘সক্রিয়’। কিন্তু এ বার অভিষেকের দুবাই-সফর নিয়ে তারা কোনও আপত্তি তোলেনি বলেই মনে করছেন অনেকে।
ঘটনাচক্রে, রবিবার সকালে দুবাই গিয়েছেন অভিষেক। ওইদিনই রাত ১২টায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি ফেসবুক লাইভ করেছিলেন তিনি। যেখানে তিনি বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতায় ওই হোর্ডিং পড়েছিল। সূত্রের খবর, অভিষেক দলের অন্দরে ‘স্বচ্ছ তৃণমূল’ অভিযান শুরু করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্ন নেতাকে নিয়ে সমীক্ষা করানো হচ্ছে। দলের অন্দরে কাদের ভাবমূর্তি আমজনতার কাছে ভাল, কাদের নয়— সেই সমস্তই খতিয়ে দেখা হবে ওই সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে। তার ভিত্তিতেই ভবিষ্যতে পদাধিকারী নিয়োগ হবে বলে তৃণমূলের একটি অংশের বক্তব্য।
তবে পাশাপাশিই দলের নেতারা চাইছেন, শহরে ফিরে অভিষেক ওই হোর্ডিংয়ের বিষয়টি স্পষ্ট করুন। প্রসঙ্গত, অভিষেক সবসময়েই বলে এসেছেন, তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এক থেকে ১০০ নম্বর। বাকিরা সকলেই কর্মী। তিনিও দলের কর্মী মাত্র। তবে ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে অভিষেক প্রকাশ্যেই ‘নতুন তৃণমূল’ তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ওই হোর্ডিং তারই ফল হতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy