বাঁ দিক থেকে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র এবং মানিক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
ইডি-র (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের) নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কিত নথিতে উঠল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র বিরুদ্ধে তদন্তের একটি রিপোর্টে এসেছে অভিষেকের নাম ও প্রসঙ্গ। ইতিমধ্যেই ওই রিপোর্টটি পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারের সই-করা সেই নথির ৩১ নম্বর পাতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নামের উল্লেখ রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। তবে ওই নথির ভিত্তিতে অভিষেক সম্পর্কে কোনও পদক্ষেপ করা হবে, তা নয়। পুরো বিষয়টিই এখনও ‘তদন্তসাপেক্ষ’ বলে ইডির এক আধিকারিক জানিয়েছেন।
যে সুজয়ের বিরুদ্ধে তদন্তের নথিতে অভিষেকের নাম এসেছে, সেই সুজয়কে মাস দুয়েক আগে গ্রেফতার করেছে ইডি। গ্রেফতারির দিন দশেক আগে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় প্রচুর নথিপত্র এবং ‘ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ’। সেই সব নথিপত্র এবং ডিজিটাল তথ্য তদন্তের প্রয়োজনে নিজেদের হেফাজতে রাখতে চাইছে ইডি। এ জন্য আর্থিক দুর্নীতি দমন আইন (পিএমএলএ) সংক্রান্ত মামলার বিচারকারী কর্তৃপক্ষ (অ্যাডজুডিকেটিং অথিরিটি)-র কাছে আবেদনও করা হয়েছে। সেই আবেদনপত্রেই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তকারী অফিসার উল্লেখ করেছেন, ‘সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র তৎকালীন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করতেন। সুজয় ভদ্র তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সেই সময় সুজয় ভদ্র তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্যের অফিসে যেতেন অভিষেকের বার্তা পৌঁছে দিতে।’
যদিও ঠিক কী বার্তা সুজয় মানিককে পৌঁছে দিতেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে ইডি সূত্রে কিছু বলা হয়নি। ওই বিষয়ে নথিতেও বিশদ ব্যাখ্যা বা তথ্য দেওয়া হয়নি তদন্তকারী অফিসারের তরফে। পুরো বিষয়টিই ‘তদন্তসাপেক্ষ’ বলে জানাচ্ছেন এক ইডি আধিকারিক। ওই ইডি আধিকারিকেরই দাবি, সুজয়ের সঙ্গে হুগলির ধৃত যুব তৃণমূল নেতা (বর্তমানে বহিষ্কৃত) কুন্তল ঘোষের ‘ঘনিষ্ঠতার’ কথা তাঁরা জানতে পারেন সিবিআইয়ের হাতে ধৃত তাপস মণ্ডলকে জেরা করে। তাপস দাবি করেন, প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের থেকে বেআইনি ভাবে নেওয়া টাকা তিনি কুন্তলকে দিয়েছিলেন সুজয় ওরফে ‘কাকু’ ওরফে ‘সন্তুকাকা’কে দেওয়ার জন্য। এমনটাই দাবি করা হচ্ছে ইডি সূত্রে। যদিও ইডি সূত্রে বলা হচ্ছে, তাপসের কথার সত্যতা ‘প্রমাণসাপেক্ষ’।
এর আগে ইডির তরফ থেকে দাবি করা হয়, ২০১৪ সালের একাধিক টেট পরীক্ষার্থীর তথ্য মানিককে পাঠিয়েছিলেন ‘কাকু’। মানিক এবং সুজয়ের হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাট থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয় বলে দাবি ইডির। তাদের আরও দাবি, একাধিক চাকরিপ্রার্থীর রেজাল্ট এবং অ্যাডমিড কার্ড সুজয় তাঁর ৯***৪২ নম্বর থেকে মানিককে হোয়াট্সঅ্যাপ করেছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে এই কথোপকথনের ‘প্রমাণ’ ইডির হাতে আছে বলে একটি সূত্রের দাবি। কিন্তু তদন্তকারীরা এ বিষয়ে সুজয়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেন। উল্টে সুজয় দাবি করেন, ২০২১ সালের আগে মানিককে তিনি চিনতেনই না! এবং কোনও প্রার্থীর হয়ে তিনি সুপারিশও করেননি। যদিও গ্রেফতারির পর ইডি হেফাজতে থাকাকালীন জেরায় মানিকের সঙ্গে তাঁর আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল বলে সুজয় স্বীকার করে নেন বলেই দাবি এক পদস্থ ইডি আধিকারিকের।গত ২০ মে সুজয়ের বাড়ি তল্লাশি করেন ইডি আধিকারিকেরা। পরে ৩০ মে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করা হয় তাঁকে। ওই দিনই প্রথম বার ইডির মুখোমুখি হন সুজয়। দীর্ঘ ক্ষণ জেরার পর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। সুজয়ের গ্রেফতারির পরেই দিল্লিতে পাঠানো নথিতে অভিষেকের নাম যোগ করা হয়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নাম থাকা ১৭ জুনের সেই নথি দিল্লির পিএমএলএ মামলার ‘অ্যাডজুডিকেটিং অথিরিটি’র কাছে পাঠানো হয়। জুনের ২৬ তারিখ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার সরকারি ভাবে নথির প্রাপ্তিস্বীকারও করেন।
সুজয়ের গ্রেফতারির পর তাঁর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত একাধিক সংস্থা এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পায় ইডি। এ ছাড়াও ইডির নজরে রয়েছে এক বা একাধিক নির্মাণ সংস্থা। ইডির দাবি, নানা সংস্থা তৈরি করে বেশি দামে শেয়ার বা সম্পত্তি কেনাবেচার দুর্নীতিচক্র চলত। তার তথ্যপ্রমাণও তাদের হাতে এসেছে। এই চক্রের ‘অন্যতম মাথা’ সুজয় বলেই মনে করছেন ইডি কর্তারা।সুজয় সংক্রান্ত নথিতে অভিষেকের নাম উল্লেখ করা হলেও ইডির এক শীর্ষকর্তা জানাচ্ছেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁদের কাছে অভিষেকের নাম উঠে আসে গত বছর তাপসকে জেরার সময়। ১৯ নভেম্বর তাপস তাঁর লিখিত বয়ানে অভিষেকের নাম উল্লেখ করেছিলেন। সেই বয়ানের সূত্র ধরেই দিল্লিতে পাঠানো ইডির নথিতে অভিষেকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ৩ নভেম্বর তাপস তাঁর লিখিত বয়ানে জানান, ২০১৬ সালে কুন্তলের আরবানার ফ্ল্যাটে হুগলির আর এক যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। আলাপ করান কুন্তল। তাপস শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু বিষয় শান্তনুকে জানালে শান্তনু বিষয়টি যুব তৃণমূলের তৎকালীন সভাপতি অভিষেকের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। যদিও তাপসের কথার সত্যতা ‘প্রমাণসাপেক্ষ’ বলে জানান এক ইডি আধিকারিক।গত ২০ মে নিজাম প্যালেসে সাড়ে ন’ঘণ্টা ধরে অভিষেককে জেরা করে সিবিআই। পরে ইডিও অভিষেককে তলব করে। যদিও সে সবই ছিল হাইকোর্টের নির্দেশে কুন্তল ঘোষের চিঠির তদন্ত সূত্র ধরে। এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের কোনও নথিতে সরাসরি অভিষেকের নাম আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy