ধর্ম নিয়ে রাজনীতি কারা করে, তা নিয়ে আকছার চাপান-উতোর চলে রাজ্যের শাসক এবং প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে। দিনকয়েক আগে বাঁকুড়ার পোয়াবাগানে দেওয়ালে লেখা হয়, ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই, ২০২৬ বিজেপি সরকার চাই’। একই পোস্টার গত রবিবার দেখা গিয়েছিল হুগলির চুঁচুড়ায়। এ বার বাঁকুড়া, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ এবং পশ্চিম বর্ধমানের একাধিক জায়গায় পাল্টা ব্যানার দিল তৃণমূলের সমাজমাধ্যমের শাখা ও আইটি সেল। বাঁকুড়ার পোয়াবাগান ও মাচানতলায় তেমনই কিছু ব্যানারে বার্তা ছিল, ‘হিন্দু হিন্দু ভাই, কিন্তু বাঙালি পূর্ণমন্ত্রী নাই’।
আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে হিন্দু ভোটদাতাদের একজোট করতে কিছু দিন ধরে রাজ্য জুড়ে প্রচার চলছে। হুগলির চুঁচুড়ায় যে ব্যানার দেখা গিয়েছিল, তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি ও বিজেপির দলীয় প্রতীক ছিল। ওই ব্যানার দলের তরফে টাঙানোর কথা না মানলেও, তা সমর্থন করেন বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায়। সে ব্যানারের প্রতিবাদে সোমবার স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নেতৃত্বে ‘সর্ব ধর্ম সমন্বয় যাত্রা’ হয়। সে মিছিলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পা মেলান শহরের বিভিন্ন ধর্মগুরু। স্লোগান ওঠে, ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, ২০২৬-এ দিদিকে (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) চাই’। ধর্মগুরুদের দাবি, তাঁরা তৃণমূল করেন না। সর্ব-ধর্ম সমন্বয়ের মিছিল শুনে গিয়েছিলেন। অসিতের বক্তব্য, ‘‘সব ধর্মের মানুষেরই দিদিকে প্রয়োজন।’’
তবে তা থেকে এক ধাপ এগিয়ে মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরের বিদ্রোহী মোড় থেকে মোহনবাটী ও মালদহ শহরের এলআইসি মোড়, পশ্চিম বর্ধমানের একাধিক জায়গায় পাল্টা ব্যানার-ফেস্টুন দিয়েছে তৃণমূল। তার কোনওটিতে লেখা ‘হিন্দু যদি ভাই ভাই, গ্যাসে কেন ছাড় নাই?’, কোনওটায় ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই, তবু আধার লিঙ্কে ফাইন খাই’। একই ধরনের বিভিন্ন স্লোগান পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সমাজমাধ্যমের ‘গ্রুপ’-এও ঘুরছে। শাসক শিবির সূত্রের খবর, তৃণমূলের আইটি শাখা এই পাল্টা প্রচারের রূপরেখা তৈরি করেছে এবং ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি সমাজমাধ্যমেও এই প্রচার শুরু হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘হিন্দু ভোট-ব্যাঙ্ক ভাঙার জন্য তৃণমূল এ সব করছে। তবে এতে খুব একটা লাভ হবে না।’’ বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বিজেপি কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে রেখে বাঙালিকে ভাতে মারার কৌশল নিয়েছে। তাই বাংলায় যাঁরা বাস করেন, তাঁরা কেউ বিজেপিকে সমর্থন করেন না।’’
বিজেপির হিন্দু-আবেগ উস্কে দেওয়ার পাল্টা হিসাবেই তৃণমূল বাঙালি-আবেগ কাজে লাগাতে চাইছে বলে অনুমান রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)