Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC

আর আলোচনা নয়, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়ালই ভাল মনে করছেন নেত্রী মমতা

বৈশালী ডালমিয়া, পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এবং প্রবীর ঘোষালের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে তৃণমূল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৪৯
Share: Save:

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছিল। তাঁর কাঁথির বাড়িতেও গিয়েছিলেন তৃণমূলের ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোর। অন্তত দু’দফা আলোচনা হয়েছিল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। কিন্তু সে সব আর নয়। দলের অন্দরে তথাকথিত ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘বিক্ষুব্ধ’-দের আর কোনও রেয়াত করা নয়। বরং দলীয় শৃঙ্খলারক্ষায় যে এবার তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে তা স্পষ্ট। ‘তথাকথিত’। কারণ, এই কাঠিন্যের ক্ষেত্রে একটি বিষয় নজরে রাখছেন দলীয় নেতৃত্ব— বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ। তাঁরা মনে করছেন, যে নেতারা বিজেপি-তে যাবেন বলে মনস্থির করেই ফেলেছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা বৃথা। বরং যাঁরা এখনও ‘দোদুল্যমান’ বা অন্য কোনও কারণে ক্ষুণ্ণ, তাঁদের ক্ষেত্রে একটা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

প্রথমে হাওড়ায় বৈশালী ডালমিয়া। তার পর নদিয়ায় পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এবং মঙ্গলবার হুগলিতে বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল — কালক্ষেপ না করে এই তিনজনের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে তৃণমূল। বৈশালীকে সরাসরি বহিষ্কার করা হয়েছে। পার্থকে দলীয় পদ থেকে সরানো হয়েছে। প্রবীরকে করা হয়েছে শোকজ। প্রথম এবং তৃতীয়জন দলের অন্দরে ‘অসুখ’-এর কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। আর পার্থকে সরানো হয়েছে বিজেপি-যোগের অভিযোগে। তবে একইসঙ্গে এ-ও ঠিক যে, বৈশালী এবং প্রবীর বিজেপি-র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন বলে সন্দেহ করছে তৃণমূল ভবন। কারণ, প্রকাশ্যে দল সম্পর্কে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করলেও অভিনেত্রী-সাংসদ শতাব্দী রায় এবং প্রাক্তন ফুটবলার-সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার রাস্তাই নেওয়া হয়েছে। তাতে কাজও হয়েছে।

সোমবারই হুগলির পুরশুড়ার জনসভা থেকে ‘বিদ্রোহী’-দের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘যাঁরা দল ছেড়ে যেতে চান, তাঁরা তাড়াতাড়ি চলে যান। নইলে ট্রেন ছেড়ে দেবে।’’ ঘটনাচক্রে, সোমবারই নদিয়া জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি পার্থকে পদ থেকে সরিয়ে দেন জেলা সভানেত্রী মহুয়া মৈত্র। জানা যায়, পার্থকে শীঘ্রই সরানো হবে রানাঘাট পুরসভার প্রশাসকের পদ থেকেও। প্রকাশ্যে দলের বিরোধিতা না করলেও তলায় তলায় বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জন্য অনুগামীদের নিয়ে তৈরি হচ্ছিলেন তিনি। সেই খবর পাওয়ার পর আর দেরি করেনি দল। মঙ্গলবার উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র-সহ কোর কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করার অব্যবহিত পরেই তাঁকে শোকজের চিঠি পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর।

বিজেপি-তে যোগ দিতে চেয়ে বিদ্রোহ করেছিলেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে পারেননি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎও এড়িয়ে যাচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। এমনকি, তৃণমূল ভবনে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও সফল হননি জিতেন্দ্র। কোনও রাজ্য স্তরের নেতাও তাঁকে ডেকে কথা বলেননি। রাজীবের মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফার দিন আবার ‘দলবিরোধী’ মন্তব্য করেন বালির বিধায়ক বৈশালী। দ্রুত তাঁকে বহিষ্কার করে তৃণমূল।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ‘বিদ্রোহী’ নেতাদের বাগে আনতে গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তৃণমূল নেতৃত্ব খানিকটা চেষ্টাচরিত্র করার পক্ষে ছিলেন। নতুন বছরের গোড়াতেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া বিধায়কদের কড়া চিঠি দিয়ে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করার কথা বলেছিলেন পরিষদীয় মন্ত্রী তথা দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তখন থেকেই তৃণমূল নেতৃত্ব ‘সন্দেহভাজন’ নেতানেত্রীদের ‘শিক্ষা’ দিতে উদ্যোগী হয়েছেন বলে খবর। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘যাঁরা দলের সুসময়ে সুখভোগ করেছেন, তাঁরাই এখন বিদ্রোহী হয়ে বিজেপি-তে যাচ্ছেন। একটা সময় পর্যন্ত অবশ্যই দল তাঁদের ধরে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু যেভাবে একের পর এক অযথা প্রকাশ্যে মুখ খুলে দলকে বিপদে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে দল কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো। আমাদের নেত্রীও তা বুঝেছেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy