প্রতীকী ছবি।
বিক্ষুব্ধ নির্দল কাঁটা সঙ্গে নিয়েই আজ রবিবাসরীয় ভোটপর্বে নামছে তৃণমূল। কাঁথি থেকে কোচবিহার, সর্বত্রই এক ছবি। বহিষ্কারের পরেও যে তাঁদের প্রচার এবং উৎসাহ কমেনি, সেটাই বড় মাথাব্যথা— মানছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। কাউকে হয়তো তাঁরা বুঝিয়ে নিরস্ত করতে পেরেছেন। কিন্তু বেশিরভাগই এখনও ভোটযুদ্ধে রয়ে গিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য এখন পর্যন্ত কঠোর মনোভাবই বজায় রেখেছেন এই ক্ষেত্রে। তাঁদের অনেকেরই দাবি, নির্দলরা খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবেন না।
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পুরসভা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় বলে পরিচিত। ২১টি ওয়ার্ডের এই পুরসভায় বিক্ষুব্ধ নির্দল আছেন ৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৩ নম্বরে ওয়ার্ড তৃণমূল সম্পাদকের আত্মীয়া ফরজানা ইয়াসমিনও আছেন। শোনা যাচ্ছে, এই নির্দলদের অনেকেই তলে তলে বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া চালাচ্ছেন। শুভেন্দুর মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ— ‘‘মানুষ ভোট দিতে পারলে বহু জায়গাতেই তৃণমূল হেরে যাবে। সংখ্যালঘু ওয়ার্ডগুলি থেকে নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেন।’’ একই ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামেও একাধিক বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলরের স্ত্রী আছেন। আছেন প্রয়াত কাউন্সিলরের ছেলেও। ঝাড়গ্রামের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিক্ষুব্ধ হিসাবে লড়ছেন দু’দফার তৃণমূল কাউন্সিলর নবু গোয়ালা। তাঁকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বহিষ্কার করার পরেও নবু ময়দান ছাড়েননি।
উত্তর ২৪ পরগনাতে ৬১ জন বিক্ষুব্ধকে বহিষ্কার করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বলা হয়েছিল, ভোটে জিতলেও তাঁদের দলে ফেরানো হবে না। এর পরেও বিক্ষুব্ধদের বেশিরভাগই ভোট ময়দানে রয়ে গিয়েছেন। উল্টে বনগাঁর নির্দল প্রার্থী তথা প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর কবিতা বালা বলেন, ‘‘জয়ী হয়ে সেই জয় দিদিকে (মুখ্যমন্ত্রী) উপহার দেব।’’ হুগলিতেও ১৪ জন বিক্ষুব্ধকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। তাঁরাও নির্দল হিসাবে লড়ছেন। এঁদের মধ্যে শ্রীরামপুরের বিদায়ী কাউন্সিলর ও তৃণমূল প্রার্থী রেখারানি সা’য়ের স্বামী রাজেস সা-এর মতো প্রার্থীও আছেন, যাঁর বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ তুলে কয়েকটি বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ এবং ‘অতি স্পর্শকাতর’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।
অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূমে এর মধ্যেই সিউড়ি ও সাঁইথিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তাতেও বিক্ষুব্ধ নির্দল কাঁটা রয়েই গিয়েছে। দুবরাজপুরে ১, ৬ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তিন প্রাক্তন কাউন্সিলর বহিষ্কারের পরেও ময়দান ছাড়েননি। ফলে দুবরাজপুরে লড়াই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। একই ভাবে নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুরসভার ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে নির্দল হিসাবে দাঁড়ানো তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের উপরে। কেউ কেউ আবার কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন। বীরনগরে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সোনামণি হাঁসদা শাসকদলের ভোটে থাবা বসাতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ভরত ঝাওর ও তাঁর ভাই সন্তোষ আবার জোট বেঁধেছেন আরও তিন নির্দলের সঙ্গে। ভরত এর মধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি জিতবেন এবং আগামী পুরবোর্ডে নেতৃত্বও দেবেন। নির্দল কাঁটা রয়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা, কাটোয়াতেও। রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়াতেও। বাঁকুড়ায় প্রাক্তন উপপ্রধান দিলীপ আগরওয়াল নির্দল হিসাবে লড়ছেন। পুরুলিয়া জেলার অনেকেই আবার দাবি করেছেন, জিতলেও পুরনো দলে ফিরবেন না। এক যদি না সম্মান দিয়ে ডাকা হয়।
মালদহের ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থী দেবাশিস ঠাকুর আবার বলেন, ‘‘দলে ছিলাম, দলেই আছি।’’ বালুরঘাট বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের খাসতালুক। সেখানে দু’টি ওয়ার্ডে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতারা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মন্ত্রী শশী পাঁজা তাঁদের বুঝিয়ে দলের পাশে নিয়ে আসেন। প্রচারে তাঁরা তৃণমূল প্রার্থীদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বোঝানো সম্ভব হয়নি। কোচবিহারেই প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান লড়ছেন নির্দল হিসাবে। তবে তাঁরা ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, জিতলে পুরনো দলে ফিরবেন।
সে সবেরই ফয়সালা হবে রবিবার সকাল থেকে, ভোটবাক্সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy