Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এক যাত্রায় নানা পথ, প্রশ্ন শাসক দলের অন্দরেও

একই সরকারের অন্য এক মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য মানহানির আইনি পথেই গিয়েছেন।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:১০
Share: Save:

সরকারি ভাবে ‘রাজরোষ’-এর অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু কংগ্রেসের মুখপাত্র ও প্রাক্তন কাউন্সিলর সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামাজিক মাধ্যমের লেখালেখির জেরে তাঁকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানো আদৌ সমীচীন কাজ হল কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে শাসক শিবিরের অন্দরেও। গোটা ঘটনায় বেরিয়ে আসছে শাসকের তরফে বিভ্রান্তিও।

দু’দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পরে রবিবার শর্তাধীনে জামিন পেয়ে সন্ময়বাবু অভিযোগ করেছেন, ‘‘পিসি-ভাইপোর জঙ্গলের রাজত্বের বিরুদ্ধে বলেছি বলে আমাকে পুলিশ দিয়ে অত্যাচার করা হল। হিটলার-মুসোলিনির আমলেও এমন হত না!’’ এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন বিরোধী দলের নেতৃত্ব ও বিশিষ্ট জনেদের একাংশও। বিজেপির অসহিষ্ণুতার রাজনীতির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ গড়ে ওঠার সময়ে সন্ময়-কাণ্ড তাঁদের অস্বস্তিতে ফেলে দিল বলেই মনে করছেন এ রাজ্যের শাসক শিবিরের একাংশ।

সন্ময়বাবু প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যদি কিছু ভুল করে থাকি, মানহানির মামলা হতে পারে। কিন্তু পুলিশ দিয়ে অত্যাচার কেন? রাজ্য সরকারই এ সব করাচ্ছে।’’ একই প্রশ্ন কংগ্রেস এবং সিপিএমের নেতাদেরও। সন্ময়বাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘পিসি-ভাইপো সব ব্যাপারে থাকেন না। এ রকম ছোট ব্যাপারে পিসি-ভাইপো কেন, দলও থাকে না। গণতন্ত্রে সকলেরই নিজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু মিথ্যা আর কুৎসা করা তো সেই স্বাধীনতা নয়। যাঁদের সম্পর্কে এ সব বলছেন, তাঁরা তো আঘাত পাচ্ছেন।’’ তাঁরা চাইলে তো ‘মিথ্যা’ প্রচারের জন্য মানহানির মামলা করতে পারতেন। তিনি এখনই আইনি পথে যাওয়ার পক্ষপাতী নন ইঙ্গিত দিয়ে পার্থবাবু বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেউ বিরোধী দল করছেন বলে তাঁকে ‘হেনস্থা’ করাও উচিত নয়। তবে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘যাঁদের সম্মানহানি হয়েছে, তাঁদের সমর্থকেরা নানা পদক্ষেপ করে থাকতে পারেন।’’

একই সরকারের অন্য এক মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য মানহানির আইনি পথেই গিয়েছেন। শুভেন্দুবাবুর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন সন্ময়বাবুকে। জবাবি চিঠিতে সন্ময়বাবু গত ২ অক্টোবর দুঃখপ্রকাশ করে জানান, মন্ত্রীর মানহানির কোনও উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না (আইনি নোটিস ও তার জবাবের প্রতিলিপি আনন্দবাজারের কাছে আছে)। বিতর্কিত একটি ভিডিয়ো ক্লিপ তুলে নেওয়ার কথাও জানানো হয় জবাবি চিঠিতে। এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আইনজীবী চিঠি দিয়েছিলেন, উনি উত্তর দিয়েছেন। মিটে গিয়েছে। এই নিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।’’

সরকারি মুখ্য সচেতক ও পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ আবার সন্ময়বাবুকে ‘স্বঘোষিত সাংবাদিক’ বলে কটাক্ষ করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘উনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন বলে স্থানীয় মানুষ খেপে গিয়েছিলেন। আবার যদি ওই রকম আক্রমণ করেন, কী ওষুধ দেওয়া যায়, দেখা হবে!’’ নির্মলবাবুর এমন কথার উপরে মন্তব্য করতে চাননি পার্থবাবু। পাল্টা বিবৃতি, আইনি নোটিস এবং ‘ওষুধ’— ‘কুৎসা’ মোকাবিলায় নানা পথে অস্বস্তিই বাড়ছে বলে স্বীকার করে শাসক দলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘অম্বিকেশ মহাপাত্র, শিলাদিত্য চৌধুরীদের প্রসঙ্গ ফিরিয়ে আনার সুযোগ করে দেওয়া হল!’’

এই পরিস্থিতিতে সন্ময়-কাণ্ড উল্লেখ করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার উপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’’ প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ধেন্দু সেন, চন্দন সেন, কৌশিক সেন, জগন্নাথ বসু, ঊর্মিমালা বসু, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্টদের সমর্থনে কাল, মঙ্গলবার রাণুছায়া মঞ্চে প্রতিবাদ-সভার ডাক দিয়েছে ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Sanmoy Bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy