ফাইল চিত্র।
দরে যখন আগুন লেগেছিল, সেই সময়েই (২৭ নভেম্বর) কেন্দ্রকে মোট ৮০০ টন পেঁয়াজের বরাত দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারকে তারা জানায়, ডিসেম্বরের চার সপ্তাহে ২০০ টন করে ওই আনাজ প্রয়োজন। কিন্তু ডিসেম্বরে কেন্দ্রের আমদানি করা কোনও পেঁয়াজই পায়নি পশ্চিমবঙ্গ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কিছু পেঁয়াজ এসেছিল ঠিকই। কিন্তু বাকিটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না-আসায় অবশেষে কেন্দ্রকে দেওয়া পেঁয়াজের বরাত বাতিলই করে দিল তৃণমূল সরকার।
সরকারি সূত্রের খবর, অগ্নিমূল্যের মোকাবিলা করতে কেন্দ্রের কাছে মোট ৮০০ টন পেঁয়াজের বরাত দিয়েছিল রাজ্য। চাহিদা মেটাতে বিদেশি পেঁয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মোট বরাতের মধ্যে এসেছিল ১২২ টন, তা-ও নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। তত দিনে নাশিকে পেঁয়াজের পাইকারি দাম কমে গিয়েছে। সেই জন্যই বাকি পেঁয়াজের বরাত বাতিল করতে হয়েছে।
অক্টোবরে পেঁয়াজের সঙ্কট তুঙ্গে উঠেছিল। কারণ, অসময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগে পেঁয়াজ উৎপাদক রাজ্যগুলির উৎপাদন ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ রাজ্যের উৎপাদনেও তার প্রভাব পড়েছিল। পরিণামে প্রতি কিলোগ্রাম পেঁয়াজের দর এক সময় ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কোথাও কোথাও দেড়শো টাকাতেও বিকোতে থাকে ওই আনাজ। পরিস্থিতি সামাল দিতে তখনই ২০০ টন পেঁয়াজের বরাত দিয়েছিল রাজ্য। আসে মাত্র ২২ টন। তার মধ্যেও অনেক পেঁয়াজের মান খুব খারাপ ছিল। পরে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। রাজ্যকে আশ্বাস দেওয়া হয়, ডিসেম্বর থেকেই সেই পেঁয়াজ পাওয়া যাবে।
প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘৮০০ টনের বরাত দেওয়ার পরে, ডিসেম্বরে কোনও পেঁয়াজ না-পেয়েও রাজ্য তখন পেঁয়াজের বরাত বাতিল করেনি। আশা ছিল, শীঘ্রই তা পাওয়া যাবে।’’ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ৬১ টন পেঁয়াজ আসে রাজ্যে। তত দিনে নাশিকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। ওই দফতর সূত্রের দাবি, সেই সময় নাশিকের নিলামে অফিসার পাঠিয়ে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিকোলেও নাশিকে সেই দাম ছিল ৫৬ টাকা।
কৃষিকর্তারা জানান, ৭ জানুয়ারি কেন্দ্রের সঙ্গে ভিডিয়ো-সম্মেলনে ক্যাবিনেট সচিবকে জানানো হয়, ৫৬ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ পাচ্ছে রাজ্য। তাই বরাত দেওয়া বাকি পেঁয়াজ পাঠানোর প্রয়োজন আর নেই। এই মর্মে কেন্দ্রকে লিখিত ভাবেও বরাত বাতিলের কথা জানিয়ে দেয় রাজ্য। কিন্তু নাফেড রাজ্যকে জানায়, আরও ৬১ টন পেঁয়াজ পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয়েছে। তা ফেরত নেওয়া সম্ভব নয়। এই ভাবে আমদানির ১২২ টন পেঁয়াজ কেনে রাজ্য সরকার। বাকি পেঁয়াজের বরাত বাতিল করা হয়।
এক কৃষিকর্তার কথায়, ‘‘সঙ্কট চরমে ওঠার পরে আমদানির সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। আগে সেটা করলে এই সমস্যা হত না। অন্যান্য রাজ্যও সম্ভবত এই জন্যই আমদানির পেঁয়াজ আর নিচ্ছে না।’’ রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ না-দিলে আমাদের কী করার আছে! একে তো পরিকল্পনাহীনতা বলে। রাজ্য এখন প্রযুক্তির সহযোগিতায় এবং পরিকল্পিত ভাবে পেঁয়াজ মজুত করার পদ্ধতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে।’’
কৃষি দফতর জানাচ্ছে, নাশিকের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। এ রাজ্যে উৎপাদিত পেঁয়াজও বাজারে চলে আসবে। ধীরে ধীরে পেঁয়াজ-পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy