আলাদা করে অভিষেকের সঙ্গে কথা বলেন মোদী। —নিজস্ব চিত্র।
ভোট মরসুমে উত্তাপ ছিল ছ্যাঁকা লাগার মতো। তৃণমূল আর বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে রাজনৈতিক তিক্ততা যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ যে ভাষায় হচ্ছিল, তার নজির খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বুধবার দেখা গেল ঠিক উল্টো ছবি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এ দিন দেখা করতে গেল তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধিদল। প্রশ্নাতীত সৌজন্যে সেই দলের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলাদা করে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর চোখ কেমন আছে?
লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সংসদীয় প্রতিনিধিদলটি বুধবার দেখা করে মোদীর সঙ্গে। মূলত তিনটি দাবি নিয়ে বুধবার মোদীর মুখোমুখি হয় তৃণমূল— ১. পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে ‘বাংলা’ নামকরণ মেনে নেওয়া, ২. বিলগ্নিকরণ নীতি পুনর্বিবেচনা করা, ৩. অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির কর্পোরেটাইজেশন না করা। বিষয়গুলি নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এ দিন মিনিট পনেরো কথা হয় প্রতিনিধি দলের। তৃণমূলের দাবিগুলোর একটাও কেন্দ্র মানবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার অবকাশ মেলেনি বৈঠকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে রকম সৌজন্যমূলক আবহ তৈরি করেন বৈঠকের শুরুতেই, তাতে তৃণমূল সাংসদদের অনেকেই বেশ চমকে গিয়েছেন।
বৈঠকের জন্য নির্দিষ্ট হলে ঢুকে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই তৃণমূল সাংসদদের তাঁর পাশে বসতে বলেন বলে খবর। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার টেবিলের যে দিকে, সাংসদরা সবাই মিলে তার উল্টো দিকে কেন বসেছেন? প্রশ্ন করেন মোদী। তাঁর পাশের চেয়ারেই বসতে বলেন। পাশে বসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাগ করবেন না— হাসতে হাসতে এ রকমও বলেন মোদী। তৃণমূল সাংসদরাও প্রধানমন্ত্রীর রসিকতাকে হালকা ভাবেই নেন এবং সৌজন্য বিনিময়ের পরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন বসেন মোদীর দু'পাশের দু’টি চেয়ারে। সুদীপের পাশে বসেন সৌগত রায়, তাঁর পাশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
চলছে বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: জয় শ্রীরাম রণহুঙ্কার থামান, থামুক ধর্মের নামে হত্যা, প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি বিদ্বজ্জনদের
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্য সাংসদদের অনেকেরই আলাপ করিয়ে দেন সুদীপ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচয় স্বাভাবিক ভাবেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে করান তিনি। প্রধানমন্ত্রী এবং অভিষেক পরস্পরের সঙ্গে নমস্কার বিনিময় করেন।
কিন্তু এতেই শেষ হয়নি সৌজন্যের আখ্যান। তৃণমূলের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা শেষ হওয়ার পর বেরিয়ে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ান মোদী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন করমর্দনের জন্য। দু’জনে হাত মেলান। তার পরে অভিষেককে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনার চোখ কেমন আছে?’’ অভিষেক জানান যে, চোখ এখন ভালই আছে। তবে দু’বার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে বলেও তিনি জানান।
২০১৬ সালে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর চোখ সে সময়ে সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দীর্ঘ চিকিৎসায় এখন সমস্যা কম। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী যে সে খবর রাখেন, তা তৃণমূল সাংসদদের অনেকেরই জানা ছিল না। লোকসভা নির্বাচন পর্বে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির অন্যতম প্রধান নিশানা হয়ে উঠেছিলেন, বিদেশ থেকে অবৈধ ভাবে সোনা নিয়ে আসার অভিযোগে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকেও ঘিরে ফেলার চেষ্টা শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি, সেই অভিষেকের সঙ্গে এতটা সৌজন্যমূলক ব্যবহার করবেন মোদী, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত।
আরও পড়ুন: রাতে শোভনের বাড়িতে পার্থ, ৪ ঘণ্টার বৈঠক, দলে ফেরাতেই উদ্যোগ?
তবে তৃণমূল সাংসদদের দাবিগুলি মানার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট আশ্বাস দেননি বলেই খবর। বরং অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির কর্পোরেটাইজেশন কেন জরুরি, তৃণমূল সাংসদদের তা বোঝানোর চেষ্টা করেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গে রুগ্ন হয়ে পড়া পাট শিল্পের হাল ফেরানোর জন্যও যে এ বার বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার সময় হয়েছে, সে ইঙ্গিতও মোদী দেন বলে জানা গিয়েছে। পাট ব্যবহার করে যে খুব কম খরচে স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানো সম্ভব, সে কথাও মোদী জানান পশ্চিমবঙ্গের সাংসদদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy