Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

তৃণমূলের ‘সংসারে’ ভিন্ন সুর, সক্রিয় বিরোধীরা

তৃণমূলের ‘সংসার’ থেকেই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পাশে থাকার এই একের পর এক বার্তায় প্রশ্ন উঠছে, সন্তানদের অবস্থানে কি ফিরহাদ, কাকলি, কার্তিকদের ‘প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়’ রয়েছে? 

শাব্বা হাকিম, ফিরহাদ হাকিম ও দেব।

শাব্বা হাকিম, ফিরহাদ হাকিম ও দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০৩:১৫
Share: Save:

তালিকাটা ক্রমশ বেড়েছে।

প্রথমেই সামনে এসেছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের চিকিৎসক-কন্যা শাব্বা হাকিম। তার পর চিকিৎসক-সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের দুই চিকিৎসক-পুত্র বিশ্বনাথ ও বৈদ্যনাথ ঘোষদস্তিদার। আন্দোলনরতদের মিছিলে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিকিৎসক-পুত্র আবেশকেও। চিকিৎসকদের ভূমিকা ও তাঁদের সুরক্ষা কত জরুরি, তা মনে করিয়ে দিয়ে ফেসবুকে সরব হয়েছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ-অভিনেতা দেব এবং মিমি চক্রবর্তী।

তৃণমূলের ‘সংসার’ থেকেই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পাশে থাকার এই একের পর এক বার্তায় প্রশ্ন উঠছে, সন্তানদের অবস্থানে কি ফিরহাদ, কাকলি, কার্তিকদের ‘প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়’ রয়েছে? বিরোধীদের বক্তব্য, রাজনীতির কারণে শাসক দলের নেতানেত্রীরা নিজমুখে যা বলতে পারছেন না, সন্তানদের ফেসবুক তারই প্রকাশ। অন্য দিকে রাজনীতিক মা-বাবারা দাবি করেছেন, পেশাদার চিকিৎসক হিসেবে তাঁদের সন্তানদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।

এনআরএসের ঘটনার পর বুধবার কলকাতার মেয়র ফিরহাদ ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘যাঁরা ডাক্তারবাবুদের পেটান, তাঁরা গণশত্রু। আদালতের কাছে দাবি থাকবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক। যাতে ভবিষ্যতে ডাক্তারবাবুদের গায়ে কেউ হাত দেওয়ার সাহস না পায়।’ এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর চিকিৎসক কন্যা শাব্বা রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে কাঠগড়ায় তুলে ফেসবুকে মন্তব্য করেন। পরের দিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের দ্রুত কাজে যোগ না দিলে হস্টেল খালি করে দেওয়ার ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী শাব্বা ফের ফেসবুকে সতীর্থ চিকিৎসকদের উদ্দেশে লেখেন, ‘কারও কোথাও থাকতে অসুবিধা হলে কেপিসিতে নিশ্চিন্তে এসে আশ্রয় নিতে পারেন।’

ওই দিনই কাকলি ঘোষদস্তিদারের বড় ছেলে বিশ্বনাথ ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি বদলে লেখেন, ‘আই প্রোটেস্ট দ্য অ্যাটাক অন ডক্টর্স’। আর ছোট ছেলে বৈদ্যনাথ লেখেন, ‘তৃণমূল সাংসদের ছেলে এবং দলের সমর্থক হয়েও বলছি, তৃণমূলের কেউ যদি চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে কোনও রকম সমালোচনা করে থাকেন, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ যদিও কিছু পরেই পোস্টটি সরিয়ে নেন তিনি।

তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ছেলেমেয়েদের এ হেন মন্তব্য দেখে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘ওদের দলটা এতই স্বৈরতান্ত্রিক যে কেউ মুখ খুলতে পারেন না। তাই হয়তো অনেকের মতামত ছেলেমেয়েদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে।’’ আর সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো ডাক্তার, বিরোধী কারও কথাই শোনেন না। অন্তত নিজের দলের নেতা মন্ত্রীদের সন্তানদের কথা শুনুন। আর এ সব যদি ওঁদের বাবা-মায়েদেরও মত হয়, তা হলে তো আরও ভাল।’’

বিরোধীদের নিশানায় যাঁরা, তাঁরা অবশ্য সে কথা মানতে নারাজ। কাকলি বলেন, ‘‘এ সবই ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিগত মতামত। তাঁরা দলের সদস্যও নন।’’ ফিরহাদকে বহু চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

এ দিকে, শনিবার ফের তাঁর এক বন্ধুর পোস্ট ‘শেয়ার’ করেছেন শাব্বা। যেখানে লেখা আছে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কি আমাদের (চিকিৎসক) মানবিক অধিকারের কথা জানেন?’’ কর্মবিরতির মধ্যেও পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক রোগীকে কী ভাবে চিকিৎসকেরা সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছেন, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের সেই ভিডিয়ো ফুটেজও শেয়ার করেছেন শাব্বা।

স্বাস্থ্য-সঙ্কটের দ্রুত সমাধান চেয়ে দেব শুক্রবার লিখেছিলেন, ‘‘যাঁরা আমাদের প্রাণ বাঁচান তাঁরা কেন বার বার মার খাবেন।’’ আর মিমি এ দিন এক লম্বা পোস্টে লিখেছেন, তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে উড়ান বাতিল করে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাঁর চিকিৎসক তাঁকে দ্রুত সুস্থ করে তুলেছেন। তাঁর আশা, উদ্ভূত পরিস্থিতির মেঘ দ্রুত কাটবে এবং আলো ফুটবে।

তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার মতে, ‘‘ওঁদের অন্য সামাজিক পরিচিতি আছে, যা রাজনীতির ঊর্ধ্বে। যে কোনও বিষয়ে তাঁদের মতামত রাজনীতিকের মতামত হিসেব ধরে নিলে তা ভুল হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy