(বাঁ দিকে) শিশির অধিকারী এবং সুবল মান্না। —ফাইল চিত্র।
প্রকাশ্য মঞ্চে শিশির অধিকারীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলেন। নিজের ‘গুরুদেব’ বলেও সম্বোধন করেছিলেন তাঁকে। তৃণমূল নেতা তথা কাঁথির পুরপ্রধান সেই সুবল মান্না পড়লেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কোপে! শাসকদল সূত্রে খবর, তাঁকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে। যদিও এ নিয়ে দলের তরফে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলেননি।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সুবলের দাবি, তিনি এখনও দলীয় কোনও নির্দেশ হাতে পাননি। সে রকম কোনও নির্দেশ হাতে এলে তিনি নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবেন বলেও জানিয়েছেন সুবল। তিনি বলেন, ‘‘আমি একটি প্রশাসনিক পদে রয়েছি। কোনও রকম পদক্ষেপ করতে হলে আগে আমাকে লিখিত নির্দেশিকা পড়ে দেখতে হবে। তার পর আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’ সুবলের সংযোজন, “আমি তৃণমূলের এক জন অনুগত সৈনিক। দলের নির্দেশ মেনেই সারা জীবন কাজ করে এসেছি। তাই দলের তরফে যে কোনও নির্দেশ পেলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’ শিশিরকে প্রণাম-বিতর্ক নিয়েও পুরপ্রধান বলেন, “এক জন বর্ষীয়ান নেতাকে সামনে দেখে আমি প্রণাম করেছি। এটা আমার সংস্কৃতি। তবে এর জন্য দলের কর্মীদের কোনও রকম অসম্মান করা হয়ে থাকলে, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে কাঁথি-১ ব্লকের সাবাজপুট এলাকায় একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন শিশির এবং সুবল। মঞ্চে শিশিরের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে সুবল বলেছিলেন, ‘‘প্রথমে পূজ্যপাদ শিশির অধিকারীকে আমার প্রণাম। বাবা-মা জন্ম দিয়েছেন। তবে আজ এই জায়গায় যে পৌঁছেছি, তার জন্য পূজ্যপাদ আমার গুরুদেব শিশির অধিকারী।” শিশির এখনও খাতায়কলমে তৃণমূলের সাংসদ হলেও দলের সঙ্গে তাঁর তিক্ত সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। বরং, সাংসদকে দেখা যায় তাঁর মেজো ছেলে শুভেন্দু অধিকারীর দল বিজেপির মঞ্চে বা কর্মসূচিতে। তাঁর সাংসদ পদ বাতিলের জন্য লোকসভার স্পিকারের কাছে আবেদনও জানিয়েছে তৃণমূল। সেই শিশিরের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে স্বাভাবিক ভাবেই দলে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন সুবল। বৃহস্পতিবারের ঘটনার কথা জানাজানি হয় ২৪ ঘণ্টা পরে, শুক্রবার বিকেলে। এর পরেই সুবলকে শো-কজ় করে তৃণমূল। সাংবাদিক বৈঠক করে জেলা সভাপতি পীযূষ পান্ডা জানান, রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে শো-কজ় করা হয়েছে কাঁথির পুরপ্রধানকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সুবল শো-কজ়ের জবাব দিয়েছিলেন কি না, তা জানা যায়নি। জবাব দিয়ে থাকলেও তাতে কী জানিয়েছিলেন, তা-ও স্পষ্ট নয়। যদিও ওই ঘটনা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ ছিল না সুবলের। তাঁর যুক্তি ছিল, বর্ষীয়ান বলেই শিশিরকে সম্মান জানিয়েছিলেন তিনি। সুবলের কথায়, ‘‘এটা নিয়ে কেউ যদি ভুল বোঝেন, কিছু বলার নেই। সব জায়গায় রাজনীতি খোঁজা ঠিক নয়।’’ কিন্তু সুবলের এই কাজ দল যে ভাল চোখে দেখেনি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের ভারপ্রাপ্ত নেতা তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়। তিনি বলেন, “সামাজিক অনুষ্ঠানে বয়সে প্রবীণ কাউকে প্রণাম করার মধ্যে খারাপ কিছু দেখছি না। তবে শিশির অধিকারীর রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যে হেতু একটা প্রশ্ন আছে, তাই তাঁকে নিয়ে কেউ যদি মনের কথা বেশি করে প্রকাশ করে ফেলেন, সেটা একেবারেই অনুচিত।” সুবলকে কটাক্ষ করে কুণালের মন্তব্য, “তাঁর ‘গুরুদেব’কে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল, কেন উনি দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন!”
এ নিয়ে জেলায় দলের অন্দরে জল্পনার মধ্যেই সুবলকে পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে বলে খবর মিলল তৃণমূলের একটি সূত্রে। যদিও দলের অন্য একটি সূত্রের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই দলের ভিতরে কোণঠাসা হয়ে ছিলেন সুবল। তাঁকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও জল্পনা ছিল দলের অন্দরে। শিশিরকে তিনি ‘গুরুদেব’ বলায় দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, তবে কি পরিস্থিতি আঁচ করে বিজেপিতে যাওয়ার রাস্তা খুলে রাখলেন সুবল? এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘যদি এটাই পরিকল্পনা হয়ে থাকে, তা হলে তা কাজে দিয়েছে!’’
দলের একটি সূত্রের দাবি, পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের অনেকেই তলে তলে শুভেন্দুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন বলে শোনা গিয়েছে। সেই তালিকায় সুবলের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েক জন রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই বিষয়টি নজরে রেখে শীঘ্রই জেলায় রদবদলের পথে হাঁটতে পারে শাসকদল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy