ঝাড়গ্রামে বৈঠকে ছত্রধর মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
ছোট আঙারিয়ার মতো ‘নেতাই দিবস’ পালনেও রেষারেষির আবহ তৈরি হল তৃণমূল এবং বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, এই দুই শিবিরের মধ্যে। ৭ জানুয়ারি দিনটি পালনের উদ্যোগ নিচ্ছে তৃণমূল। আবার একই দিনে, একই উদ্দেশ্যে নেতাইতে পা রাখতে চলেছেন শুভেন্দু। লালগড়ের ওই গ্রামে দুই শিবিরের আসন্ন কর্মসূচি ঘিরে চড়ছে উত্তেজনার পারদ। নেতাই কাণ্ডকে স্মরণ করে কর্মসূচি রয়েছে তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ গ্রামের বাসিন্দাদের তৈরি ‘স্মৃতিরক্ষা কমিটি’-রও।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে গুলিচালনায় নিহত হন ৯ জন। তার পর থেকে ওই দিনটি ‘নেতাই দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছে তৃণমূল। সেই কর্মসূচিকে সামনে রেখে এ বারও জোড়াফুল শিবিরে সাজ সাজ রব। ওই কর্মসূচি পালনে প্রায় পূর্ণ শক্তি নিয়েই ঝাঁপাচ্ছে জোড়াফুল শিবির। ‘নেতাই দিবস’ পালনের পর সেখানে সভা রয়েছে। তাতে উপস্থিত থাকার কথা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র-সহ তৃণমূলের রাজ্য এবং জেলা স্তরের এক ঝাঁক নেতা নেত্রীর। ওই দিন নিটোল কর্মসূচি পালনে ইতিমধ্যেই লালগড় গিয়ে এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তুতি ঝালিয়ে এসেছেন ছত্রধর মাহাতো-ও।
কিন্তু ওই একই দিনে, একই মাটিতে দাঁড়িয়ে ‘নেতাই দিবস’ পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দ্বিতীয় পক্ষ, অর্থাৎ শুভেন্দু শিবিরও। তৃণমূলে থাকাকালীন ওই দিনটি পালন করতে একাধিক বার নেতাই গিয়েছেন শুভেন্দু। এ বার তিনি বিজেপিতে। কিন্তু দল বদলালেও কর্মসূচির বদল হচ্ছে না তাঁর। সম্প্রতি গোপীবল্লভপুরের সভা থেকে তিনি ঘোষণা করেছেন, ৭ জানুয়ারি তাঁর নেতাই যাওয়ার কথা। আর তা নিয়েই তৃণমূল এবং শুভেন্দু এই দুই শিবিরের মধ্যে তৈরি হয়েছে দ্বন্দ্বের আবহ। যা দেখা গিয়েছিল গত ৪ জানুয়ারি, ‘ছোট আঙারিয়া দিবস’ পালনের দিন। শুভেন্দুর এই কর্মসূচি থেকে অবশ্য দৃশ্যত ‘দূরত্ব’ বজায় রাখছে তাঁর দল বিজেপি। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেই দিলেন, ‘‘ওই দিন নেতাই গ্রামে দলীয় কোনও কর্মসূচি নেই। শুভেন্দু যাবেন তাঁর ব্যক্তিগত কর্মসূচিতে যোগ দিতে।’’ দলের বক্তব্যের সঙ্গে ফারাক নেই শুভেন্দুরও। তিনি নিজেও বলছেন, ‘অরাজনৈতিক মঞ্চ’ থেকেই পালিত হবে ‘নেতাই দিবস’।
আরও পড়ুন: মিছিলে না যেতে পারায় ক্ষমাপ্রার্থী বৈশাখী, শোভনও একা ফেলে যাননি
আরও পড়ুন: দলীয় বৈঠক প্রতি ৭ দিন অন্তর, উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বার্তা অভিষেকের
তৃণমূলের একটি বড় অংশের ধারণা, ওই দিন শুভেন্দু নেতাইয়ের মাটিতে উপস্থিত থেকে ‘অরাজনৈতিক মঞ্চ’-এর নামে ভোটের মুখে রাজনৈতিক ‘ফয়দা’ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। তাই শুরু থেকেই শুভেন্দুর ‘অরাজনৈতিক’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র দেবাশিস চৌধুরী যেমন বললেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী এক জন রাজনৈতিক ব্যক্তি। কাঁধে বিজেপির পতাকা নিয়ে ঘুরছেন। আর মুখে বলছেন অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সভা করবেন। এটা কী ধরনের কথা?’’
মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু শিবিরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ছত্রধরও বলেন, ‘‘নেতাই দিবসে ওঁকে দেখিয়ে দিতে হবে, জঙ্গলমহলের মুক্তিসূর্য জঙ্গলমহলের মানুষ। বাইরের কেউ এসে দাবি করবেন যে তিনি জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছেন তা আমরা মেনে নেব না।’’
তৃণমূল সূত্রে অবশ্য খবর, ওই দিন গ্রামের ভিতরে ‘নেতাই দিবস’ পালন করা হবে না। নেতাই গ্রামে ঢোকার মুখে হবে স্মরণ সভা। ওই দিনই ‘আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ’ ডাক দিয়েছে ‘হড়কা জ্যাম’ কর্মসূচির। সেই বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে গুরুত্ব দিয়ে। লক্ষ্য ‘নেতাই দিবস’কে সামনে রেখে শুভেন্দুকে ‘জবাব’ দেওয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy