রবিবার বাঁকুড়ার জঙ্গলে ধরা পড়ে বাঘিনি জ়িনত। এখন তাকে রাখা হয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতালে। —ফাইল চিত্র।
দুপুরে তিন রকম মাংস খেতে দেওয়া হয়েছিল বাঘিনি জ়িনতকে। মহিষের মাংস, ছাগলের মাংস এবং মুরগির মাংস। কিন্তু তিন ধরনের মাংসের কোনওটাই ছুঁয়ে দেখেনি সে। দুপুরে কোনও খাবারই খায়নি জ়িনত। তবে আলিপুর পশু হাসপাতাল সূত্রে খবর, সুস্থই আছে বাঘিনি।
বাঁকুড়ার জঙ্গলে ধরা পড়ার পর জ়িনতকে রবিবার রাতে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। রাখা হয় আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতালে। সোমবার দিনভর তাকে ওআরএস দেওয়া হয়। এর পর মঙ্গলবার দুপুরে তিন রকম মাংস খেতে দেওয়া হলেও, কিছুই খেতে চায়নি সে। বাঘিনি যে দুপুরে কিছুই খেল না, তাতে তার শারীরিক অবস্থার উপর কি কোনও বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে? এ ধরনের কোনও সম্ভাবনার অবকাশ নেই বলেই জানাচ্ছেন আলিপুর পশু হাসপাতালের এক আধিকারিক। তাঁর কথায়, “বাঘ জঙ্গলে রোজ খাবার খায় না। এক দিন খাওয়ার পর সে সাত দিন না খেয়েও থাকতে পারে। এতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই।”
জ়িনত বনে শিকার করে খেতে অভ্যস্ত। সেই কারণেই এ দিন তিনটি আলাদা ধরনের মাংস দেওয়া হয়েছিল তাকে। হাসপাতালের এক কর্তা এ বিষয়ে জানান, বনে শিকার করতে অভ্যস্ত বাঘের মুখে কী রুচবে, তা বোঝা মুশকিল। সেই কারণে ছাগল এবং মহিষের মাংসও দেওয়া হয়েছিল জ়িনতকে। মঙ্গলবার দুপুরে কিছু মুখে না দিলেও বাঁকুড়া থেকে আসার পর সোমবার প্রচুর পরিমাণ ওআরএস মিশ্রিত জল খেয়েছে জ়িনত। ফলে মঙ্গলবার দুপুরে তার এই আচরণে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই বলেই মনে করছেন আলিপুর পশু হাসপাতালের আধিকারিকেরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, জ়িনত একেবারে চনমনে রয়েছে। মাঝেমধ্যে ডাকাডাকিও করছে। ফলে এ দিন না খাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
জ়িনতের একটি ভিডিয়ো সোমবার রাতে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও ওই পোস্টে জানান, বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভাল আছে বাঘিনি। বন দফতর তার খেয়াল রাখছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
গত ন’দিন ধরে বনকর্মীদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছে জ়িনত। দাপিয়ে বেড়িয়েছে বাংলার তিন জেলা। তাকে ধরতে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হয় বনকর্মীদের। অবশেষে রবিবার দুপুর ৩টে ৫৮ মিনিট নাগাদ বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহির জঙ্গলে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয় ওড়িশার বাঘিনি। তার পর তাকে খাঁচাবন্দি করেন বনকর্মীরা।
মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র সংরক্ষণে জন্ম জ়িনতের। তার পর সেখান থেকেই তাকে পাঠানো হয় ওড়িশার সিমলিপালে। সেখানকারই বাসিন্দা সে। কিন্তু দিন কয়েক আগে ঝাড়খণ্ডের কুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকা হয়ে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার কাটচুয়া জঙ্গলে প্রবেশ করেছিল বাঘিনি। তার পর দু’দিন ধরে কখনও ময়ূরঝর্নার জঙ্গলে, আবার কখনও কাকড়াঝোড়ের জঙ্গলে নিজের ঠিকানা বদল করছিল। পরে তেলিঘানার জঙ্গল হয়ে জ়িনত প্রবেশ করে পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ান থানা এলাকার রাইকা পাহাড়ে।
রাইকা পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী ভাঁড়ারি পাহাড়ে দিন চারেক কাটিয়ে মানবাজারের ডাঙ্গরডিহির জঙ্গলে হাজির হয় সে। সেখান থেকেই শুক্রবার ভোরের দিকে জ়িনত কুমারী নদী পেরিয়ে ঢুকে পড়ে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের গোঁসাইডিহির জঙ্গলে। রবিবার সেই জঙ্গল থেকেই ধরা হয় জ়িনতকে। বাঘিনিকে ওড়িশার সিমলিপাল থেকে আনা বিশেষ খাঁচায় বন্দি করে ফেলে বন দফতর। বিষ্ণুপুর বন বিভাগের দফতরে নিয়ে গিয়ে বাঘিনির একদফা শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। বাঘিনিকে ফের ওড়িশায় ফেরত পাঠানো হবে। তার জন্য দুই রাজ্যের সরকারের মধ্যে প্রক্রিয়া চলছে। তবে তা কবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy