নজর ও-পারে। জলঙ্গি সীমান্তে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
কাঁটাতারের ধারেকাছে কোনও ‘গুলশন’ নেই। নেই ডিপ্লোম্যাটিক জোনের কোল ঘেঁষে ছিমছাম কোনও স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ। কিন্তু দু’দিন আগে ঢাকার গুলশনের ওই রেস্তোরাঁটিকে যারা দুনিয়ার সামনে নিয়ে এসেছে—পাটখেত, কাঁটাতারহীন পদ্মা কিংবা বৃষ্টির আড়ালে তাদের আনাগোনা যে সীমান্তে অনর্গল তা নিয়ে সংশয় নেই দিল্লির। আর তাই দিল্লির কড়া বার্তা পেয়েই রাজ্যের সীমান্ত এলাকাগুলিতে বাড়ানো হয়েছে টহলদারি। মোতায়েন হয়েছে বাড়তি সার্চ সেল, একের বদলে একাধিক বার বিএসএফেরও তল্লাশির হুকুম জারি হয়েছে।
শনিবার রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ জানিয়ে দিয়েছেন, আধা সামরিক বাহিনীর টহলদারির পাশাপাশি সীমান্তে চলবে পুলিশেরও তল্লাশি। নদিয়া-মুর্শিদাবাদও সেই তালিকারও ব্যতিক্রম নয়। রবিবার দুপুরে নদিয়ার শিকারপুর, চর মেঘনা কিংবা মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি, রানিনগর, পিরোজপুর, বাজিতপুর, নারুখাকির মতো সীমান্তে পা রাখতেই সেই তল্লাশির নমুনা মিলেছে।
আকাশে ঘন কালো মেঘ। ভরদুপুরেই যেন সন্ধ্যা নেমেছে। কাঁটাতারের ওপারের খেত থেকে বাড়ি ফিরছিলেন শিকারপুরের এক প্রৌঢ়। বৃষ্টির ছাটে ঝাপসা দেখাচ্ছে দূরের কাঁটাতারের বেড়া। শিকারপুর বর্ডার রোডের বেশ কিছুটা আগেই ওই প্রৌঢ়ের পথ আটকালেন বিএসএফের এক জওয়ান। ভোটার কার্ড, বাড়ির ঠিকানা, জমির পরিমাণ— এর মতো একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে রীতিমতো বিরক্ত ওই প্রৌঢ়। তাঁর কথায়, ‘‘রোজদিনই তো মাঠে যায়। কই, এত কথা তো বাপু জিজ্ঞাসা করে না!’’
আসলে ঢাকার আগুনের আঁচ লেগেছে এ পার বাংলাতেও। গুলশানের ঘটনার পরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে শেখ হাসিনা সরকার। আর সেই কারণেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিএসএফ ও পুলিশ প্রশাসন। অতীত অভিজ্ঞতা
বলছে, বাংলাদেশ যখনই অশান্ত হয়েছে তখনই সীমান্ত পেরিয়ে এ পারে ঢোকার চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতীরা। গুলশন-কাণ্ডের পরে তাই কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশ। দিল্লির বার্তা আসার পরেই চূড়ান্ত সতর্কতা জারির পাশাপাশি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে তামাম সীমান্ত।
রানিনগর সীমান্তের কামালউদ্দিন মণ্ডল যেমন বলছেন, ‘‘১৫ অগস্ট, ২৬ জানুয়ারির মতো দিনে সীমান্তে কড়াকড়ি থাকে বটে। কিন্তু ঢাকার ঘটনার পরে বিএসএফ ও পুলিশ যে ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তা আগে কখনও দেখিনি।’’ জলঙ্গি সীমান্তে কর্তব্যরত এক বিএসএফ আধিকারিক বলছেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন যা পরিস্থিতি তাতে আমরা কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নই। হেড কোয়ার্টার থেকে বেশ কয়েক কোম্পানি জওয়ান আনা হয়েছে। ব্যবধান কমানো হয়েছে নজরদারি চৌকির মধ্যেও।’’
বর্ষার এই সময়টা বিএসএফের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বৃষ্টি ও পাটখেতের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে রমরমা বাড়ে পাচারের। কারণ পাট ও বৃষ্টির জন্য দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় নজরদারিতে অসুবিধা হয় বিএসএফের। এখন একদিকে পাচার ঠেকানো ও অন্যদিকে বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি সামলানো বিএসএফের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএসএফের ওই কর্তা বলছেন, ‘‘এর থেকেও কঠিন অবস্থা এর আগেও আমরা সামলেছি। এ বারেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।’’
কথাটা যে নেহাত কথার কথা নয় তা মালুম হয় এ দিনের একের পর এক বিএসএফের বৈঠকে। প্রায় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে জনাকয়েক জওয়ানকে নিয়েই চলেছে ‘গ্রুপ মিটিং’। নাগাড়ে বৃষ্টির মধ্যেও কোনও জওয়ানকে নজরদারির চৌকির মধ্যে দেখা যায়নি। মাথায় ছাতা ও কাঁধে ইনসাস ঝুলিয়ে টহল দিতে দেখা গিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া বরারবর। স্পিডবোটে টহল চলেছে পদ্মাতেও। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে চলছে পুলিশি টহলদারিও। প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি এবং গ্রামবাসীদের কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
তেহট্টের মহকুমাশাসক অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সীমান্তের এলাকাগুলিতে অচেনা, সন্দেহভাজন লোক দেখলেই প্রশাসনকে খবর দিন’’— সীমান্তবর্তী ব্লক, গ্রাম পঞ্চায়েত ও জনপ্রতিনিধিদের তরফে এই মর্মে প্রচারও শুরু করা হয়েছে।” জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘সীমান্তের থানাগুলিকে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সীমান্ত এলাকাতে বিএসএফের সঙ্গে চলছে যৌথ নজরদারি।’’
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলছেন, ‘‘বাংলাদেশের ঘটনার জেরে মুর্শিদাবাদের সীমান্ত লাগোয়া সমস্ত থানাগুলিকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহলদারিও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy