আরজি কর মেডিক্যাল কলেজেছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু। — নিজস্ব চিত্র।
আরজি করে চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শুক্রবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়লেন কর্তৃপক্ষ। কমিটির মাথায় থাকবেন ডিন। তদন্তের পর কমিটি রিপোর্ট দেবে স্বাস্থ্য দফতরকে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ দাবি করেছেন, চিকিৎসককে ‘নৃশংস ভাবে’ খুন করা হয়েছে। হাসপাতালে তদন্তে এসেছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন। যদিও চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। এই ঘটনায় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মামলা করেছে রাজ্য মহিলা কমিশন। শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে সে কথা জানিয়েছেন চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
শুক্রবার সকালে আরজি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় চিকিৎসকের দেহ। সেই নিয়ে শুরু হয় হইচই। হাসপাতালে যান পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ। তিনি জানান, মৃত চিকিৎসক তাঁর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাই খবর পেয়ে সকাল থেকে সেখানে রয়েছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, তরুণীকে খুন করা হয়েছে। তাঁর মা-ও সেই দাবি করেছেন। একই দাবি করেছেন তৃণমূলের বিধায়ক। নির্মলের কথায়, ‘‘নৃশংস তো বলবই। একটা ২২ বছরের মেয়ে। তাঁকে আঘাত করা হয়েছে। খুন করেছে এতে সন্দেহ নেই। তরুণীর শরীর থেকে রক্তপাত হয়েছে। আমি মনে করি না এটা সাধারণ অপরাধীর কাজ।’’ তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, সবটাই জানা যাবে ময়নাতদন্ত এবং ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর।
চিকিৎসকের মা দাবি করেছেন, ‘অর্ধনগ্ন’ অবস্থায় তরুণীর দেহ মিলেছে। ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। যদিও পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। এই প্রসঙ্গে নির্মল বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন এই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। ময়নাতদন্তের সময় বিশেষ চিকিৎসক রয়েছেন। মহিলা চিকিৎসক রয়েছেন।’’ তৃণমূল বিধায়ক জানিয়েছেন, এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি চিকিৎসক, পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন। চিকিৎসকের বাবা জানিয়েছেন, তাঁকে ফোন করে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব রকম ‘চেষ্টা’ করার আশ্বাস দিয়েছেন। এই ঘটনার পর হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যে সেমিনার হল থেকে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখানে কোনও সিসি ক্যামেরা ছিল না। এ কথা জানিয়েছেন ছাত্রীর মা-ও। এই প্রসঙ্গে নির্মল বলেছেন, ‘‘ওই সেমিনার হলে অনেক সময়ই চিকিৎসক, নার্সেরা পোশাক পরিবর্তন করতেন।’’ হাসপাতালের নিরাপত্তা বৃদ্ধি-সহ আরও কয়েকটি দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তদন্তের দাবিও তুলেছিলেন। এ বার তদন্ত কমিটি গড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার হাসপাতালে গিয়েছেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা। তিনি বলেন, ‘‘স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে মামলা করেছি। তদন্ত করা হচ্ছে।’’ বিধায়ক নির্মলের ‘নৃশংস ভাবে খুন’-এর দাবি নিয়েও প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি সরকারি ভাবে কিছু বলতে পারব না, যত ক্ষণ না রিপোর্ট আসছে। আমরাও রিপোর্ট চেয়েছি। এই মামলায় আমরাও থাকব।’’
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছেছেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও। এই ঘটনায় সরব বিজেপি। হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তারা। বিক্ষোভ দেখিয়েছে বাম সংগঠন এআইডিএসও। এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে এপিডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রাইটস)। তদন্তের দাবিও জানিয়েছে তারা।
চিকিৎসকের মৃত্যুতে উত্তাল হয়েছে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ। মৃত্যুর প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। সদস্যেরা জানিয়েছেন, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তদন্ত-সহ তাঁদের বাকি দাবি যত ক্ষণ না মানা হবে, তত ক্ষণ বন্ধ থাকবে কাজ। শুধু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। এ বার এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্তের দাবিতে শুক্রবার হাসপাতালের ভিতরে বিক্ষোভ দেখায় চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। তারা ময়নাতদন্তের জন্য চিকিৎসকের দেহ নিয়ে যেতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত তাঁর দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্য হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ারাও আরজি করে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন। হাসপাতালের সুপার ‘সত্য প্রকাশ্যে’ আনার কথা বলেছেন। ঘটনার তদন্তে গিয়েছেন খোদ কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। হাসপাতালে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। চিকিৎসকের বাবা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসকের মায়ের দাবি, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। ‘অর্ধনগ্ন’ অবস্থায় জুনিয়র ডাক্তারের দেহ পড়েছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মেয়েটাকে খুন করে ফেলেছে এরা। আমার এই একটা মাত্র মেয়ে। অনেক কষ্ট করে ডাক্তার করেছিলাম। লোকের সেবা করতে এসে নিজে খুন হয়ে গেল।’’
রাতেও বিক্ষোভ চলছে আরজি কর হাসপাতালের সামনে। সঠিক তদন্তের দাবিতে বাম-যুব নেতৃত্ব হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। নেতৃত্বে রয়েছেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। অন্য দিকে, বিজেপিও প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। রাতেই বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল টালা থানায় উপস্থিত হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy