ফিরলেন বাসিরুল সরকার। বুধবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
গুলি চলার খবরটা মুর্তাজা আহমেদ বাট যখন পেয়েছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর বাড়িতে দাঁড়িয়ে তিন শ্রমিক। চিকিৎসক মুর্তাজার ব্যক্তিগত আপেল-বাগিচাতেই কাজ করেন এই তিন বঙ্গসন্তান। এসেছিলেন ‘মালিকের’ বাড়িতে রাতের খাবার আনতে। মুর্তাজা তাঁদের বলেন, ‘‘আভি মত যাও। থোড়া রুক যাও।’’
এতেই বড় বাঁচা বেঁচে যান ওই তিন জন— আবু বাক্কার, সাদের সরকার এবং বাসিরুল সরকার ওরফে টিপু। কুলগামের কাতরাসুর ডেরায় আরও ৬ সঙ্গীর সঙ্গে থাকতেন ওঁরা। মঙ্গলবার রাতটা মুর্তাজার বাড়িতেই কাটান ওঁরা। সেখানেই খবর পান, তাঁদের আস্তানায় চড়াও হয়ে অন্য ৫ জনকে মেরে ফেলেছে জঙ্গিরা। আর এক জন পালাতে গিয়ে গুরুতর জখম।
মঙ্গলবার রাতেই খারাপ খবরটা চাউর হয়ে যায় মুর্শিদাবাদের অজগাঁয়ে। তখনও কে বেঁচে আর কে বেঁচে নেই, ততটা পরিষ্কার নয়। বুধবার সকালে কাশ্মীরের উপত্যকা থেকে বিক্ষিপ্ত ফোন কিছুটা হলেও উৎকণ্ঠায় প্রলেপ দিয়েছে। বাহালনগরে বাসিরুলের বাড়িতে এ দিন ফোন আসে সকাল ন’টা নাগাদ। ফোন ধরেন তাঁর মা নুরনেহার বিবি। পরে বাবা ইঞ্জিন সরকারের সঙ্গেও কথা বলেন বাসিরুল। নুরনেহার পরে বলেন, ‘‘ছেলে জানিয়েছে, জঙ্গিরা যাদের পেরেছে, লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরেছে। জহিরুদ্দিন পালানোর চেষ্টা করে জখম হলেও প্রাণে বেঁচেছে। ওরা ক’জন রাতের খাবার আনতে গিয়েছিল। তাই বেঁচে গিয়েছে।”
এ দিন সকাল ৮টায় ফোন পান সাদের সরকারের বাড়ির লোকেরা। তাঁর স্ত্রী সোনালী বিবি বলেন, “স্বামী ভাল আছে জেনে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম। কবে ফিরবেন, অপেক্ষায় আছি।’’ আবু বাক্কার শেখের স্ত্রী নুরবানু বিবি অবশ্য বলতে পারেননি, ঘরের মানুষটা কবে ফিরবে! ‘‘দেখুন না, কী ভাবে ওকে জলদি গ্রামে ফিরিয়ে আনা যায়!’’— কাতর অনুরোধটুকু ছাড়া বেশি কিছু বলার ক্ষমতা নেই তিন সন্তানের অসহায় জননীর। বাগিচা-মালিক মুর্তাজা অবশ্য আশ্বাস দিলেন, ‘‘যাঁরা সুস্থ রয়েছেন, তাঁরা শীঘ্রই মুর্শিদাবাদ ফিরে যাবেন।’’ কুলগাম থানার পুলিশ আধিকারিক রাহিস আহমেদও বলেছেন, ‘‘ওঁরা থানায় রয়েছেন। সুস্থ রয়েছেন। চিন্তার কারণ নেই।’’ রাতে টিপু কলকাতায় ফিরেছেন। বাকি দু’জনকে ফেরাতে তোড়জোড় চলছে জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান এবং গণসংগঠন ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’-এর উদ্যোগে।
৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হওয়ার পরে অশান্তির আবহে এ বছর ভূস্বর্গের আপেল-বাগিচার বাঙালি শ্রমিকদের আসা খানিকটা অনিশ্চিতই ছিল। মুর্তাজা বলছিলেন, ‘‘অন্য বার শ’খানেক বাঙালি শ্রমিক কুলগামের এই গ্রামে আসেন। এ বার সেখানে জনা দশেক। তা-ও ওঁরা এসেছেন কিছুটা দেরিতে। তত দিনে বাগানে আপেল তোলার সময় হয়ে গিয়েছে।’’ অক্টোবর থেকে গোটা নভেম্বর আপেল ফলনের মরসুম। এ বার সেই ফলনের কাজেই জঙ্গি-হানায় ঘটল ছন্দপতন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy