—প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত ভোটের গণনায় কারচুপির অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। মামলাও হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। ঠিক সেই প্রেক্ষিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের তিনটি ফোন-কথোপকথনের অডিয়ো ক্লিপ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে, যেগুলির সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এগুলি যদি সত্যি হয়, তবে তা বিরোধীদের অভিযোগকেই মান্যতা দিচ্ছে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
একটি অডিয়ো ক্লিপ পূর্ব বর্ধমানের বলে মনে করছে জেলা সিপিএম। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, অডিয়ো ক্লিপে বর্ধমান-১ ব্লকের সদর কামনাড়ার বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী তন্ময় ঘোষ রয়েছেন। অডিয়োয় এক জনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘গণনাকেন্দ্রে প্রথমে বিরোধীদের মেরে তাড়িয়ে দেয়। গণনা শুরু হওয়ার পরে, দলের প্রার্থীরা হারছে দেখে, নেতারা গিয়ে গণনাকেন্দ্রের কর্মীদের চাপ দিয়ে ফল পাল্টে দেয়।’ ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘যে যত ভোটে জিতেছে বলে দেখানো হচ্ছে, আসলে আমরা জানি, ওই ভোটে তারা হেরেছে।’ প্রকারান্তরে ওই আলোচনাকে মান্যতা দিয়ে তন্ময়ের পাল্টা, ‘‘লোক-মুখে কিছু কথা শুনে (ফোনে) আলোচনা করেছিলাম। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, সব কথা ভুল।’’
সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল গণনাকেন্দ্রে ভোট লুট করে পঞ্চায়েত দখল করেছে।’’ রাজ্য যুব কংগ্রেস সভাপতি আজহার মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা আদালতে যাব।’’ তৃণমূলের বর্ধমান ১ ব্লক সভাপতি কাকলি গুপ্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অডিয়োটি শুনেছি। দু’জনকে চিহ্নিতও করা হয়েছে। ওই তৃণমূল কর্মীরা কেন মিথ্যা কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন, তা জানা হবে।’’ তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের পাল্টা, ‘‘এ সবই ভুয়ো ভিডিয়ো।’’
অন্য অডিয়ো ক্লিপটির কথোপকথন শুনে মনে হচ্ছে, এক ব্যক্তি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের ধপধপি-২ পঞ্চায়েতের এক পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী, যিনি মেনে নিচ্ছেন গণনায় কারচুপি হয়েছে। গণনায় দেখা যায়, ধপধপি-২ পঞ্চায়েতে মোট ১৮টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টিতেই জিতেছে তৃণমূল। ভাইরাল হওয়া ওই অডিয়োয় ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “১৮টার মধ্যে প্রায় ১৫-১৬টা জিতে যাচ্ছিল সিপিএম। সব কেড়ে নিয়েছে। সিপিএমের এজেন্টদের বার করে দিয়েছে। আমার বুথটায় আমি ওই রকম কিছু করিনি। তাই আমি হেরেছি।”
এই পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী কে? কথোপকথনে এক জায়গায় উল্টো দিকের ব্যক্তি ওই প্রার্থীকে সাদ্দাম বলে ডেকেছেন। ওই পঞ্চায়েতের শুধু শেরপুর গ্রামেই তৃণমূল প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা হেরেছেন। সাদ্দামের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয় সিপিএম নেতা সফিউদ্দিন খান বলেন, “প্রথম এক ঘণ্টা ঠিকঠাক গণনা হয়। সেই সময়ে সব আসনেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এর পরেই তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী গণনাকেন্দ্রে ঢুকে আমাদের এজেন্টদের বার করে দেয়।” বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের মহুয়া দাস মণ্ডলের দাবি, “স্বচ্ছ ভাবে গণনা হয়েছে। যে অডিয়ো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটি ভুয়ো।”
তৃতীয় অডিয়োটি মালদহের চাঁচলের বলে দাবি। সেখানে ফোনের এক প্রান্তে ‘প্রিসাইডিং’, অন্য প্রান্তে ‘সেক্টর অফিসার’। ‘প্রিসাইডিং অফিসার’ সাহায্য চাইছেন আর ‘সেক্টর অফিসার’ বলছেন, ‘‘বড় বড় অফিসার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আমি সামান্য সেক্টর অফিসার। ব্লকের চারদিকে আগুন জ্বলছে। আমি নিজেই সব ছেড়ে নিরাপদে লুকিয়ে আছি। যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন।’’
এই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতাও আনন্দবাজার যাচাই করেনি। বিরোধীদের দাবি, এটি চাঁচলের ঘটনা। যিনি ‘সেক্টর অফিসার’ হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন, তাঁকে এ-ও বলতে শোনা গিয়েছে, ব্লকের পাশে আগুন জ্বলছে।
বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘‘যেটুকু শোনা গিয়েছে, অনেক এলাকায় তার থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল।’’ তৃণমূলের আব্দুর রহিম বক্সীর দাবি, ‘‘পুরোটাই গুজব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy