Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Education

‘রাস্তার মাস্টারের’ উদ্যোগে হাতেখড়ি অভিভাবকদেরও

দীপনারায়ণবাবু জানান, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে স্কুলপাড়ায় প্রথম ক্লাসে এসেছিল পাঁচ জন পড়ুয়া।

বাবা-মায়েদের হাতেখড়ি দিল শিশুরা। (ইনসেটে) শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়ক। ছবি ওমপ্রকাশ সিংহ

বাবা-মায়েদের হাতেখড়ি দিল শিশুরা। (ইনসেটে) শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়ক। ছবি ওমপ্রকাশ সিংহ

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১৫
Share: Save:

শিক্ষার্থীদের হাতে ধরে খড়ি দিয়ে স্লেটে ওরা দেখিয়ে দিচ্ছে অ, আ, ই, ঈ...। হাতেখড়ির এই ‘মাস্টারমশাই’দের বয়স বছর ছয়-সাত। রবিবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের হাতেই বাবা-মায়েদের অক্ষর পরিচয়ের এমন ব্যবস্থা হল পশ্চিম বর্ধমানের উপর জবা আদিবাসীপাড়া ও বাউড়িপাড়ায়। উদ্যোক্তা, ‘রাস্তার মাস্টার’ দীপনারায়ণ নায়ক।

শিমুলিয়ার তিলকা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক দীপনারায়ণবাবু জানান, ‘লকডাউন’ পর্বে স্কুল থেকে চাল-আলু বিলি করার সময়ে অভিভাবকদের একাংশের কাছে শোনেন, ছাত্রছাত্রীদের কেউ ছাগল-গরু চরাচ্ছে, কেউ দিনভর খেলাধুলোয় মেতে। অনলাইন-শিক্ষার ছোঁয়া লাগেনি। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘রাস্তার মাস্টার’ প্রকল্পটি শুরু করেন নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে স্নাতকোত্তর দীপনারায়ণবাবু। ঠিক করেন, পাড়ায়-পাড়ায় গিয়ে গাছতলা, ফাঁকা মাঠ বা রাস্তার পাশে পড়াবেন।

দীপনারায়ণবাবু জানান, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে স্কুলপাড়ায় প্রথম ক্লাসে এসেছিল পাঁচ জন পড়ুয়া। ক্রমে সংখ্যাটা বাড়ে। এক সময়ে তাঁর নিজের স্কুল ছাড়া অন্য স্কুল থেকেও পড়ুয়ারা যোগ দিতে শুরু করে। এখন আটটি পাড়ার প্রায় ৩২০ জন খুদে সপ্তাহে এক দিন করে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত এ ভাবেই পড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের ক্লাসে নিয়ে আসেন বাবা-মায়েরাই। এক দিন ভাবলাম, অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষা-সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগই নিরক্ষর। তাই মনে হল, তাঁদের অক্ষর পরিচয় জরুরি।’’

আরও পড়ুন: তুষারকে খুন করার পরে ‘খুঁজতে’ শুরু করে ভোলা

জামুড়িয়ার নন্ডী গ্রামের বাসিন্দা দীপনারায়ণবাবুর এই ভাবনায় সাড়া দেন পড়ুয়াদের ৫০ জন মা ও ১০ জন বাবা। সেই মতো, রবিবার ছেলেমেয়েদের হাতেই বাবা-মায়ের হাতেখড়ির আয়োজন সেরে ফেলেন তিনি। বর্ণমালার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুশি শীতলা বাস্কি, সুনীতা হেমব্রম, উত্তম বাউড়িরা। তাঁরা বলেন, ‘‘ছোট থেকে লেখাপড়ার সুযোগ পাইনি। মাস্টারমশাইয়ের জন্য এ বার নিজের নাম লিখতে পারব!’’ বাবা-মায়ের হাতে চক, খড়ি তুলে দিয়ে খুশি কোয়েল মুর্মু, প্রিয়াঙ্কা বাউড়িরাও।

আরও পড়ুন: ফের নিট হবে? প্রশ্ন কোভিড আক্রান্তের

বছর ৩৪-এর এই শিক্ষকের মা আভাদেবী, বাবা সত্যনারায়ণবাবুরা বলেন, ‘‘ছেলে সবার মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিক, এই কামনা করি।’’ এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জামুড়িয়া ১ চক্রের অবর স্কুল পরিদর্শক অরিজিৎ মণ্ডল। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজির প্রতিক্রিয়া, ‘‘শিক্ষার বিস্তারে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। ওই শিক্ষককে অভিনন্দন।’’

ঘটনাচক্রে, এ বছর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী। এ দিন অক্ষর-জ্ঞান হওয়ার পরে প্রত্যেকের হাতেই দেখা গেল, ‘বর্ণপরিচয়’, দীপনারায়ণবাবুর দেওয়া। সে দিকে তাকিয়েই তিনি বলেন, ‘‘এটাই হয়তো বাঙালির ঈশ্বরের প্রতি আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Education Jamuria Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy