প্রব্রাজিকা বেদরূপপ্রাণা, চৈতী মিত্র ও বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
সন্দেশখালি নদী পেরিয়ে সুন্দরবন লাগোয়া ঢুচনিখালি গ্রাম। আমপানের তাণ্ডবে ঘরের টিনের চাল উড়ে গিয়েছিল। বাবা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করেন। আর সামান্য চাষবাস থেকে সারা বছরের চালটুকু মেলে। এ হেন পরিবারের আরিফা খাতুনের কাছে স্মার্ট ফোন কেনা এবং তাতে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ডেটা প্যাক ভরা বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে। তাই করোনা আবহে কলেজের অনলাইন ক্লাসও তাঁর নাগালের বাইরেই ছিল। কিন্তু আরিফাকে শেষ পর্যন্ত ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি। তাঁকে যত্ন করে ক্লাসের ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়েছেন কলেজের শিক্ষিকারা।
করোনা-পর্বে অনলাইন ক্লাস যখন শিক্ষা আর পড়ুয়ার মাঝখানে নতুন দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন সেই দেওয়াল ভাঙতে তৎপর হয়েছেন দমদমের রামকৃষ্ণ সারদা মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের শিক্ষিকারা। ওই কলেজের অনেক ছাত্রীরই স্মার্ট ফোন নেই। যাঁদের তা আছে, তাঁদের আবার ডেটা প্যাক ভরার আর্থিক সঙ্গতি নেই। বিদ্যাভবনের শিক্ষিকারাই ওই ছাত্রীদের স্মার্ট ফোন এবং ডেটা প্যাক জোগান দিচ্ছেন।
রামকৃষ্ণ সারদা মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের ‘স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার কমিটি’র অন্যতম আহ্বায়ক চৈতী মিত্রের বক্তব্য, বিদ্যাভবনে দরিদ্র মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য সরকারি বৃত্তির বাইরেও অনেক বৃত্তি রয়েছে। তা ছাড়া, ওই কমিটি একটি তহবিল গড়ে বিভিন্ন সময়ে কলেজের দরিদ্র ছাত্রীদের নানা সাহায্য করত। করোনা-পর্বে সেই তহবিলকেই বড় করে বিপন্ন ছাত্রীদের স্মার্ট ফোন কেনা এবং ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক ভরার টাকা দেওয়া হচ্ছে। কোনও কোনও শিক্ষিকা নিজেদের বাড়তি ফোন ছাত্রীদের দিয়েছেন। আমপানে যে সব ছাত্রীর বাড়ি ভেঙেছে এবং লকডাউনে যাঁদের অভিভাবকেরা রোজগারহীন হয়ে পড়েছেন, তাঁদেরও আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। চৈতীদেবী বলেন, ‘‘এখন আমাদের প্রাক্তন ছাত্রী, বিশেষত যারা বিদেশে রয়েছে, তারা, অনেক পরিচিত মানুষ, শিক্ষাকর্মী— সকলের সাহায্যে তহবিল বড় হচ্ছে। আমরা একটা ট্রাস্ট গড়তে চলেছি।’’ কমিটির আর এক আহ্বায়ক বিদিশা চট্টোপাধ্যায় বা উপাধ্যক্ষ প্রব্রাজিকা বেদরূপপ্রাণারও বক্তব্য, সকলের মিলিত সহযোগিতার জোরেই তাঁরা ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
আরও পড়ুন: জোড়া প্রকল্পে কাজের সুযোগ হবে: মুখ্যমন্ত্রী
করোনা আবহে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এখন অনলাইন ক্লাস করাচ্ছে। কিন্তু বহু পড়ুয়ারই স্মার্ট ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ নেই। রাতারাতি সে সব জোগাড় করে লেখাপড়া চালানোর মতো আর্থিক অবস্থাও নেই। কেউ কেউ সেই বঞ্চনার অভিঘাত সামলাতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন, এমন খবরও মিলেছে। তাই অনলাইন ক্লাসকে ‘ডিজিটাল বৈষম্য’ আখ্যা দিয়ে তা বাধ্যতামূলক না করার দাবি তুলেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাঙ্গনে ‘ডিজিটাল বৈষম্য’-এর মোকাবিলায় সচেষ্ট হয়েছে বিদ্যাভবনের ওয়েলফেয়ার কমিটি।
বিদ্যাভবনের দর্শনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী আরিফা বলেন, ‘‘আমি ওই কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছি বলেই আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়নি।’’ একই কথা বলছেন সংস্কৃতের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সন্দেশখালির বাসিন্দা চুমকি মণ্ডল এবং এডুকেশনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুন্দরবনের অস্মিতা মণ্ডল, যাঁরা আমপানের পরে ভাঙা ঘর সারাতে কলেজের শিক্ষিকাদের থেকে ৫ হাজার টাকা করে সাহায্য পেয়েছেন। এখন অনলাইন ক্লাসের জন্য ফোনে ডেটাও ভরে দিচ্ছেন শিক্ষিকারাই।
আরও পড়ুন: কৃষি বিল ফেরাতে রাষ্ট্রপতিকে ১৭টি বিরোধী দলের চিঠি, ধর্না-ঐক্যে ফাঁক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy