আবেদন করেও আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি আড়শার বনমালী রাজোয়াড়। ভাঙা বাড়ির সামনে বনমালী। নিজস্ব চিত্র
শান্তি আর স্বস্তি!
এক সময়ে অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলেই ঘাঁটি গেড়েছিল মাওবাদীরা। এখনও নাকি আনাগোনা আছে তাদের।
তবে ‘নীরবতা’র শান্তিতেই দিন কাটছে লালমাটির জেলার। খুব তাড়াতাড়ি সেই ‘নীরবতা’ ভাঙুক, চান না বাসিন্দারা। সে কারণেই না কি পুরুলিয়ায় কাটমানি বিক্ষোভ দানা বাঁধেনি।
কাশীপুর ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত কালিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতে লোহাট গ্রাম পঞ্চায়েতে ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা উধাও হওয়ার অভিযোগ করেছে বিজেপি। কাটমানি নিয়ে তরজায় জড়াতে দেখা গিয়েছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়কে। কিন্তু বিক্ষোভ তেমন ভাবে ছড়ায়নি। তা যে তাঁদের পক্ষে অনেকটাই ‘স্বস্তিদায়ক’, মানছেন তৃণমূলের নেতারা। এক নেতার কথায়, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে ফল খুবই খারাপ হয়েছে। কাটমানি বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিলে দল ধরে রাখায় সমস্যা বাড়তই।’’
কেন এই ভিন্ন ছবি? বাঘমুন্ডি থেকে বান্দোয়ান কিংবা বলরামপুর থেকে কাশীপুর—কান পাতলে শোনা যায় ‘ভয়ে’ই কাটমানি বিক্ষোভ জমাট বাঁধছে না।
কীসের ভয়? অশান্তি। রক্তপাত। মামলায় জড়িয়ে পড়া। অনেকের মধ্যে আবার রয়েছে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা। জেলায় ঘুরে তেমন ইঙ্গিতই মিলছে। চিরুডির এক প্রৌঢ় অভিযোগ করলেন, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের যোগ ছিল। কিন্তু কথা বলতে গেলে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই এ সব নিয়ে আলোচনা নয়। নাম প্রকাশ করা যাবে না, এমন শর্তেই বান্দোয়ানের রাস্তায় এক যুবকের সঙ্গে কথা হল। তাঁর কথায়, ‘‘দিদি ঘর দিচ্ছেন। এলাকার নেতারা ঘর মালিকের থেকে, আবার ঠিকাদারের থেকেও টাকা নিচ্ছে। তাহলে সে ঘর কতদিন টিকবে!’’ কিন্তু এসব নিয়ে কেন কিছু বলছেন না? যুবক বললেন, ‘‘শান্তিতে আছি। মামলা-টামলা নেই। এসব করলে আবার সে সব হয়ে যাবে!’’
আড়শা ব্লকের গান্ধারবাজার-শিকরাবাদের পিচ রাস্তার পাশেই নুইয়ে পড়া মাটির বাড়ির মাথার উপর ত্রিপল। তার বয়েস হয়েছে। ছিঁড়তেও শুরু করেছে। অথচ ঘর পাননি বনমালী রাজোয়াড়। বললেন, ‘‘বর্ষায় জল পড়ে। কিন্তু যাওয়ার জায়গা নেই। ওখানেই কোনওরকমে থাকি।’’ পাশ থেকে একজন ফুট কাটল, ‘‘বাড়িও জোটেনি। কাটমানিও নেই।’’
তবে লোকসভার ফলাফলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কাটমানির আদানপ্রদান। সে ক্ষেত্রে জেলার ভূমি ও ভূমি রাজস্ব বিভাগের ‘ভূমিকা’কে আতসকাচের নীচে ফেলতে চাইছেন জেলার এক তৃণমূল নেতা। তাঁর মতে, ‘‘বিএলআরও’র দফতরে জমির নথিপত্র সংক্রান্ত কাজ করাতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। বলা হয়েছে, দ্রুত কাজ মেটাতে লেনদেন দরকার।’’ তা হলে তাঁরা চুপ কেন! আখেরে তো সরকারের বদনাম। জবাব, ‘‘প্রমাণ কই?’’ কোথাও কারও বিরুদ্ধেই প্রমাণ গুছিয়ে রাখেননি কেউ। সে কারণে নিজের এলাকায় গুচ্ছ গুচ্ছ বাড়ি (সরকারি প্রকল্প) করানো এক নেতার সঙ্গে ঠিকাদারের ‘সম্পর্ক’ থাকার অভিযোগ থাকলেও উপভোক্তারা হইচই করতে পারছেন না।
এই সব অভিযোগ মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিদি তো কাটমানি ফেরানোর কথাটি ভাল উদ্দেশ্যে বলেছেন। আর বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে রাজনীতি করছে। সে সব থেকে আমাদের নেতা-কর্মীরা দূরে থাকবেন। তাই বলা হয়েছে।’’
তবে তৃণমূলকে এ সব বিষয়ে চেপে ধরছে না বিজেপি। শুধু জেলার সব ব্লকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল তারা। জেলাশাসকের কাছে কয়েকটি বিষয়ে অভিযোগও করেছেন নেতারা। কিন্তু পথে নেমে আন্দোলন কোথায়! জেলা বিজেপি সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘অশান্তি মানুষ পছন্দ করে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy