Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

জমি দিয়েও জুটছে না স্কুল, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী

জমি দিয়েও স্কুল পাচ্ছে না ফরাক্কার চারটি গ্রাম। তিলডাঙা লাগোয়া বিল কেন্দুয়া পাড়া, নতুন দোহিতপুর, পার দেবীদাসপুর ও ইমামনগর পঞ্চায়েতের রোজিপুর।

গাঁয়ে স্কুল নেই। এ ভাবেই দীর্ঘ পথ হেঁটে পড়শি গ্রামে নিত্য স্কুল যাওয়া। — ফাইল চিত্র।

গাঁয়ে স্কুল নেই। এ ভাবেই দীর্ঘ পথ হেঁটে পড়শি গ্রামে নিত্য স্কুল যাওয়া। — ফাইল চিত্র।

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৬:৫৪
Share: Save:

জমি দিয়েও স্কুল পাচ্ছে না ফরাক্কার চারটি গ্রাম।

তিলডাঙা লাগোয়া বিল কেন্দুয়া পাড়া, নতুন দোহিতপুর, পার দেবীদাসপুর ও ইমামনগর পঞ্চায়েতের রোজিপুর। চারটি গ্রামের কোনওটিতেই কোনও স্কুল নেই। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে অনেক চেয়েচিন্তেও একটা স্কুল জুটছে না গ্রামে। ফলে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে খুদেরা। শিক্ষার হারে আশপাশের এলাকা থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছে গ্রাম।

বেওয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তিলডাঙা গ্রামটি এলাকার মধ্যে সব চেয়ে বড়। একটি হাইস্কুলও রয়েছে সেখানে। ছাত্র সংখ্যা অন্তত ১৯০০। রয়েছে দু’দুটি প্রাথমিক স্কুলও। ৭৪ নম্বর তিলডাঙা প্রাথমিক স্কুলটিতে ছাত্র সংখ্যা ২৩০। ১১ নম্বর তিলডাঙা প্রাথমিক স্কুলটিতে রয়েছে ৫৩০ জন। দু’টি স্কুলেই ছ’জন করে শিক্ষক রয়েছেন। পিঠে ব্যাগ চাপিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা ঠেঙিয়ে ওই ১১ নম্বর স্কুলটিতে যেতে হয় বিল কেন্দুয়া পাড়ার শ’দুয়েক পড়ুয়াকে। নিজেদের ছেলেমেয়েদের কষ্ট লাঘবের জন্য গ্রামেই একটা স্কুল তৈরির পরিকল্পনা নেন বিল কেন্দুয়ার এক বাসিন্দা। স্কুল বাড়ি তৈরিতে জমিও দেন তিনি। কিন্তু সেই স্কুল গড়ে ওঠেনি আজও।

তিলডাঙা ১১ নম্বর প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক তাপস মণ্ডল বলছেন, “আমার স্কুলে ৫৩০ জন ছাত্র। মাঝেমধ্যেই হিমশিম খেতে হয়। যদিও বিল কেন্দুয়া থেকে ছেলেমেয়েরা নিয়মিত স্কুলে আসে না। ১ কিলোমিটার পথ উজিয়ে আসতে হয় যে। সত্যিই ওখানে একটা প্রাথমিক স্কুল খুব জরুরি।”

তিলডাঙারই পাশের গ্রাম দোহিতপুর। তারই পার্শ্ববর্তী একটি বসতির নাম নতুন দোহিতপুর। প্রায় ৬৫৩টি পরিবারের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষের বাস দোহিতপুর গ্রামে। কিন্তু শিক্ষার হার মাত্র ৫২.৩৪ শতাংশ। এই গ্রামেই রয়েছে দোহিতপুর প্রাথমিক স্কুল। গ্রামের জনসংখ্যার তুলনায় স্কুলটিতে পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ১৮১ জন। শিক্ষক রয়েছে ৫ জন। এই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক কংগ্রেসের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি হেদায়তুল ইসলাম। বললেন, “নতুন দোহিতপুর বসতিটি মূলত তিলডাঙা ১১ নম্বর প্রাথমিক স্কুল লাগোয়া। ফলে ওই এলাকার ছেলেমেয়েদের প্রায় সকলেই যায় তিলডাঙার স্কুলে। বিল কেন্দুয়া ও নতুন দোহিতপুরে প্রাথমিক স্কুলের জন্য জমি দিয়েছে গ্রামবাসী। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও দুই গ্রামে স্কুল গড়ে ওঠেনি আজও। তাই গত বিধানসভা নির্বাচনে ওই এলাকায় স্কুল না গড়ার বিষয়টি একটি ইস্যুও হয়ে ওঠে এলাকায়।”

পার দেবীদাসপুরেও এক ছবি। কোনও প্রাথমিক স্কুল নেই। ফরাক্কার গঙ্গা পাড়ের এই গ্রাম ভৌগোলিক দিক থেকে যথেষ্ট পিছিয়ে। পাশেই হোসেনপুর চর গ্রাম। সেখানে একটি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। পার দেবীদাসপুর গ্রামে সরকারি হিসেবে রয়েছে ৬৫ টি পরিবারের বাস, লোক সংখ্যা ৩১৯। ছেলেমেয়েদের বেশির ভাগ ফরাক্কা ব্লকের হোসেনপুর প্রাথমিকে না গিয়ে মালদহের চর গ্রাম পার সুজাপুর গ্রামের কাছের স্কুলে।

এলাকার প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান রবি সরকার বলেন, “গ্রামের জনসংখ্যা খুব কম হলেও নদী-বেষ্টিত গ্রামটি ভৌগোলিক দিক দিয়ে যথেষ্ট পিছিয়ে পড়া। স্বাক্ষরতার হারও ৪৬ শতাংশ মাত্র। বহু দিন থেকেই সরকারি খাস জমি রেখে দেওয়া হয়েছে গ্রামে প্রাথমিক স্কুল তৈরি হবে এই আশায়। কিন্তু তা আজও হয়নি।”

ইমামনগরের রোজিপুর গ্রামেও প্রাথমিক স্কুল গড়ে ওঠেনি। পরিস্থিতি অন্যদের থেকে আরও খারাপ। শিক্ষার হার মাত্র ৪৫.২২ শতাংশ। ১০৪টি পরিবারের জনসংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। ৬ বছর পর্যন্ত শিশু রয়েছে গ্রামে প্রায় ১৪০ জন।

এই রোজিপুরের একপাশে রয়েছে ডুবরিবোনা, অন্যপাশে ভৈরবডাঙা গ্রাম। দুটি গ্রামই ছোট। দুটিতেই রয়েছে প্রাথমিক স্কুল । রোজিপুরের ছাত্ররা হাঁটা পথে মিনিট ১০ পেরিয়ে ডুবরিবোনাতেই স্কুলে যায়। তাই নিজের গ্রামে স্কুল চেয়ে জমি দিয়েছিল তারাও। স্বভাবতই স্কুল না পেয়ে ক্ষোভ রয়েছে সে গ্রামেও।

জমি দিয়েও ৪ গ্রামে প্রাথমিক স্কুল গড়ে না ওঠায় ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “জেলা শিক্ষা দফতরে বহু বার এ নিয়ে দরবার করেছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। তাই গত ১৭ জুন এই বঞ্চনার কথা সরাসরি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দেখা করে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু জানি না তাতে কতটা কী হবে!”

মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি দেবাশিস বৈশ্য ফরাক্কার কয়েকটি গ্রাম যে শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে এবং সেগুলিতে প্রাথমিক স্কুল তৈরি দরকার, তা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “গত বছর সর্বশিক্ষা মিশন মুর্শিদাবাদ জেলায় ৩৫টি নতুন প্রাথমিক স্কুল খোলার অনুমতি দেয়। সেই মতো ২৯টি খোলা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে জেলার কান্দি, গুধিয়া ও রেজিনগরে একটি করে স্কুল চালু করা হবে খুব শিগগিরি। চূড়ান্ত হয়েছে ফরাক্কাতেও দু’টি বিদ্যালয়হীন গ্রামে দু’টি নতুন প্রাথমিক স্কুল খোলা হবে। মাস খানেকের মধ্যেই ওই গ্রামগুলি পরিদর্শনে যাবেন জেলা শিক্ষা দফতরের একদল পরিদর্শক। তারা ঘুরে এসে পরিস্থিতি দেখে যে রিপোর্ট দেবেন, সেই মতো স্কুল তৈরি করা হবে ফরাক্কায়।”

অন্য বিষয়গুলি:

school village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy