নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (এনএইচএম) বরাদ্দ বন্ধ। এ বার স্বাস্থ্য খাতে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ থমকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সব জেলাকে লিখিত ভাবে প্রশাসনের শীর্ষমহল জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত ওই দু’টি প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গঠনের নতুন কাজ আপাতত থামিয়ে রাখতে হবে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, আগামী দিনে অর্থাভাবের আশঙ্কা থেকেই হয়তো আপাতত এই পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। বিষয়টিকে কার্যত নজিরবিহীন বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
জেলাকে পাঠানো চিঠিতে প্রশাসনের শীর্ষমহল জানিয়েছে, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে অনুমোদন পাওয়া নতুন কোনও সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরিতে আপাতত যেন কাজের বরাত (ওয়ার্ক অর্ডার) দেওয়া না হয়। ইতিমধ্যে কোনও ক্ষেত্রে কাজের বরাত দেওয়া থাকলে অবশ্য তা এই নির্দেশের আওতায় থাকবে না। প্রসঙ্গত, এই সব পরিকাঠামো তৈরির অনুমোদন হয়েছে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের স্বাস্থ্য খাতে এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বরাদ্দের আওতায়।
প্রশাসনের অন্দরের ব্যাখ্যা, প্রতি বছর পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের স্বাস্থ্য খাতে ৮০০-৮৫০ কোটি টাকা করে পায় রাজ্য। গত বছরেও তা মিলেছিল। চলতি আর্থিক বছর এখনও পর্যন্ত সেই বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বরাদ্দ (বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা) নিয়ে টানাপড়েনের পরে গত জুলাইয়ে শেষ বরাদ্দ এসেছিল। তার পর থেকে তা-ও পাওয়া যায়নি।
পর্যবেক্ষক শিবিরের একাংশের অনুমান, যে ভাবে কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্পগুলির পরিচালনা, বিশেষ করে ‘ব্র্যান্ডিং’ নিয়ে আপত্তি তুলে বরাদ্দ আটকে রাখছে কেন্দ্র, তাতে পরিস্থিতির আমূল বদল না হলে আগামী দিনে অর্থের টানাটানি কার্যত অবশ্যম্ভাবী। প্রশাসন সূত্রের খবর, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ থেকে যে খরচ হচ্ছে, সেখানেও এই
ব্র্যান্ডিং নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দ্বিমত তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সেই বরাদ্দ না আসার পিছনে এটাই মূল কারণ বলে প্রশাসনের অনুমান।
সমস্যা হল, বরাদ্দ না এলে রাজ্য সরকারও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারছে না। কারণ, জনস্বাস্থ্যে বিপুল কাজ করতে হয় সরকারকে। সম্ভবত সেই কারণে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি বেছে নিয়ে আগামী দিনে খরচের পরিকল্পনা করতে চাইছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
প্রশাসনের অন্দরের দাবি, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ সংবিধান সুরক্ষিত। ফলে সেই অর্থ আটকানোর কথা নয়। সেই খাতে অর্থ না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এখন রাজ্যে সব মিলিয়ে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। আগামী কয়েক বছরে তা ১৪ হাজারে পৌঁছনোর লক্ষ্য রয়েছে।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, “টাকা দিচ্ছে না বলে অতিরিক্ত ওই নতুন পরিকাঠামোগুলি তৈরি করা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য পরিষেবা আটকাবে না। তা চালিয়ে যেতে আমরা বদ্ধপরিকর। পঞ্চদশ অর্থ কমিশন সাংবিধানিক। সেই অর্থ দেওয়া কেন্দ্রের কর্তব্য। এমনও নয়, কেন্দ্র প্রকল্পে পুরো টাকা দেয়। রাজ্যকেও দিতে হয় ৪০% টাকা।”
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, শুধু পরিকাঠামো তৈরি নয়, নারী, মা-শিশু, গর্ভবতী মহলাদের পুষ্টি, নাবালিকাদের স্বাস্থ্য, মোকাবিলা-সহ জনস্বাস্থ্য পরিষেবার বিপুল ক্ষেত্রে নিয়মিত পদক্ষেপ করতে হয়। তা ছাড়া সচেতনতা প্রচারের কাজ থাকে পৃথক। তা বন্ধ করাও কার্যত অসম্ভব। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকে গেলে আপাতত নিজস্ব তহবিল থেকেই সেই খরচ চালাতে হবে রাজ্যকে। আবার রাজ্যের যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে এত বড় পরিষেবা এবং পরিকাঠামো তৈরির পুরো ব্যয়ভার বহন করাও মুশকিল। তাই অগ্রাধিকার ঠিক করে খরচের রূপরেখা তৈরি করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy