রাজ্যের বকেয়া নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর ক্রমশ চড়াচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু হাতের নাগালে থাকা কয়েক হাজার কোটি টাকা পাওয়া থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছে তারাই। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, শুধুমাত্র অডিট না হওয়ার কারণে নির্বাচনের খরচ বাবদ অর্থ কেন্দ্রের থেকে পাচ্ছে না রাজ্য। কত দ্রুত তা করানো যায়, এত দিনে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে
বলে খবর।
সূত্রের খবর, ভোটের খরচ বাবদ টাকা বকেয়া বহু বছর। গত দু’টি লোকসভা এবং একটি বিধানসভা—শুধুমাত্র তিনটি নির্বাচনের কথাও যদি ধরা হয়, তা হলেও অন্তত দু’হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে এ রাজ্যের। তার সিকিভাগ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা এখনও তৈরি হয়নি। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও ভোটে খরচটা প্রথমে করতে হয় রাজ্যকেই। তার পরে কেন্দ্রের থেকে তা ফেরত পাওয়া যায়। গোটা দেশের তথা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন বলে লোকসভা ভোটে খরচ হওয়া অর্থের পুরোটা এবং রাজ্য সরকার নির্বাচিত করার জন্য বিধানসভা ভোট-খরচের অর্ধেক ফেরত পাওয়ার কথা রাজ্যের। তবে খরচের পুঙ্খানুপুঙ্খ নথিপ্রমাণ-সহ কেন্দ্রকে হিসাব বুঝিয়ে দিতে হয়। শুধু হিসাব দাখিল করলেই চলে না। কেন্দ্রের বিধি অনুযায়ী, অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলকে (এজি) দিয়ে সেই হিসাবের অডিট করালে তবে মেলে অর্থ। প্রসঙ্গত, ভোটের খুঁটিনাটি যাবতীয় কর্মকাণ্ড ছাড়াও পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী, গাড়ি, ভোটকর্মী, ভোটের পরিকাঠামো তৈরি ইত্যাদি খাতে বিপুল খরচ হয়ে থাকে।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত ভোট-খরচের কোনও অডিট করানো সম্ভব হয়নি বলেই কেন্দ্রের কাছে হিসাব দাখিল করা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই অর্থও মেলেনি। কিন্তু কেন হয়নি অডিট?
আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভোট-খরচের বরাদ্দ জেলাগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়াই রীতি। তার পরে যে খাতে যেমন খরচ হচ্ছে, তার বিল-ভাউচার-সহ হিসাব রাখার কথা জেলা প্রশাসনগুলির। স্বাভাবিক কারণেই অত বড় কর্মকাণ্ডে খরচের পাহাড়প্রমাণ বিল-ভাউচার জমে যায়। কিন্তু এজি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রতিটি জেলায় ঘুরে ঘুরে সেই অডিট করা সম্ভব হয় না। ফলে কেন্দ্রীয় ভাবে এক জায়গায় অডিটের ব্যবস্থা করার পক্ষে সওয়াল করে থাকেন সংশ্লিষ্ট মহল। সেটা এখনও পর্যন্ত করা সম্ভব না হওয়ায় অডিটও হয়নি। তারই সূত্র ধরে খরচের টাকা হাতে পাওয়া অধরাই থেকে গিয়েছে রাজ্যের। প্রবীণ এক আধিকারিকের কথায়, “২০১৯ সালের লোকসভা, ২০২১-এর বিধানসভা এবং ২০২৪ তথা এ বছর হওয়া লোকসভার তথ্য ধরলে টাকার পরিমাণ এত বিপুল। তার আগের ভোটগুলির তথ্য ধরলে তো টাকার পরিমাণ আরও বাড়বে, সন্দেহ নেই!”
আধিকারিকদের অপর একটি অংশের অবশ্য দাবি, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মতোই এই খাতে নিয়মের গেরোয় অযথা আটকে রয়েছে বরাদ্দ। তাঁদের যু্ক্তি, প্রতিটি জেলায় এজি-কার্যালয়ের শাখা থাকে। ফলে কেন্দ্র টাকা ফেরত দিতে চাইলে জেলায় জেলায় সেই অডিট করানো অসম্ভব নয় একেবারেই। তাতে জেলা প্রশাসনগুলি পূর্ণ সহযোগিতাই করবে। তা ছাড়া দূরবর্তী জেলাগুলি থেকে অত সংখ্যক বিল-ভাউচার কলকাতায় এনে কেন্দ্রীয় ভাবে অডিটের ব্যবস্থা করা বেশ কঠিন।
কিন্তু পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, শুধুমাত্র অডিটের কারণে এত বিপুল অর্থ আটকে থাকা মোটেই কাম্য নয় বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের অনেকে। তাঁদের যুক্তি, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তাদের তৎপরতা আরও না বাড়লে বকেয়ার পরিমাণও বাড়বে সন্দেহ নেই। যদিও এ ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যসচিব বা স্বরাষ্ট্রসচিবের কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy