পরিবার সূত্রে জানা যায়, গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনার পরে, রাঁচী ও আগরার মাদ্রাসায় পড়েছেন আমিরুদ্দিন। শিক্ষকতা করেছেন পুরুলিয়ার দু’টি মাদ্রাসায়।
অভিযুক্ত শিক্ষক। —ফাইল চিত্র।
শুধু মধ্যপ্রদেশে ধরা পড়া জঙ্গিকে ‘আশ্রয় বা মদত দেওয়া’ নয়, অসমের বরপেটায় ধৃত আল কায়দা জঙ্গি সংগঠনের এক সদস্যকেও হাওড়ার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে আশ্রয় দিয়েছিলেন এ রাজ্য থেকে ধৃত শিক্ষক আমিরুদ্দিন আনসারি। এমনই দাবি রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ)। মঙ্গলবার রাতে বাঁকড়ার ফ্ল্যাট থেকে ধরা হয় আমিরুদ্দিনকে। পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের মাপুইডি গ্রামে ওই শিক্ষকের পরিবারের অবশ্য দাবি, ‘‘কোথাও ভুল হচ্ছে।’’
এসটিএফ সূত্রের দাবি, গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি ভাড়ার ফ্ল্যাটে দু’দফায় বহিরাগত জঙ্গিদের ছাত্র পরিচয়ে আশ্রয় দেন আমিরুদ্দিন। পরে, তাদের ট্রেনে অন্য রাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। গোয়েন্দাদের দাবি, আমিরুদ্দিন তাদের জানান, ওই জঙ্গিদের সাহায্যের পিছনে অন্য এক জন রয়েছেন। তিনি হাওড়ার একটি ধর্মীয় সংস্থায় যুক্ত। তাঁর নির্দেশেই তিনি আশ্রয় দেওয়া বা যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছিলেন।
ওই কয়েক জন ছাড়া, আর কত জনের থাকার ব্যবস্থা ও সাহায্য করা হয়েছিল, তা জানা যায়নি। তবে গোয়েন্দাদের দাবি, তারা প্রত্যেকেই যে আল কায়দা এবং বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লা বাংলা’র সদস্য, সে বিষয়ে তাঁরা প্রায় নিশ্চিত। আর তাতেই এ রাজ্যে আল কায়দা নিজেদের প্রভাব বিস্তার বা সংগঠন তৈরি করেছে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, পর পর আশ্রয় দেওয়ার ঘটনায় ইঙ্গিত, জঙ্গিদের আনাগোনা রয়েছে এখানে। এমনকি, তাদের মদতদাতার সংখ্যাও অনেক বলে অনুমান এসটিএফের।
এসটিএফ জানায়, অসমের বরপেটা ও মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে গত দু’সপ্তাহে জঙ্গি সন্দেহে মোট ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ফজেহার জয়নুল আবেদিন ওরফে আকরাম আলি। গোয়েন্দারা জেনেছেন, সে আল কায়দার ‘টেকনিক্যাল’ প্রধান এবং কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ। ভোপালে তার নির্দেশেই যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই দুই রাজ্যে ধরপাকড় হতেই গা-ঢাকা দেন আমিরুদ্দিনকে নির্দেশ পাঠানো ওই ব্যক্তি। তদন্তকারীদের দাবি, ফোনে যে ‘অ্যাপ’-এর মাধ্যমে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন আমিরুদ্দিন, ধরা পড়ার আশঙ্কায় সেটি মুছে দেন তিনি। তাঁর ফোন থেকে কয়েক ‘গিগাবাইট’ (জিবি) জেহাদি বইপত্রের ফাইল মিলেছে দাবি করে গোয়েন্দারা জানান, মোবাইলটি পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসটিএফের এক কর্তা জানান, এ রাজ্যে আল কায়দা কতটা জাল বিছিয়েছে, তা জানতে দুই
রাজ্যে ধৃতদের জেরা করতে যাচ্ছে গোয়েন্দা দল।
পুরুলিয়ার মাপুইডি গ্রামে টালির চালের মাটির বাড়িতে বাস আমিরুদ্দিনের বাবা-মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে এবং ছোট ভাইয়ের। আমিরুদ্দিনের বাবা বৃহস্পতিবার দাবি করেন, ‘‘মনে হচ্ছে, ভুলবশত ছেলেকে ধরা হয়েছে।’’ আমিরুদ্দিনের পরিবার ও পড়শিদের একাংশের দাবি, বরাবরই পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকা আমিরুদ্দিন প্রতি মাসে তিন-চার দিনের জন্য গ্রামে আসতেন। বাড়ি এলে গ্রামের উন্নতি নিয়ে আলোচনা করতেন। তাঁর জঙ্গি-যোগের অভিযোগ শুনে তাজ্জব হয়েছেন এবং গ্রামে কখনও তাঁর সঙ্গে ‘সন্দেহভাজন’ কেউ আসেনি, দাবি তাঁদের।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনার পরে, রাঁচী ও আগরার মাদ্রাসায় পড়েছেন আমিরুদ্দিন। শিক্ষকতা করেছেন পুরুলিয়ার দু’টি মাদ্রাসায়। বছর ছয়েক আগে যান হাওড়ায়। তাঁর বাবার দাবি, সেখানে মাসে হাজার ন’য়েক টাকা বেতন পেতেন ছেলে। বছর দশেক আগে বিয়ে হয় আমিরুদ্দিনের। গোড়ায় স্ত্রী-সন্তানদের হাওড়ায় নিয়ে গেলেও, খরচের সমস্যায় পরে বাড়িতে রেখে যান।
পরিবার জানায়, আমিরুদ্দিন মার্চের গোড়ায় গ্রামে গিয়েছিলেন। বন্ধুদের একাংশের দাবি, মাসখানেক আগে গ্রামে এসে এখানেই পাকাপাকি থাকার পরিকল্পনার কথা জানান আমিরুদ্দিন। কিন্তু এলাকায় পছন্দসই কাজ না মেলায়, হাওড়ায় ফেরেন। আমিরুদ্দিনের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘আদালতের উপরে আমাদের পুরো ভরসা আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy