সরকারি সহায়তায় এই ভেষজ আবিরের বাজারটা আরও বড়। গৌতমেরা ইতিমধ্যেই পাঁচ কুইন্টাল ফুলের আবির বিপণনে শামিল। আগামী শুক্রবার ১৮ মার্চ দোলের প্রাক্কালে তা বিকোচ্ছেও ভালই। প্রধানত কল্যাণী পুরএলাকায় এবং বীরভূমের সাঁইথিয়ায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের তৈরি আবির বিক্রি করছে সুফল বাংলা।
ফাইল চিত্র।
পালং বা নিমপাতা মিশে সবুজের ছোঁয়ার পাশে, ফাল্গুনের ঝরা পলাশে কমলা হলুদের আভা। অপরাজিতার পাপড়ি ম্যাজেন্টায় কথা বললেও রক্তগোলাপে নীলচে ছাপটাই প্রবল। রাঢ়বঙ্গের বা মানভূমের মাদার গাছের ছাল গোলাপির জন্ম দিচ্ছে। টকটকে লালের খোঁজে বিট, টোম্যাটো থেকে বিক্সা বা লিপস্টিক প্ল্যান্টের কাছেও হাত পেতেছেন দোলের রং সন্ধানীরা। দোল বা হোলির উদযাপনে
প্রকৃতির রঙের সমারোহ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে এ বার সরাসরি মাঠে নেমেছে রাজ্য সরকার।
বিভিন্ন ফুল, পাতা, শিকড়ে ভেষজ আবির সৃষ্টি অবশ্যই নতুন কিছু নয়। বিপজ্জনক রাসায়নিক মেশা আবির থেকে মুক্তির খোঁজে এক যুগ আগেই এ রাজ্যে পথ দেখিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক (প্রাক্তন উপাচার্য) সিদ্ধার্থ দত্ত তখন এগিয়ে আসেন। এর পরে নানা বিক্ষিপ্ত উদ্যোগে বা স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় গ্রামের মানুষকে বিকল্প জীবিকার হদিশ দিতেও ফুলেল আবিরের চর্চায় উৎসাহ বেড়েছে।
কিন্তু গোটা রাজ্যে এই আবির-সংস্কৃতির একটা সংগঠিত বাজার তৈরি করতে এত দিন কারও তাপউত্তাপ ছিল না। রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের বিভিন্ন দুর্লভ কৃষিজ উৎকর্ষ বা প্রাকৃতিক সম্পদের মতো ভেষজ বা প্রাকৃতিক আবিরের বিপণনেও শামিল হয়েছে রাজ্য সরকার। কৃষি বিপণন দফতরের প্রকল্প আধিকারিক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “এখনও ফুলের আবিরের বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সরকারের ভূমিকা আছে। সুফল বাংলার মঞ্চটিকে আমরা ব্যবহার করছি।”
রাজ্য জুড়ে ৩৫৪টি বিপণি সুফল বাংলার। এর মধ্যে ৩১০টিই অবশ্য কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গ সংলগ্ন তল্লাটে। গৌতম বলেন, “আমরা কয়েকটি এলাকায় জীবিকার সংস্থানেও আবির তৈরি কাজে লাগাচ্ছি। এই ধরনের আবিরের একটা স্থায়ী বাজার গড়ে তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে এই কাজে উৎসাহ দিচ্ছি। ন্যূনতম লাভ হাতে রেখে আবির বিক্রির প্রায় পুরো টাকাটা যাঁরা তৈরি করছেন তাঁদের হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে।”
তবে এখনও দোলের সামগ্রিক আবির বাজারের সামান্য অংশই ফুলের আবির। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া আরও কিছু বিক্ষিপ্ত প্রয়াসেও এই আবিরের প্রসার চলছে। যেমন পুরুলিয়ায় বলরামপুর ব্লক প্রশাসনের সাহায্যে আদিম জনজাতি বিরহড়দের পলাশের আবির তৈরি শিখিয়ে তা বিপণনের চেষ্টা চালাচ্ছেন কেউ কেউ। সমাজমাধ্যমে প্রচার করে এই আবিরের প্যাকেট ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে অগ্রণী সপ্তর্ষি বৈশ্য বলছিলেন, ‘‘কম-বেশি এক কুইন্টাল ফুলের আবির বিরহড়দের সাহায্যে তৈরি হয়েছে।’’
তবে সরকারি সহায়তায় এই ভেষজ আবিরের বাজারটা আরও বড়। গৌতমেরা ইতিমধ্যেই পাঁচ কুইন্টাল ফুলের আবির বিপণনে শামিল। আগামী শুক্রবার ১৮ মার্চ দোলের প্রাক্কালে তা বিকোচ্ছেও ভালই। প্রধানত কল্যাণী পুরএলাকায় এবং বীরভূমের সাঁইথিয়ায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের তৈরি আবির বিক্রি করছে সুফল বাংলা।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অমিতাভ বিশ্বাস, বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মী দেবাশিস পালেরা এই উদ্যোগটির সঙ্গে জড়িত। রঙের জেল্লা বাড়াতে অনেকে আবার ফুলের আবিরে অন্য রাসায়নিক উপাদানও মেশান। গ্রামীণ স্তরে এই বিষয়টি রুখতেও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। দেবাশিসরা একেবারে ছ’মাসের শিশুর জন্য জুতসই নিম, হলুদ, অ্যালোভেরার আবির তৈরিতেও তৎপর। প্রত্যয় বাড়ছে, দোলের রং মর্মে স্পর্শ করতে কম যায় না ফুলের আবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy