স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অবশেষে কাটল জটিলতা। নবনির্বাচিত চার বিধায়ককে মঙ্গলবার বিধানসভায় শপথগ্রহণ করাবেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশন কক্ষেই দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ, গোসাবার সুব্রত মণ্ডল, শান্তিপুরের ব্রজকিশোর গোস্বামী এবং খড়দহ থেকে নির্বাচিত শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বিধায়ক পদে শপথ নেবেন।
ওই চারজনের শপথগ্রহণ নিয়েইরাজ্যপাল-স্পিকার সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। রাজ্যপাল তাঁর ক্ষমতাবলে বিধায়কদের শপথগ্রহণের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও তেমনই ইঙ্গিত মিলেছিল। পার্থ বলেছিলেন, ‘‘আগামীকাল নতুন চার বিধায়ক শপথ নেবেন। শপথের পরেই তাঁরা অধিবেশনে যোগ দেবেন। কীভাবে তাঁদের শপথ হবে তা আমরা বসে ঠিক করে নেব। তবে রাজ্যপাল ওই বিধায়কদের শপথগ্রহণ করাবেন না।’’
সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যায় নিউটাউনে মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মেলনীতে আমন্ত্রিত ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সেখানেই বিধায়কদের শপথ নিয়ে কথা হয় রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীর। তারপরেই রাজভবন থেকে বিধানসভার সচিবালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়, চার জন বিধায়ককে শপথগ্রহণ করাতে পারেন স্পিকার। কারণ পুজোর আগেও মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ নিয়ে স্পিকার-রাজ্যপাল সঙ্ঘাত বেধেছিল। সে বার রাজভবন থেকে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছিল বিধানসভার সচিবালয়ে। সেই বার্তায় বলা হয়েছিল, এর পর থেকে নির্বাচিত বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল, সাংবিধানিক ভাবে লোকসভার ক্ষেত্রে সাংসদদের শপথগ্রহণ করানোর দায়িত্ব দেশের রাষ্ট্রপতির। রাজ্য বিধানসভার ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব রাজ্যের রাজ্যপালের। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই সাংসদ বিধায়কদের শপথগ্রহণের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল দিয়ে দেন তাঁর মনোনীত ব্যক্তিকে। লোকসভার ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় স্পিকারকে। বিধানসভার ক্ষেত্রে রাজ্যপাল সেই দায়িত্ব দেন সংশ্লিষ্ট বিধানসভার স্পিকারকে।
রাজ্যপালের দেওয়া সেই ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে শপথগ্রহণ করাতে পারেননি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বার রাজভবন থেকে বিধানসভায় পাঠানো বার্তায় জানানো হয়েছিল,, সংবিধানের ১৮৮ ধারা অনুযায়ী শপথগ্রহণ নিয়ে রাজ্যপাল এত দিন যে অধিকার স্পিকারকে দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, বহু কাল ধরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালরা এই দায়িত্ব স্পিকারকে দিয়ে রেখেছিলেন। সেই অধিকার আইন বলে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল।
৭ অক্টোবর বিধানসভায় এসে মুখ্যমন্ত্রীকে শপথগ্রহণ করিয়েছিলেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই শপথ নিয়েছিলেন জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেন ও সমশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম। এ বার ফের রাজ্যপাল নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিধায়কদের শপথগ্রহণের দায়িত্ব দেন ডেপুটি স্পিকারকে। কিন্তু শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে জটিলতা কাটিয়ে স্পিকারকে শপথবাক্য পাঠ করানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলেই রাজভবন সূত্রে খবর।
স্পিকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সঙ্ঘাত নতুন নয়। এর আগে বিধানসভায় তাঁর বক্তৃতা সম্প্রচার করতে দেওয়া নিয়ে সঙ্ঘাত বেধেছিল রাজ্যপাল-স্পিকারের। রাজ্যপালের বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করতে চেয়ে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিল রাজভবন। নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাজভবনের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বিমান। আবার পর পর দু’বার সর্বভারতীয় স্পিকারদের সম্মেলনে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে লোকসভার স্পিকারের কাছে নালিশ করেছিলেন বিমান। বেশ কয়েক বার পত্রযুদ্ধও চলেছিল দু’জনের মধ্যে। তবে এ বার বিধানসভার সঙ্গে রাজভবনের সঙ্ঘাত কিছুটা হলেও থামল মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy