হাওড়া পুরসভার ভোট আটকে রাখা নিয়ে রাজ্যপালের ওপর ক্ষোভ স্পিকারের। ফাইল চিত্র।
হাওড়া পুরসভা সংশোধনী বিল আটকে রাখা নিয়ে রাজ্যপালে ভুমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় মানা উচিত রাজ্যপালের। রাজীব গাধীঁ হত্যা মামলা নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়েছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল। তাই এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হওয়া উচিত ছিল।’’ স্পিকার আরও বলেছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে রাজ্যপালের কাছে বিল পাঠানো হলেও তিনি বিধানসভাকে তা জানাননি। উনি বার বার বিধানসভায় আসেন। উনি এসে বলেন, কোনও বিল বাকি নেই। যদিও হাওড়ার বিল এখনও আটকে। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক পরিষেবা।’’
রাজ্যপালের সঙ্গে স্পিকারের বিবাদ কোনও নতুন ঘটনা নয়। জাতীয় স্পিকারদের সম্মেলনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন বিমান। বিধানসভার কাজে হস্তক্ষেপ করার পাশাপাশি, বিভিন্ন বিল আটকে রাখার মতো অভিযোগও করেছিলেন তিনি। পাল্টা বিধানসভায় এসে স্পিকারের কাজ করার ধরন নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সম্প্রতি আবার বিধায়কদের শপথগ্রহণ করানোর ক্ষমতাও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। তাতে পরস্পরের মধ্যে তিক্ততা বেড়েছে বই কমেনি। আর বৃহস্পতিবার ফের একবার হাওড়া পুরসভার সংশোধনী বিল সই না করে সেখানকার পুর নির্বাচন আটকে রাখার অভিযোগ করলেন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও হাওড়ার ভোটের বিলম্বের কারণে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘হাওড়ার মানুষ রাজ্যপালের ওপর ক্ষুব্ধ। রাজ্যপাল অহেতুক জটিলতা তৈরি করছেন। হাওড়ার মানুষের ওপর রাগ দেখাবেন না। সেখানকার নাগরিকদের পুর পরিষেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, গত বছর বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে পাশ হয়েছে ‘দ্য হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) বিল, ২০২১’। এর ফলে হাওড়া পুরসভার ওয়ার্ডের সংখ্যা ৬৬ থেকে কমে ফের ৫০-এ দাঁড়ায়। বালিকে হাওড়া থেকে আলাদা করে দেওয়ার পরে হাওড়া পুরসভার যে অংশ পড়ে রইল, তার পুনর্বিন্যাস করেই ৫০টি ওয়ার্ড হয়। হাওড়া পুরসভায় আগে ৫০টি ওয়ার্ডই ছিল। ২০১৫ সালে ৩৫টি ওয়ার্ডের বালি পুরসভাকে ১৬টি ওয়ার্ডে পরিণত করে হাওড়ার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন হাওড়ার ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৬টি। কিন্তু এখন হাওড়া ও বালি দু'টি পৃথক পুরসভা। এবং দু'টি পুরসভাতেই ভোট বকেয়া পড়ে আছে।
রাজ্য সরকার চেয়েছিল চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বিধাননগর, আসানসোল ও শিলিগুড়ি পুরসভার সঙ্গে হাওড়ার ভোট করাতে। পরে রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার সঙ্গে বালি পুরসভার ভোট হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। নভেম্বর মাসে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশেনে হাওড়া-বালি পুরসভার বিভাজন প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়। পরে হাওড়াকে পৃথক পুরসভা করতেও সংশোধনী বিল পাশ করে রাজ্য। বিলটি রাজ্যপালের সইয়ের জন্য পাঠানো হয় রাজভবনে। কিন্তু রাজ্যপাল অভিযোগ করেছিলেন, তিনি বারবার চাওয়া সত্ত্বেও বিলটি সবিস্তার তাঁকে জানানো হয়নি। ফলে তাঁর পক্ষে সই করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত ডিসেম্বরে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে আগে জানিয়েছিলেন, হাওড়া বিলে সই করেছেন রাজ্যপাল। কিন্তু এই বিল প্রসঙ্গে এজি বলেছিলেন, “একটা লিখিত বয়ান দেখে ভেবেছিলাম, সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। তা ভেবেই আদালতকে বলেছিলাম, আর সমস্যা নেই। রাজ্যপালও হয়তো সই করে দিয়েছেন।” কিন্তু পরে কলকাতা হাই কোর্টে হাওড়া বিল নিয়ে ভুল স্বীকার করে রাজ্য। আবার রাজভবনের দাবি, তাদের কাছে কোনও ফাইল ৪৮ ঘণ্টার বেশি আটকে থাকে না। কিন্তু রাজ্যের দাবি, বিল আটকে রয়েছে রাজভবনেই। তাই এখনও হাওড়ার ভোট অথই জলে বলেই মনে করছেন হাওড়ার রাজনীতির কারবারিরা। আর তাই নিয়ে স্পিকার ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। এই জট কবে খুলবে? তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কোনও আধিকারিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy