ফাইল চিত্র।
টিকার জোগান রয়েছে। কিন্তু বকেয়া অর্থাৎ ‘ওভারডিউ’-র সংখ্যা প্রতিটি জেলাতে ক্রমশ বেড়েই চলছে। কেন এমনটা ঘটছে, তা জানতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করানোর পাশাপাশি ভোটার তালিকা ধরে এ বার টিকাকরণ করানোর নির্দেশ দিল নবান্ন। শুক্রবার মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তা এবং জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, আগে যখন টিকার জোগান কম ছিল, তখন টিকাপ্রার্থী মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছিল। জায়গায় জায়গায় অসন্তোষও কম হয়নি। এখন রাজ্যের ভাঁড়ারে টিকা থাকলেও, দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার বকেয়ার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আশাকর্মীদের পাঠিয়ে বাড়িতে বাড়িতে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট শুক্রবারের মধ্যে হাতে পেতে চাইছে নবান্ন।
টিকা নেওয়া হয়েছে কি না, দ্বিতীয় ডোজ় বকেয়া রয়েছে কি না এবং বয়স্কদের টিকার বিষয়ে খোঁজ নিতে বাড়ি-বাড়ি যাওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। বলা হয়েছিল, যাঁরা টিকার একটি ডোজ়ও নেননি বলে দেখা যাবে, তাঁরা কেন নেননি তা জানার পরে ওই ব্যক্তিকে বুঝিয়ে টিকাকরণ করানোর জন্যও বলা হয়েছিল। কোভিডের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে টিকাকরণ বড় অস্ত্র বলে বারবার করে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আক্রান্ত ৮৭৭ জন। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘করোনাকে প্রতিহত করতে বিধি মেনে চলার পাশাপাশি প্রতিষেধক নেওয়া একান্ত জরুরি। কিন্তু তার পরেও কিছু মানুষ বিধিও মানছেন না, আবার টিকাও নিচ্ছেন না।’’
সূত্রের খবর, রাজ্যের হাতে এখন প্রায় এক কোটি ষাট লক্ষ ডোজ় টিকা মজুত রয়েছে। সেখানে সমস্ত জেলা মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ়ের বকেয়া থাকার সংখ্যা ১৭-১৮ লক্ষ। কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে ১২-১৬ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ় নিতে হয়। ১২ সপ্তাহ হয়ে গেলে তাকে ‘ডিউ’ এবং ১৬ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়াকে
‘ওভারডিউ’ বলা হয়। কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ় নিতে হয়। সেখানেও বকেয়ার সংখ্যা রয়েছে। কেন এই বকেয়া, এ বার তারই কারণ খুঁজতে চাইছে নবান্ন। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “এমন পরিস্থিতি খুব একটা স্বাভাবিক নয়। প্রধানত দু’টি কারণে এমনটা ঘটতে পারে। হয় প্রথম ডোজ়ের পরে এলাকা বা রাজ্য ছেড়ে কেউ অন্যত্র চলে গিয়েছেন। না হলে টিকাপ্রাপক টিকা নিতে চাইছেন না। কিন্তু প্রকৃত কারণটা জানা জরুরি।”
স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে কিছু অনুমান তৈরি হয়েছে। যেমন, লকডাউনের পরে বহু মানুষ (প্রধানত পরিযায়ী শ্রমিক) রাজ্যে ফিরে এসেছিলেন। সময়ের সঙ্গে তাঁদের প্রথম ডোজ়ের টিকা নেওয়ার কাজ শেষ। এখন সব গতিবিধি চালু হওয়ায় তাঁরা কর্মস্থলে ফিরেছেন। স্বাভাবিক নিয়মে তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ় বকেয়া হবে। ভোটের সময় বেশ কয়েক লক্ষ আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান ও ভোটকর্মী রাজ্যে এসে ছিলেন ডিউটি করতে। সেই সময় তাঁরা যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টিকার প্রথম ডোজ় নিয়েছিলেন, পরে নিজের রাজ্যে ফিরে হয়তো সেই নম্বর বদলে ফেলেছেন। তাই খাতায় কলমে তাঁদেরও দ্বিতীয় ডোজ় বকেয়াই থাকবে।
রাজ্যে টিকাকরণের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা অসীম দাস মালাকার বলেন, ‘‘অনুমানগুলি প্রমাণ করতে হবে। তাই প্রতিটি জেলার স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে মোবাইল নম্বর ধরে ধরে ফোন করে বকেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে।’’ অন্য দিকে গ্রামীণ এলাকায় কারও দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা কাজ করছে কি না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা-ও খতিয়ে দেখবেন আশাকর্মীরা। তেমনটা হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে টিকাকেন্দ্রে পাঠানোর চেষ্টা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy