Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Ariadaha Assault Case

আড়িয়াদহের দুধবিক্রেতার ‘জায়ান্ট’ হয়ে ওঠা, নেপথ্যে কি কামারহাটির রাজনৈতিক ময়দান দখলে রাখার লড়াই?

রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের তত্ত্বাবধানেই জয়ন্ত সিংহের মতো স্থানীয় যুবকদের এলাকা ভিত্তিক ‘বাহুবলী’ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

জয়ন্ত সিংহ। — ফাইল চিত্র।

জয়ন্ত সিংহ। — ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:০২
Share: Save:

রাতারাতি পাড়ার ‘ডন’ হয়ে ওঠা নয়, বরং পরিকল্পনামাফিক প্রভাবশালীদের ‘পোষ্য সিংহ’ তৈরি করার কাহিনি।

আড়িয়াদহের দুধবিক্রেতার ‘জায়ান্ট’ হয়ে ওঠার নেপথ্যেও রয়েছে কামারহাটির রাজনৈতিক ময়দান দখলে রাখার লড়াই। অন্তত বিরোধীরা বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতে রাখার দড়ি টানাটানিতে উত্থান হয় এ হেন ‘জায়ান্ট’দের। তার পর এক সময়ে তারা নিজেরা মাথা তুলতে শুরু করলেই গৃহযুদ্ধ!’’ যদিও ‘সবই বিরোধীদের চক্রান্ত’ বলে দাবি তুলেছেন শাসক দলের স্থানীয় নেতারা।

রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের তত্ত্বাবধানেই জয়ন্ত সিংহের মতো স্থানীয় যুবকদের এলাকা ভিত্তিক ‘বাহুবলী’ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। গায়ের জোর ও ক্ষমতার অলিন্দে থেকে অনায়াসে কাঁচা টাকা রোজগারের ‘লোভ’-এ কামারহাটি জুড়ে তৈরি হয়েছে ‘বাহুবলী-সিন্ডিকেট’। বিরোধীদের অভিযোগ, সেখানে এতটুকু মতানৈক্য হলে রাতারাতি জেলে পাঠানো হয়। আবার মতে মিললেই সাত খুন মাফ!

বিধায়ক মদন মিত্র বা সাংসদ সৌগত রায়ের রাজনৈতিক প্রচারে জয়ন্তকে দেখেছেন এলাকার সকলেই। জয়ন্ত-বাহিনী ভোটের সময়ে ভোট লুট করেছে কিংবা ওই দুষ্কৃতীর দখলে থাকা ক্লাবের আয়োজিত ফুটবল প্রতিযোগিতায় বিধায়ক-সাংসদেরা বিশেষ পদে থেকেছেন বলে বিরোধীরাও অভিযোগ করছেন। যদিও শাসক দলের নেতাদের দাবি, ‘‘জয়ন্ত প্রোমোটার-দুষ্কৃতী। ওর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই।’’ এমনকি, আড়িয়াদহের কয়েকটি ওয়ার্ডে হারের কারণ হিসেবেও জয়ন্ত-র ‘দাদাগিরি’কে দায়ী করছেন তাঁরা। বলছেন, “ওই দুষ্কৃতীদের কর্মকাণ্ডের জন্যই এলাকার মানুষ তিতিবিরক্ত হওয়ায় ফল খারাপ হয়েছে।” কিন্তু ওই সমস্ত দুষ্কৃতীরা কাদের মদতে দাপাদাপি করল? তা বন্ধ করতে কি শাসক দল নিজেদের ক্ষমতা কখনও প্রয়োগ করেছে? সদুত্তর নেই।

রাজনীতির বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও শুক্রবার জয়ন্তের মা সরোজ সিংহের দাবি, “ছেলের জনপ্রিয়তা বাড়ছিল। অনেকেরই সেটা হয়তো পছন্দ হচ্ছিল না। তাদেরই চক্রান্তের শিকার জয়ন্ত।” তাঁর আরও দাবি, “কোনও ভিডিয়োয় জয়ন্তকে দেখা যাচ্ছে না। ক্লাবের প্রায় ৫০০ সদস্য কোথায় কী করছে, সেটা ওর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে জয়ন্তর নাম ভাঙিয়ে অনেকেই অনেক কিছু করত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তার আগে ও জড়িত বলা হচ্ছে কেন?”

বৃহস্পতিবার প্রশাসন জানিয়েছে, আগেও পাঁচ বার গ্রেফতার হয়েছিল জয়ন্ত। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে এমন দুষ্কৃতীকে ছেড়ে রাখা হয় কী করে? সে দলবল নিয়ে অত্যাচারের সাহসই বা পায় কোথা থেকে? সূত্র বলছে, ‘প্রভাবশালীদের’ ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ‘বাহুবলীদের’ও একটা সময়ের পরে সামাজিক প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ আর তার জেরে মতানৈক্যের ঘটনা আগেও দেখেছে কামারহাটি। বছর ছয়েক আগে স্থানীয় রাজনৈতিক ‘প্রভাবশালীদের’ হাত মাথায় থাকা সত্ত্বেও এলাকারই এক অতি পরিচিত ‘বাহুবলী’কে একটি খুনের মামলায় জেলে যেতে হয়েছিল। শাসক দলের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে আজও দাবি করেন, ওই ‘বাহুবলী’র সামাজিক জনপ্রিয়তার ক্রমবৃদ্ধি রুখতে খুনের মামলায় ‘ফাঁসিয়েছিলেন’ তারই ‘অভিভাবক’ প্রভাবশালী নেতা।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সেই ‘বাহুবলী’ জেলে যাওয়ার পরেই কামারহাটি জুড়ে এক জনের আধিপত্যের প্রথা ভেঙে তৈরি হয় এলাকা ভিত্তিক ‘বাহুবলী-সিন্ডিকেট’। ২০১৮ নাগাদ একের পর এক ‘জায়ান্ট’দের ময়দানে নামানো হয়। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জয়ন্তের মতো ছেলেদের সাম্রাজ্য তৈরিতে সহযোগিতা করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তা হলে কি সম্প্রতি ‘জায়ান্ট’-এরও নিজস্ব পরিচয় তৈরির চেষ্টার জেরেই তার মাথার উপর থেকে হাত তুলে নিলেন প্রভাবশালী? বিরোধীদের একাংশ আবার বলছেন, জয়ন্তের মতো দুষ্কৃতীর শিবির বদলের সম্ভাবনা বুঝে কোনও রাজনৈতিক চাল হয়তো চালা হয়েছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহল বলছে, কামারহাটিতে স্বার্থে ঘা লাগলে অতি কাছের লোককেও ‘শত্রু’ বানানোর রীতি পুরনো। তা যেন রাজ্যে পালা বদলের পরে বেশি প্রকট হয়েছে। তবে বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, “বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস একজোট হয়ে সার্বিক ভাবে আড়িয়াদহের বদনাম করার চেষ্টা করছে।” পাল্টা প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, “শাসক দলের কোন গোষ্ঠী আড়িয়াদহের মাটি দখলে রাখবে, এটা তার লড়াই। তাতে হাত শক্ত রাখতে জয়ন্তের মতো দুষ্কৃতীদের ওঁরাই ইন্ধন দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে ওঁরা এখন চক্রান্তের কথা বলতে শুরু করেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

attack Jayant Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE