উত্তর চব্বিশ পরগনার গাইঘাটার বাড়িতে সিরাজুল। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
তিরিশ বছর আগের একুশে জুলাই। টি-বোর্ডের কাছে যুব কংগ্রেসের তৎকালীন রাজ্য সভানেত্রীর উপরে লাঠি চালাচ্ছিল পুলিশ। তা দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন কর্তব্যরত এক কনস্টেবল। উচ্চপদস্থ কর্তার দিকে গাদা বন্দুক তাক করে বলেছিলেন, ‘স্যর, থামুন। না হলে গুলি চালাব।’ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়েছিলেন ওই পুলিশ কর্তা।
সেই কনস্টেবল সিরাজুল হক মণ্ডল এখন দিনমজুর। উচ্চপদস্থ কর্তার দিকে বন্দুক তাক করার তিন বছর পরে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। আশা করেছিলেন, পরিবর্তনের রাজ্যে নিজের চাকরি ফিরে পাবেন। কিন্তু তা হয়নি। বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীর দরজায় ঘোরার পরে, সে দিনের যুব কংগ্রেস নেত্রী, বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও দরখাস্ত জমা দিয়েছিলেন। সুরাহা হয়নি। মা, ভাই, বোনকে নিয়ে কোনও মতে সংসার চালানো গাইঘাটার সিরাজুল বলেন, ‘‘সে দিন আমি রুখে না দাঁড়ালে দিদিকে ওরা মেরে ফেলত। এখনও অপেক্ষা করি, মুখ্যমন্ত্রী আমার প্রতি সুবিচার করবেনই।’’
অপেক্ষার সঙ্গেই এখন মিশেছে আক্ষেপ। কংগ্রেসের হয়ে পুলিশ সংগঠনের ভোট দাঁড়ানো, একদা তৃণমূলের বুথ সভাপতি, ভোটের গণনা এজেন্ট, ৫৬ বছরের সিরাজুল ২০১৩-র পর থেকে আর তেমন ভাবে প্রকাশ্যে আসতে চান না। বললেন, ‘‘দিদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই লাঠি চালানোর ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। সকলে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। কিন্তু কী উত্তর দেব?’’
শুক্রবার দুপুরে ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী যখন বক্তৃতা দিচ্ছেন, গাইঘাটায় নিজের কাজে ব্যস্ত সিরাজুল। জানালেন, অন্য দিন টিভিতে খবরে চোখ রাখলেও, এ দিন কোনও খবর তিনি দেখেন না।
কথার মধ্যেই ফিরে গেলেন তিরিশ বছর আগের সেই দিনটাতে। কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল সিরাজুল ২০ জুলাই বিকেলেই জেনেছিলেন, নির্বাচনে সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছেন। সেই দিন ডিউটি করতে হবে তাঁকে। সকালে নির্দিষ্ট সময়ে গাদা বন্দুক নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন। বললেন, ‘‘১৩ জনের মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পরেই টি-বোর্ডের মোড়ে বসে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই পুলিশ কর্তারা নির্বিচারে লাঠি চালাতে শুরু করেন।’’
সিরাজুল বলেন, ‘‘আর ঠিক থাকতে পারিনি। গাদা বন্দুক মাথার উপরে তুলে ভগবানের নাম নিয়ে ওই পুলিশ কর্তার দিকে তাক করি। এর পর থেকে বিভিন্ন ভাবে আমার হেনস্থা শুরু হয়। ডিউটিতে এক-দুই মিনিট দেরি হলেই অনুপস্থিত দেখানো হত। এমন করে ’৯৬-র শেষে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিল।’’ চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল, হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সিরাজুল। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে বেশি দিন মামলা চালাতে পারেননি। স্মৃতিকে সম্বল করেই ‘দিদি’র সুবিচারের আশায় দিন কাটে তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy