দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বিবাহ-বহির্ভূত একাধিক সম্পর্কের কথা জেনে ফেলার পরেই তাঁকে খুন করেছিল হরিদেবপুর থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্ত কার্তিক দাস। ধৃত কার্তিক আংশিক দৃষ্টিহীন বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২৩ জানুয়ারি হরিদেবপুর থানা এলাকার ডায়মন্ড পার্কে একটি ভাড়া বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয় ছায়া সর্দার নামে এক মহিলার মৃতদেহ। হাত-পা বেঁধে, গলার নলি কেটে ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় গত রবিবার রাতে ছায়ার স্বামী কার্তিক দাসকে হাওড়া স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, জেরার মুখে ধৃতের দাবি, ছায়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরেই নিজের প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানদের ছেড়ে চলে আসে পেশায় গাড়িচালক কার্তিক। বিয়ে করে থাকতে শুরু করে ছায়ার সঙ্গে। এর কিছু দিন পরেই তার দৃষ্টিশক্তির সমস্যা শুরু হয়। দেখতে অসুবিধা হওয়ায় গাড়ি চালানোর কাজ ছেড়ে দেয় কার্তিক। তার দাবি, এরই মধ্যে একাধিক জনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ছায়া। সেই কারণে কার্তিক ছায়াকে ছেড়ে চলে যায়। পুলিশের দাবি, ছায়া ভেবেছিলেন, কার্তিক চোখে একেবারেই দেখতে পায় না। তাই কার্তিকের তোয়াক্কা না করেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সেই ঘটনার বদলা নিতেই সব সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কার্তিক ছায়ার কাছে ফিরে আসে। এর পরেই হাত-পা বেঁধে, কাটারি গিয়ে গলা কেটে ছায়াকে খুন করে সে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় কার্তিক। তার দৃষ্টিশক্তি কিছুটা ফিরে এলেও পুরোপুরি ফেরেনি। গত দু’মাস ধরে মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ-সহ বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়িয়েছে কার্তিক। নিজেকে দৃষ্টিহীন বলে দাবি করে ট্রেনে ভিক্ষা করত সে। অন্যান্য শহরে থাকাকালীন চোখের চিকিৎসাও করিয়েছিল কার্তিক। এক পুলিশকর্তা জানান, ভিন্ রাজ্যে শুধু নয়, ঘটনার পরে বেশ কয়েক বার এ রাজ্যে ফিরে এসে কলকাতা, বর্ধমান, কৃষ্ণনগরের মতো জায়গাতেও সে গিয়েছে। দিনের বেলায় ভিক্ষে করে খাবারের টাকা সংগ্রহ করত কার্তিক। রাতে স্টেশনে শুয়ে থাকত। এ ভাবেই গত দু’মাস কাটিয়েছে সে।
কী ভাবে ধরা পড়ল কার্তিক?
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ করে পুলিশ ঘোষণা করেছিল, খোঁজ দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার মিলবে। সেই সঙ্গে হরিদেবপুর থানার তরফে কার্তিকের ছবি বিভিন্ন সোর্সের কাছে পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ জানায়, দু’দিন আগেই শহরে আসে কার্তিক। রবিবার বিকেলে সে এক্সাইড মোড় থেকে একটি বাসে ওঠে হাওড়া স্টেশন যাবে বলে। ওই বাসে থাকা পুলিশের এক সোর্স প্রথমে তাকে চিহ্নিত করেন। কিন্তু তিনি নিশ্চিত ছিলেন না যে, কার্তিকই বাসে চেপেছে। এক তদন্তকারী জানান, বাস থেকে নেমেই আংশিক দৃষ্টিহীন কার্তিক লাঠি হাতে হাঁটতে শুরু করে। যা দেখে ওই সোর্স নিশ্চিত হয়ে যান যে, ওই ব্যক্তিই অভিযুক্ত কার্তিক। এর পরেই সেই সোর্স হরিদেবপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যায়। সে ট্রেনে চেপে পালিয়ে যাওয়ার আগেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
সোমবার আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে তোলা হলে কার্তিককে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সরকারি আইনজীবী বিকাশ দাস বলেন, ‘‘ওই বাড়ির মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কার্তিককে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)