Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
West Bengal government

কাজ ‘মাপবে’ পঞ্চায়েত দফতর, চর্চায় উপদেষ্টা-যোগ

আধিকারিকদের একাংশের দাবি, বিভিন্ন সময়ে নানা দফতরের কাজ এবং প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সরাসরি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

—প্রতীকী ছবি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ ০৮:০০
Share: Save:

বিভিন্ন দফতরে কাজকর্ম কেমন হচ্ছে, তাতে নজরদারির নানা পদ্ধতি আছে রাজ্য সরকারের হাতে। সূত্রের খবর, তা থাকা সত্ত্বেও নবান্নের সিদ্ধান্তে এ বার প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট পাচ্ছে পঞ্চায়েত দফতর। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যা ঠিক রয়েছে, তাতে অনেকগুলি দফতরের বিভিন্ন কাজ এবং প্রকল্পের অগ্রগতির উপরে নজর রাখবে ওই ইউনিট। সরকারি ভাবে এখনও এই ঘোষণা হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সরকারের অন্দরে চর্চা তুঙ্গে। হঠাৎ নির্দিষ্ট একটি দফতরের অধীনে কেন এমন ইউনিট গঠনের প্রয়োজন হল, কেনই বা হঠাৎ পঞ্চায়েত দফতরের হাতে থাকা ওই ইউনিট অন্যান্য দফতরের কাজকর্মে নজর রাখবে, তা নিয়ে চর্চা তীব্র।

আধিকারিকদের একাংশের দাবি, বিভিন্ন সময়ে নানা দফতরের কাজ এবং প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সরাসরি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সংশোধনের বার্তাও দিচ্ছেন নিয়মিত ভাবে। ফলে এ ধরনের কেন্দ্রীভূত নজরদারি শাখা তৈরি হলে, কাজের গতি বাড়বে। কিন্তু তেমনই প্রকল্প বা কাজের অগ্রগতির জন্য একাধিক পদ্ধতি হাতে থাকার পরেও এই পদক্ষেপের নেপথ্যে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সমান্তরাল ভাবে আরও একটি শাখা সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না আধিকারিকদের অনেকে। এটি গঠনের পিছনে কোনও উপদেষ্টা সংস্থার মতামত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি কাজকর্মের গতিপ্রকৃতি ওই পরামর্শদাতা সংস্থার নখদর্পণে রাখতেই কি এই বন্দোবস্ত?

দীর্ঘ ভোটপর্বের পরে ২৬ জুন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আনেনি নবান্ন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই বৈঠকেই পঞ্চায়েত দফতরের তরফে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। শুধুমাত্র ইউনিটটির জন্যই বেশ কিছু আধিকারিককে বেছে নেওয়া হবে। পুরো বিষয়টি থাকার কথা পঞ্চায়েত সচিব পি উলাগানাথনের নিয়ন্ত্রণে। অভিজ্ঞ আধিকারিকদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এমন প্রকল্প বা কর্মসূচির অগ্রগতি খতিয়ে দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রীই অতীতে চালু করেছিলেন সমন্বয় পোর্টাল। যার মাধ্যমে দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে প্রতিটি প্রকল্পের সামনের বাধা দূর করার কাজ হয়। মুখ্যসচিব তার দায়িত্বে।

প্রশাসনের অন্যতম এক শীর্ষকর্তা বলেন, “প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে বিভিন্ন দফতরের কাজের গতি এবং প্রকল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার প্রস্তাব দিয়েছিল পঞ্চায়েত দফতরই। শুরুতে তার ছোট একটি কাঠামো থাকবে। পরে দরকার মতো লোকবল বাড়ানো হবে।” মন্ত্রিসভার এক সদস্যও জানান, কোন দফতরের কাজের গতি শ্লথ, কোথায় সংশোধন দরকার, পরিস্থিতি অনুযায়ী কোন প্রকল্পে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন—এই সবই মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবে ওই ইউনিট। এর পরে মুখ্যমন্ত্রীই বাকি সিদ্ধান্ত নেবেন। মন্ত্রিসভার অপর এক সদস্যের কথায়, “এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কোন কোন দফতরকে কী ভাবে এর আওতায় আনা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।”

আধিকারিকদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, বিভিন্ন দফতরের অধীনে বহু ধরনের প্রকল্পের কাজ হয়ে থাকে। প্রকল্পগুলি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চলার কারণে কেন্দ্রীয় ভাবে সেগুলির উপরে নজর রাখা কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে। ফলে প্রায় প্রতিটি প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাভিত্তিক ভাবে এমন অনেক প্রকল্প ধরা পড়ে, যেগুলির অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। সম্ভবত সেই সমস্যা সমাধানেই এই সিদ্ধান্ত।

তবে প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, সমন্বয় পোর্টাল ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী নিজের দফতরে মানুষের চাহিদা বা অভিযোগ জানানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। দফতরগুলির নিজস্ব প্রকল্প নজরদারির শাখা থাকে। মুখ্যমন্ত্রী যখন জেলায় গিয়ে বা কেন্দ্রীয় ভাবে প্রশাসনিক বৈঠক করেন, তখনও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের থেকে প্রতিটি কাজকর্মের তথ্য এবং অগ্রগতি সংগ্রহ করা হয়। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তকে চেপে ধরেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেও লোকসভা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এমন ইউনিট গঠনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত দফতরের ক্ষমতাবৃদ্ধিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal government Nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy