—প্রতীকী চিত্র।
তুই তো মেয়ে! তুই কেন ছোট করে চুল কাটবি, ছেলেদের মতো জামা-প্যান্ট পরবি? এতেই তো যত গন্ডগোল! — কোনও একটি জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি বা শিশুকল্যাণ সমিতির শুনানিতে এমন কথাই শুনতে হয়েছিল নিজের জন্মগত লিঙ্গপরিচয় নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা জনৈক কিশোর বয়সিকে। সে শরীরে মেয়ে, কিন্তু মনের দিক দিয়ে পুরুষ, অর্থাৎ এক জন রূপান্তরকামী পুরুষ (ট্রান্সম্যান)। এটা বুঝতেই হিমশিম খেয়েছিলেন শিশুকল্যাণ সমিতির সদস্যেরা।
লিঙ্গগত পরিচয় বা নারীমন, পুরুষমন নিয়ে নানা ধরনের গোঁড়ামি বা ভুল ধারণা কী ভাবে পুলিশ, প্রশাসন থেকে সংবাদমাধ্যমে ছেয়ে আছে, তা বোঝাতেই বুধবার একটি কর্মশালার ডাক দিয়েছিল রাজ্য শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশন। কলকাতা পুলিশ, রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও তাতে অংশ নেন। লিঙ্গগত পরিচয় নিয়ে ভুল ধারণা থেকে চারপাশে নানা ধরনের লিঙ্গবৈষম্যের প্রকট উপস্থিতি উঠে এল সেই আলোচনায়। এ দিন কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় বলছিলেন, “সরকারি কর্তা, স্কুলের শিক্ষক, সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে লিঙ্গবৈষম্য রুখতে কর্মশালা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতার পরে হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও এমন কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
কর্মশালাটিতে মূল বক্তা হিসাবে সমাজকর্মী দীপ পুরকায়স্থই প্রধানত লিঙ্গবৈষম্যের নানা দগদগে প্রমাণ খুঁজে আনছিলেন। তিনি বোঝালেন, “ব্যক্তির লিঙ্গগত পরিচয় (জেন্ডার) কখনওই জন্মানোর সময়ে ঠিক করা থাকে না। জন্মগত এবং প্রকৃত লিঙ্গগত পরিচয় এক নয়। ব্যক্তির লিঙ্গগত পরিচয় পাল্টাতে পারে। এটা না বুঝেই কিশোর বয়সিদের উপরেও অত্যাচার ঘটে।” কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, “কমিশনে অনেক দিন ধরেই আমরা সব কিছু ছেলে কিংবা মেয়ে পরিচয়ের আতশকাচ দিয়ে দেখার প্রবণতা বা বাইনারি সর্বস্বতা ভাঙার চেষ্টা করছি। মেয়ে বা ছেলে বলতে তার মধ্যে শুধু জন্মগত ছেলে, মেয়েরাই পড়েন না। প্রশাসন বা সংবাদমাধ্যমের সামনেও এই দৃষ্টিকোণ তুলে ধরা উচিত।”
লিঙ্গবৈষম্য সমাজের নানা স্তরেই বহাল। তা বোঝাতে ইন্ডিয়া হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সমীক্ষার সাম্প্রতিক ছবি মেলে ধরা হল। এ দেশের অনেক মেয়েই জনপরিসর বা বাসে, ট্রেনে নিরাপদ বোধ করেন না। তাই কাজের ক্ষেত্রে মেয়েদের উপস্থিতি এখনও নগণ্য। দীপ বললেন, “ছেলেদের বিষয়েও ‘মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা’ ধরনের কিছু ভাবার প্রবণতা গোলমেলে। নিজের কষ্টটা বলতে না পেরেও অনেকে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়েন!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy