শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
শুধু জীবনের গভীর অনুভূতি নয়, তাঁর কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রতিবাদও। শেষ দিনগুলিতে সেই বাকশক্তিই ক্রমশ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে শেষ যে দিন ফোনে কথা হয়েছিল সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের, সেদিন কবির মুখে ‘ভাল আছি’ টুকুও ছিল অস্পষ্ট। শীর্ষেন্দু জানিয়েছেন, অনেক কষ্ট করে দু’চারটি শব্দ যা-ও বা বলতেন, তা স্পষ্ট বোঝা যেত না। কিন্তু মনোবল ছিল অটুট।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নোভেল করোনার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে বুধবার প্রয়াত হন শঙ্খ ঘোষ। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কবির শেষ দিনগুলির কথা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরলেন শীর্ষেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেই ফোন করেছিলাম শঙ্খদাকে। নিজে ফোন ধরতে পারতেন না। সেমন্তী বলল, ‘বাবার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেব। আপনি ওঁর কথা বুঝতে পারবেন না’। ফোন দেওয়া হল। জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন, বললেন, ভাল। কিন্তু সেটা স্পষ্ট ভাবে বোঝাই গেল না। শুনেছিলাম, ওঁর শরীর বিকল হয়েছে। বাকশক্তি আগের মতো স্পষ্ট নেই। শুধু দু’টো জিনিস সতেজ ছিল, তা হল স্মৃতিশক্তি এবং মনোবল, যা এই বয়সেও ১০০ শতাংশ অটুট ছিল।’’
শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে যে যন্ত্রণা বোধ করছেন, তা কৃষ্ণগহ্বরে সব কিছু মিলিয়ে যাওয়ার চেয়ে কোনও অংশে কম নয় বলে মন্তব্য করেন শীর্ষেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘অত্যন্ত ভারাক্রান্ত বোধ করছি। এই কৃষ্ণগহ্বর সহ্য করতে পারছি না। বহু দিন ধরে দেখছি মানুষটিকে। যুবক বয়স থেকে চিনি, শান্ত, স্থিতধী, কখনও মেজাজ গরম করতেন না। হাসির কথা শুনলেই খিলখিল করে হেসে উঠতেন। তবে নিজে বরাবরই কম কথা বলতেন। এত পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু কখনও অহঙ্কার ওঁকে স্পর্শ করেনি। শঙ্খদাকে শুধু কবি বললে ব্যাপারটা একপেশে হয়ে যায়। তিনি আসলে সাহিত্যের অভিভাবক। সত্যিকারের অভিভাবক সবাই হতে পারে না, এক বার দেখলাম, জুনিয়র এক কবির কবিতা সংশোধন করছেন। এত বড় মাপের কবির কি এটা কাজ? কী দরকার ওঁর? কিন্তু ওই যে! দায়িত্ববোধ আর স্নেহ।’’
নিজে খ্যাতনামা কবি হলেও, বাড়ি গেলে সবার সঙ্গেই শঙ্খ ঘোষ দেখা করতেন বলেও জানিয়েছেন শীর্ষেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘ছুটির দিনে ওঁর বাড়িতে ভিড় করতেন তরুণ কবি ও সাহিত্যিকরা। সময় করে প্রত্যেকের সঙ্গেই কথা বলতেন উনি। এমন স্নেহশীল, প্রশ্রয়দাতা বড় একটা দেখা যায় না। খুব হৃদয়বান মানুষ। যখনই দেখা হয়েছে, মন ভাল হয়ে গিয়েছে। এই বয়সে করোনা হয়েছে শুনে শঙ্কিত হয়েছিলাম। শরীর এমনিতেই ভাল ছিল না ওঁর। ফুসফুসের একটা রোগও ছিল। তাই দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তার পরেও আজকের খবরে আমি স্তব্ধ। মনে হচ্ছে মাথার উপর থেকে গাছের ছায়া সরে গেল। ওঁর থাকা না থাকার মধ্যে যে কী পার্থক্য, তা বোধ হতে শুরু করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy