জখম সুদর্শন সর্দার।
হাসপাতালে গল্প-বাঘের আসর। রোগীরাই শ্রোতা।
বিছানায় শুয়ে গল্প বলছেন সুদর্শন, ‘‘....... হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল একটা বাঘ। নৌকার পাটাতনে একদম আমার বুকে উপরে। লাফিয়ে পড়া বাঘের মুখটা চেপে ধরে আছি। আর সমানে থাবা চালাচ্ছে বাঘ।’’
ডান দিকের গালে দু’-তিন জায়গায় গভীর ক্ষত। গলার কাছে ক্ষতের যা গভীরতা, যে-কোনও বাচ্চার কড়ে আঙুলের খানিকটা ঢুকে যেতে পারে। কোমরে আর হাঁটুর তলার দিকেও চোট। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ (সিএনএমসি) হাসপাতালে শয্যাশায়ী, বাঘের সঙ্গে লড়াই করে কোনও মতে ফিরে আসা গোসাবার সুদর্শন সর্দার বলেন, ‘‘যা দেখেছি, জীবনে ভুলব না। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ফিরে সকলকে বাঘের সঙ্গে আমার লড়াইয়ের গল্প বলতে চাই।’’
পেশায় মৎস্যজীবী, বছর একত্রিশের সুদর্শনের বাড়ি গোসাবার সোনাগাঁ গ্রামে। বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। স্ত্রী ছাড়াও বছর সাতেকের ছেলে রয়েছে। ভগ্নিপতি এবং অন্য তিন বন্ধুর সঙ্গে গত সোমবার সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। আগে কয়েক বার বাঘের দেখা মিললেও কখনওই ভাবতে পারেননি যে, সাক্ষাৎ দক্ষিণরায়ের সঙ্গে লড়াই হবে তাঁর। শয্যাশায়ী সুদর্শন বললেন, ‘‘এক-এক বার জঙ্গলে গিয়ে দশ-বারো দিন থাকি আমরা। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা নাগাদ আমরা ঝিলা ৫ নম্বর জঙ্গল লাগোয়া হরিখালি খাঁড়িতে মাছ ধরছিলাম। আমাদের নৌকা জলের মধ্যে বেশ কয়েক হাত ভিতরে ছিল। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘটা।’’ সেই ধাক্কায় নৌকার উপরের অংশ ভেঙে খোলের মধ্যে পড়ে যান সুদর্শনের ভগ্নিপতি উত্তম রায়-সহ বাকিরা।
মুখে তখনও আতঙ্ক মাখামাখি। শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট চেটে নিয়ে সুদর্শন বলেন, ‘‘কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিছুতেই বাঘকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এই সময়েই উত্তম এবং বাকিরা বৈঠা আর লাঠি দিয়ে বাঘটাকে মারতে শুরু করে। শেষে কাঁকড়া ধরার শিক দিয়ে বাঘটাকে আঘাত করতেই সে ঝাঁপিয়ে পড়ে জঙ্গলের দিকে দৌড় দেয়।’’ তত ক্ষণে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে রক্ত মেখে ঘেমে চেতনা হারিয়েছেন সুদর্শন। ‘‘এর পরে আমার আর কিছু মনে নেই...,’’ বললেন সুদর্শন।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘মারাত্মক সাহস। বাঘের সঙ্গে লড়ে বেঁচে ফেরা এমন লোক আগে দেখিনি। গালের ডান দিকের হাড় ভেঙে গিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হবে। অন্য বিভাগের চিকিৎসকদেরও পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। তবে রোগীর মনের জোর মারাত্মক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy