বরুণ বিশ্বাস। ফাইল চিত্র।
বরুণের আবক্ষ মূর্তিতে ফুল ছড়িয়ে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন বৃদ্ধা পার্বতী বিশ্বাস। বললেন, ‘‘খুনিদের সাজা একদিন হবে। তবে সে দিন হয় তো আমি আর পৃথিবীতে থাকব না।’’
গ্রামের ছেলে বরুণকে ছোট থেকে চিনতেন পার্বতী। বরুণের মৃত্যুর পরে কেটে গেল দশটা বছর। এখনও সাজা পেল না উত্তর ২৪ পরগনার সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসের হত্যাকারীরা। যা নিয়ে মঙ্গলবার, তাঁর মৃত্যুদিনে হতাশা-ক্ষোভ জানালেন পার্বতীরমতো অনেকে।
এ দিন সকালে সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের পক্ষ থেকে বরুণের বাড়ির কাছে আয়োজন হয়েছিল স্মরণসভার। জনা কুড়ি মানুষ এসেছিলেন। তা হলে কী বরুণকে ভুলতে বসেছে সুটিয়া? বরুণের দেহ ছুঁয়ে দশ বছর আগে যে হাজার হাজার মানুষ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, হত্যাকারীদের সাজা না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের লড়াই চলবে— তাঁরা তবে গেলেন কোথায়? সে দিন ভিড় থেকে আওয়াজ উঠেছিল, ‘প্রতিবাদীর মৃত্যু হতে পারে। প্রতিবাদের নয়।’
সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘আমরা ১৩ জুলাই বরুণ-স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। সেখানে গরিব ছেলেমেয়েদের শিক্ষাসামগ্রী এবং গরিব মানুষের মধ্যে বস্ত্র বিলি করা হবে। আশা করছি, সেখানে অনেক মানুষ আসবেন। ওই অনুষ্ঠানের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে বুঝেছি, বরুণকে ভোলেননি এখানকার মানুষ।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বরুণকে সরাসরি যারা খুন করেছিল, তারা গ্রেফতার হয়েছে। আমরা আশাবাদী, তারা সাজাও পাবে। তবে খুনের পিছনে কারা ছিল, সে রহস্য উন্মোচিত হয়নি।’’
২০০০ সাল নাগাদ গাইঘাটার সুটিয়ায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বহু মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় মানুষজন এককাট্টা হয়ে রুখে দাঁড়ান। তৈরি হয় ‘প্রতিবাদী মঞ্চ।’ তারই অন্যতম সদস্য ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউটশনের শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। ২০১২ সালের ৫ জুলাই গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করে তাঁকে।
রাজ্য পুলিশ ও জিআরপি গ্রেফতার করে ৬ জনকে। তদন্তভার নেয় সিআইডি। গণধর্ষণ মামলায় আগেই ধরা পড়েছিল সুশান্ত চৌধুরী। জানা যায়, দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসে বরুণকে খুনে ছক কষেছিল সে-ই। সুশান্ত-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা হয় বনগাঁ আদালতে। পরে জেলেই মারা যায় সুশান্ত। মামলা এখনও বনগাঁ আদালতে বিচারাধীন। এক নাবালক অপরাধীর সাজা হয়েছে জুভেনাইল আদালতে। দু’জন এখনও ফেরার।
বরুণের দিদি প্রমীলা রায় এ দিন বলেন, ‘‘এই সরকার আমাদের বিচার দেবে না। তবে ভাল মানুষ এখনও আছেন। তাঁরাই বরুণের বিচার আদায় করে নেবেন।’’
বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী অসীমকুমার দে বলেন, ‘‘মামলাটি ফাস্ট ট্র্যাক-১ আদালতে চলছে। করোনা পরিস্থিতি এবং মামলায় সরকারি আইনজীবী না থাকায় শুনানিতে দেরি হয়েছে। আমরা সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করে দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।’’
৫ জুলাই, প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের মৃত্যুদিন রাজ্যজুড়ে পালন করে এআইডিএসও। কলকাতার বিভিন্ন স্কুল, কলেজের পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসেও সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল এই উপলক্ষে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy