সার্ভিস রিভলভার নয়, দেশি পিস্তল থেকে চালানো গুলিতে বুধবার চণ্ডীতলা থানার আইসি জয়ন্ত পাল আহত হন বলে প্রাথমিক তদন্তে দাবি করল পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে, ঘটনাস্থল থেকে আধ কিলোমিটার দূরে দালালপুকুরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে একটি দেশি পিস্তল উদ্ধার করে বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা। সেটিই বুধবার জয়ন্ত ব্যবহার করে ওই জমিতে ফেলে দেন বলে তাঁরা মনে করছেন। নিশ্চিত হতে আগ্নেয়াস্ত্রটির ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করা হবে বলে ঠিক হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, গুলি চলার ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন চিকিৎসাধীন ওই পুলিশকর্তা। কখনও বলছেন, কেউ গুলি করেছে। কখনও আবার বলছেন, আচমকা গুলি বেরিয়ে গিয়েছে। অথচ, জয়ন্তের সঙ্গীরা ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছেন, তিনি নিজেই নিজের হাতে গুলি করেছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তিনি নিজেই, না কি তাঁর চার সঙ্গী ওই দেশি পিস্তলটি গাড়ি থেকে ফেলেছিলেন, তা জানতে সকলকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তদন্তকারীরা জানান।
তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনার দিন, অর্থাৎ, বুধবারই ঘটনাস্থল থেকে ৭ এমএম পিস্তলের একটি গুলির খোল উদ্ধার করেছিল, যা পুলিশের সার্ভিস রিভলভারে থাকার কথা নয়। প্রশ্ন ওঠে, এক পুলিশকর্তা কী ভাবে দেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরছিলেন? বিশেষত, নিজের থানা এলাকা ছেড়ে পাশের জেলার অন্য থানা এলাকায় তিনি যখন আসছেন, তখন ওই ‘বেআইনি’ আগ্নেয়াস্ত্র তিনি সঙ্গে রাখলেন কী ভাবে?
বুধবার রাতে সাড়ে ১২টা নাগাদ মধ্য হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোডে গৌড়ীয় মঠের উল্টো দিকে একটি গলিতে গুলিবিদ্ধ হন জয়ন্ত। পুলিশ জানিয়েছে, সে দিন স্থানীয় যে যুবকেরা ওই পুলিশকর্তাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে পাঠাতে সাহায্য করেছিলেন, তাঁরা গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করায় পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
প্রশ্ন, ওই পুলিশকর্তা আচমকা গুলি চালালেন কেন?
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, বুধবার রাতে নেতাজি সুভাষ রোডে গাড়ি রেখে চণ্ডীতলা থানার আইসি যখন গৌড়ীয় মঠের কাছে ওই গলিতে আসেন, তখন তিনি পুরোপুরি মত্ত অবস্থায় ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ওই গলিতে থাকেন তাঁর সঙ্গিনী। গলিতে সঙ্গিনীর ফ্ল্যাটের নীচে দাঁড়িয়েই দু’জনের বচসা হয়। কেন তিনি ফোন করলে সঙ্গিনী ধরেননি, এই নিয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ওই পুলিশকর্তা। তখনই সম্ভবত সঙ্গিনীকে ভয় দেখাতে তিনি আচমকা নিজের হাতে গুলি চালিয়ে দেন।
তদন্তে শুক্রবার সন্ধ্যায় চণ্ডীতলা থানায় আসেন হুগলি গ্রামীণ পুলিশের তথ্য অনুসন্ধানী দলের চার সদস্য। থানার পুলিশকর্মীদের একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারই জয়ন্তকে সরিয়ে চণ্ডীতলা থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সার্কেল ইনস্পেক্টর (চণ্ডীতলা) সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়কে। হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলে এসপি-র কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।’’
আন্দুল রোডের যে বেসরকারি হাসপাতালে জয়ন্ত চিকিৎসাধীন, সেই হাসপাতালের ফেসিলিটি ডিরেক্টর তপানি ঘোষ জানান, ওই পুলিশকর্তার বাঁ হাতের উপরের অংশে গুলি লেগেছিল। সেটি বার করা হয়েছে। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। শীঘ্রই ছেড়ে দেওয়া হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)