প্রতীকী ছবি
করোনা শুধু বাংলা বা ভারত নয়, সারা বিশ্বের জীবনধারা বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। রেহাই নেই সর্বস্তরের শিক্ষারও। লকডাউন বা গৃহবন্দিদশার ৫০ দিনে রাজ্যে শিক্ষার পরিস্থিতি একেবারে ওলটপালট হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে শিক্ষা শিবির।
উচ্চ মাধ্যমিক-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা মাঝখানে থেমে গিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যে ঘরে বসে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন, তারও উপায় নেই। কারণ, তাঁদের হাতে অনেক বই-ই নেই। অনলাইনে কিছু কিছু ক্লাস হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু রাজ্যের সব প্রান্তে সুফল মিলছে না। কেননা গ্রাম এবং প্রত্যন্ত এলাকার অসংখ্য পড়ুয়ার কাছেই সাইবার প্রযুক্তির আশীর্বাদ পৌঁছয়নি। সব মিলিয়ে এই লকডাউন শিক্ষায় ‘বিশাল ধাক্কা’ বলে মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।
শিক্ষামন্ত্রীর মতে, “পুরো ছবিটাই আচমকা বদলে গিয়েছে। এর জন্য ন্যূনতম সময় পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।” মন্ত্রী জানান, লকডাউনে পঠনপাঠন নষ্ট তো হচ্ছেই। পড়ুয়ারা সময়মতো পরীক্ষার পরে সার্টিফিকেট না-পেলে তাঁদের চাকরি পেতেও অসুবিধা হবে। মন্দার যে-পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তারও প্রভাব পড়বে শিক্ষায়।
করোনার চোখরাঙানিতে স্থগিত উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষাগুলি কবে হবে, তার ঠিক নেই। কারণ, লকডাউন আরও কত দিন চলবে, কেউ তা জানেন না। তবে অনলাইনে পঠনপাঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেছে এই লকডাউন। অনলাইন শিক্ষার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই প্রশ্নও উঠছে যে, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক কতটা সফল? ক’জন ছাত্রছাত্রী এই শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন?
শিক্ষা শিবিরের একাংশের মতে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পঠনপাঠন চালু হলেও তার সাফল্য পুরোপুরি মেলেনি। এবং এখানেও বিভেদ সেই গ্রাম ও শহর এবং ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (কুটা) সমীক্ষায় দেখেছে, অনলাইন পাঠের সুফল পচ্ছেন মাত্র ১৫% ছাত্রছাত্রী। শিক্ষামন্ত্রীও মানছেন, অনলাইন শিক্ষার প্রসাদ সকলের কাছে পৌঁছয়নি। তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি সার্বিক ভাবে। অনলাইন শিক্ষা, টিভিতে লাইভ ক্লাসরুম শিক্ষা— সরকারের তরফে সব রকম চেষ্টাই হয়েছে। কিন্তু হয়তো দেখা যাবে, খুব বেশি ছেলেমেয়ে, বিশেষ করে গ্রামের দিকে যারা থাকে, তারা এই সুযোগ পায়নি। ক্লাসরুম শিক্ষার অভাব রয়েই গেল। অনলাইন শিক্ষায় প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসও তো হয় না। ১৩০ কোটির দেশে অনলাইন ক্লাসের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।”
নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির (এবিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, “গ্রামের পড়ুয়ারা অনলাইন শিক্ষার সুযোগ পায়নি। অনেকেরই ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন নেই। এবং অনেক জায়গাতেই নেই দ্রুত লয়ের ইন্টারনেট পরিষেবা।”
শিক্ষাজগতের পর্যবেক্ষণ, এই লকডাউন বুঝিয়ে দিয়েছে, এমন পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে অনলাইন-পাঠ চালানো যেতে পারে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন শিক্ষার সার্বিক নীতি ও পরিকাঠামো তৈরি করুক, কুটা এটাই চায় বলে জানান সংগঠনের সভাপতি পার্থিব বসু। অনলাইন-পাঠ সে-ভাবে সফল না-হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রম শেষ না-করেই কি পরীক্ষা নেওয়া হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কলেজের অধ্যক্ষদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, বি-কম চূড়ান্ত সিমেস্টারের পাঠ্যক্রম কতটা বাকি, অনলাইনে পঠনপাঠন কতটা সফল হয়েছে?
ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসে এসে পরীক্ষা দিতে না-পারলে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টিতে এনআইটি দুর্গাপুরের চূড়ান্ত পরীক্ষার মডেল অনুসরণ করার কথা ভাবছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। মিড টার্ম পরীক্ষা, আগের সিমেস্টারে প্রাপ্ত নম্বর, অনলাইন অ্যাসাইনমেন্ট, ল্যাবরেটরি অ্যাসাইনমেন্ট এবং ফাইনাল প্রজেক্ট লকডাউনের আগে যতটা হয়েছে, তার উপরেই নম্বর দেওয়া, মৌখিক পরীক্ষা ভিডিয়ো কল বা ফোনে করা— এই ভাবে শেষ সিমেস্টারের মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে ওই মডেলে।
আরও পড়ুন: প্রান্তিকদের জন্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy