—ফাইল চিত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ইডি যা যা নথি চেয়েছিল, তা তাঁকে জমা দিতে হবে। আর সেই নথি জমা দিতে হবে আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যেই। কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছে, অভিষেককে একটি ঘণ্টাও অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে না। তবে একই সঙ্গে ইডিকে আদালত বলেছে, নথিতে সন্তুষ্ট না হলে তারা আবার অভিষেককে ডেকে পাঠাতে পারবে। কিন্তু তলব করার আগে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে অভিষেককে।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন অভিষেক। সেই মামলারই শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে চলে শুনানি। শেষে রায়দান স্থগিত রাখলেও মৌখিক ভাবে কিছু পর্যবেক্ষণের কথা জানায় দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
বেঞ্চ বলে, ‘‘আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে অভিষেককে সব নথি ইডির কাছে দিতে হবে। কোনও নথি জমা দিতে না পারলে ইডির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু আদালত অভিষেককে এক ঘণ্টাও অতিরিক্ত সময় দেবে না। অভিষেকের জমা দেওয়া নথিতে সন্তুষ্ট না হলে তাঁকে হাজিরা দিতে বলতে পারে ইডি। তবে সমন পাঠাতে হলে পুজোর আগে অর্থাৎ ১৯ অক্টোবরের আগে বা পুজোর পরে অর্থাৎ ২৬ অক্টোবরের পরে পাঠাতে হবে।’’
উল্লেখ্য, অভিষেককে গত মঙ্গলবার ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। পরে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সিংহের একক বেঞ্চও বলেছিল মঙ্গলবার তদন্ত প্রক্রিয়া যাতে ব্যাহত না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। অভিষেক অবশ্য নির্দিষ্ট দিনে শেষপর্যন্ত ইডির দফতরে যাননি। বদলে তিনি সিঙ্গল বেঞ্চের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যান। অভিষেক আদালতকে বলেছিলেন, বেঞ্চ ওই নির্দেশ দিতে পারে না। বুধবার অভিষেকের সেই আবেদনের শুনানি হয় ডিভিশন বেঞ্চে। বুধবার ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ না দিলেও একটি প্রস্তাব রাখে ইডির কাছে। পাশাপাশি, অভিষেক কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়। আদালত বলে বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে ইডির মতামত কী, তা জানাতে হবে আদালতকে। বৃহস্পতিবার ইডির বক্তব্য শোনার পরই মামলাটির শুনানি শেষ হয় ডিভিশন বেঞ্চে।
আদালত যে পরামর্শ এবং প্রস্তাব দিয়েছিল
বুধবার অভিষেকের আইনজীবীকে বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, ‘‘আপনি (অভিষেক) তদন্তকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করুন। যে নথি চাওয়া হয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তথ্য দেওয়া উচিত। ১২ অক্টোবর ইডির দফতরে সব নথি নিয়ে যান।’’
অন্য দিকে, ইডির আইনজীবীকে বিচারপতি প্রস্তাব দেন, ‘‘যা যা নথি চাওয়া হয়েছে, তা দেওয়া হবে। তাতে সন্তুষ্ট না হলে তদন্তের প্রয়োজনে অভিষেককে তলব করতে পারবে ইডি। ১২ অক্টোবর অভিষেক নথি দেবেন ইডিকে। সব নথি খতিয়ে দেখে পুজোর পরে নয় নতুন করে সমন পাঠাবে ইডি।’’
সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ নয়
সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে অভিষেকের যুক্তি ছিল, বেঞ্চ তাঁকে মামলায় না জুড়েই এমন নির্দেশ দিচ্ছে, যা সরাসরি তাঁর স্বার্থকে প্রভাবিত করবে। অভিষেকের আইনজীবীর যুক্তি ছিল সিঙ্গল বেঞ্চ এটা করতে পারে না। কিন্তু অভিষেকের সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বরং পাল্টা যুক্তি দিয়ে বিচারপতি সেন বলেন, ‘‘মাথায় রাখবেন, এটা কোনও সরাসরি তদন্ত নয়। কোর্টের নজিরদারিতে তদন্ত চলছে। তাই সিঙ্গল বেঞ্চ এটা করতে পারে। তদন্তের প্রয়োজনে তদন্তকারী সংস্থার কাছে জবাব চাইতেই পারে সিঙ্গল বেঞ্চ। এমনকি, কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চললে আদালত যদি তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হয়, তবে নতুন নির্দেশও দিতে পারেন বিচারপতি।’’ এই যুক্তিতেই ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি। বরং জানিয়ে দেয়, তারা সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়ার কথা এখনই ভাবছে না।
আগে যা হয়েছিল
নিয়োগ মামলায় হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক। ইডির হাজিরা এড়াতে চেয়ে এবং সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের ব্যাখ্যা চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছিল হাই কোর্ট। বুধবার সেই মামলার শুনানি হয় হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। বুধবার হাই কোর্ট কোনও নির্দেশ না দিলেও ইডিকে একটি প্রস্তাব দিয়ে বলে, বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে তাদের মতামত জানাতে।
নিয়োগ মামলায় অভিষেকের সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের সম্পত্তির হিসাব চেয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। তিনি অভিষেকের মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির হিসাবও দেখতে চেয়েছিলেন। লতা ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর। এর পর অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও এক বার তলব করে ইডি। তাঁর মা এবং বাবাকেও তলব করা হয়। দিল্লিতে তৃণমূলের পূর্বনির্ধারিত ধর্না কর্মসূচির দিনেই অভিষেককে ডাকা হয়। তাই অভিষেক জানিয়ে দেন, তিনি ইডির তলবে সাড়া দিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে যাবেন না। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে বিচারপতির সিংহের দেওয়া নির্দেশকেও চ্যালেঞ্জ করেন তিনি।
বিচারপতি সিংহ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ৩ অক্টোবরের তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনও ব্যাঘাত যাতে না হয়, তা ইডিকে নিশ্চিত করতে হবে। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক তাঁর আবেদনে পাল্টা দাবি করেন, তাঁকে মামলায় যুক্ত না করে এবং তাঁর মতামত না শুনেই বিচারপতি ওই নির্দেশ দিয়েছেন, যা সরাসরি তাঁর স্বার্থকে প্রভাবিত করে। তদন্তকারী সংস্থার পদক্ষেপ হাই কোর্ট কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেই প্রশ্নও তোলেন অভিষেক। সেই মামলার শুনানি হয় বুধবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy