—প্রতীকী চিত্র।
আদালতের মেঝেতে লুটিয়ে, কলকাতা হাই কোর্ট থেকে বাড়ি ফিরে, রাতে সিআইডি-র সঙ্গে কথা বলার পরে শনিবার সকাল থেকে নতুন করে লড়াইয়ে নামল কামদুনি। এ বারের লড়াই, ‘দিল্লি চলো’। তবে কারও সঙ্গে নয়। নিজেরা। বললেন নির্যাতিতার দাদা।
কামদুনিতে দশ বছর আগে গণধর্ষিত হয়ে খুন হন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। শুক্রবার সেই খুন-ধর্ষণের মামলার রায় দিয়েছে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তাতে নিম্ন আদালতের ফাঁসির রায় সব ক্ষেত্রেই বদলে গিয়েছে যাবজ্জীবন এবং মেয়াদি কারাদণ্ডে। যা প্রবল ভাবে ধাক্কা দিয়েছে মৃতার বাবা, মা, দাদা, ভাইকে। ধাক্কা দিয়েছে গোটা কামদুনিকেই, যাঁরা এত দিন একসঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মৃতার ভাই শনিবার বলেন, ‘‘বারাসত কোর্টের রায়, নগর দায়রা কোর্টের রায় যদি হাই কোর্টে বদলে যায়, তা হলে দিদির মৃত্যুর বিচার চাইতে সুপ্রিম কোর্টে যাব না কেন?’’ ‘যাব’, বলছেন মৃতার মা-ও।
কিসের ভিত্তিতে বদলে যায় রায়, প্রশ্ন উঠেছে কামদুনিতে। কেন মৃতার ভাইকে বাদ দিয়ে পরিবারের অন্যদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি নিম্ন আদালতে মামলা চলাকালীন, উঠেছে সে প্রশ্নও। এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা বা আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ। মৃতার সহপাঠী টুম্পা কয়াল বলেন, ‘‘এত দিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। শেষে এক জনের ফাঁসির সাজা হওয়ার পরেও সে ছাড়া পেয়ে যাবে! আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব।’’ মৃতার পরিবারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন কামদুনি আন্দোলনের মুখ মৌসুমী কয়ালও। তাঁরও প্রশ্ন, ‘‘দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডে দোষীদের তো ফাঁসি হয়েছে, কামদুনির নৃশংসতা তার চেয়ে কম কিসে!’’
হাই কোর্টের আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন বলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে আমি বলে আসছি, এই ঘটনার তদন্ত, চার্জশিট এমনকি ময়না-তদন্ত রিপোর্টও ঠিক মতো তুলে ধরা হয়নি। সবাইকে সাক্ষ্যে ডাকা হয়নি। বার বার আদালত বদল হয়েছে। সরকারি কৌঁসুলিও বদল হয়েছে। প্রচুর গাফিলতি রয়েছে।’’
ঘটনার পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরিত্যক্ত কারখানাটির একটি ঘর থেকে মৃতার দেহ সরিয়ে এনে জলা জমিতে ফেলে দেওয়া হয় বলে দাবি। সেখান থেকেই পরে দেহটি উদ্ধার করা হয়। কলেজ থেকে দিদি ফিরছে না দেখে তাঁকে খুঁজতে বার হয়েছিলেন তাঁর ভাই। ভাইয়ের বয়ান থেকে জানা যায়, সেখানে সে দিন তিনি দু’জনকে দেখেছেন। এই দু’জনকেই আদালত সর্বোচ্চ সাজা শুনিয়েছে। হাই কোর্টের এক সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে যে দু’জনকে দেখেছিলেন নির্যাতিতার ভাই, তাঁদের দু’জনকেই আদালত দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজা শুনিয়েছে।’’ এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ড। শুক্রবার দ্বিতীয়টিই দিয়েছে হাই কোর্ট।
এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনার পুলিশি তদন্ত, রিপোর্ট এবং চার্জশিট— সমস্ত দিক বিচার করেই এই রায় দান, মনে করছেন হাই কোর্টের সরকারি কৌঁসুলিরা। ওই সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘আদালতের এই রায়দানের বেশ কয়েকটি দিক রয়েছে। এই মামলার রায়েই তা স্পষ্ট করে বলা রয়েছে।’’ তবে সেই দিকগুলি ঠিক কী, তা আলাদা করে ব্যাখ্যায় যায়নি আইনজীবী মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy