বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
একটি মামলা নিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হল কলকাতা হাই কোর্টে। শুক্রবার সন্ধ্যায় যার জেরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া একটি নির্দেশ আধ ঘণ্টার মধ্যে খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
এই মামলার এক দিকে রয়েছে কলেজ সার্ভিস কমিশন অন্য দিকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তৃতীয় প্রান্তে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। শুক্রবার বিকেলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ দেওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে বিচারপতির নির্দেশ খারিজও করে দিল। একইসঙ্গে বেঞ্চ প্রশ্ন তুলল, ‘‘এই মামলা নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করার কী ছিল? এই মামলা তো জরুরি ভিত্তিতে শোনার তো কথা ছিল না!’’
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মতোই কলেজে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ এনে একটি মামলার শুনানি চলছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। সেই শুনানিতেই শুক্রবার বিকেলে বিচারপতি বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকে নির্দেশ দেন, ‘‘রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান দীপক করকে আদালতে নিয়ে আসুন।’’ কিন্তু আধ ঘণ্টার মধ্যেই হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ খারিজ করে দেয় ওই নির্দেশ।
বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘মামলাটি শুরুতে বিচারপতি গঙ্গেপাধ্যায়ের বেঞ্চে ছিল না। মামলাটি চলছিল বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে। অস্থায়ী বেঞ্চ হিসাবে ওই মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি গঙ্গেপাধ্যায়ের বেঞ্চে পাঠানো হয়েছিল। তাই এ ব্যাপারে বিচারপতি চন্দ যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা-ই বহাল থাকবে।’’
যদিও ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর নির্দেশ খারিজ করার পরও রাত সাড়ে ৮টায় এজলাস বসিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সেখানে তিনি বিশেষ কিছু বলেননি। এজলাসে বসে তিনি ঘোষণা করেন, ‘‘ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ মতো আমি আর শুনানি করছি না।’’ তবে একই সঙ্গে কেন ওই মামলা তিনি শুনেছিলেন তার ব্যাখ্যাও দেন বিচারপতি। এজলাসে বসে তিনি বলেন, ‘‘আমার কোর্টে মামলা এসেছিল বলেই আমি শুনেছিলাম।’’
ঘটনার সূত্রপাত
ঘটনার শুরু কলেজে নিয়োগে অস্বচ্ছতা সংক্রান্ত একটি মামলা থেকে। কলেজে নিয়োগের প্যানেলে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনেছিলেন এক চাকরিপ্রার্থী। তাঁর নাম মেনালিসা ঘোষ। তাঁর অভিযোগ ছিল ২০২০ সালের কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে। ২০২৩ সালে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল প্রকাশিত হয়। কিন্তু শুধু নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রকাশিত হলেও তাতে নম্বর প্রকাশ করা হয় নি। এ ব্যাপারেই আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই চাকরিপ্রার্থী। তাঁর দাবি ছিল, ওই নিয়োগের প্যানেলে প্রার্থীদের নম্বরও প্রকাশ করতে হবে। মামলাকারীর এই আবেদন শোনার পরই কলেজ সার্ভিস কমিশনকে বিচারপতি হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেন, কেন প্যানেলে নম্বর রাখা হয়নি? প্যানেল প্রকাশের নিয়মই কী?
নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ
কিন্তু কমিশন সেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশ না মেনে পাল্টা সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে। মামলা করে ডিভিশন বেঞ্চে। যদিও ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি একক বেঞ্চেই ফেরত পাঠায়। ফলে মামলাটি আবার ফিরে আসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেই।
শুক্রবারের ঘটনাপ্রবাহ
শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল। মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে বিচারপতি কলেজ সার্ভিস কমিশনকে এক ঘণ্টা সময় দিয়ে বলেন, ‘‘বিকেল ৪টে ১৫ মিনিটের মধ্যে ওই বিতর্কিত প্যানেল নিয়ে আসুন। জমা দিন আদালতে।’’ একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, সময়ে প্যানেল আনতে না পারলে কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও কমিশন নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সেই নির্দেশ পালন করেনি।
বিচারপতি এর পর কমিশনকে বাড়তি সময় দেন। তার পরও নির্দেশ পালন করেনি কমিশন। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ সেই সময়সীমাও পেরিয়ে গেলে বিচারপতি কমিশনের চেয়ারম্যান দীপককে আদালতে পেশ করানোর নির্দেশ দেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকে।
রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে দীপককে বিচারপতি এজলাসে আনার নির্দেশ দেওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই বিচারপতির সেই নির্দেশ খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
কেন খারিজ বিচারপতির নির্দেশ?
বিচারপতির নির্দেশ খারিজ করার নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি সেন শুক্রবার সন্ধ্যায় মামলাকারীর আইনজীবীকে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। তা থেকেই স্পষ্ট হয়েছে সেই কারণ।
আইনজীবীর কাছে বিচারপতি সেন জানতে চান, ‘‘কেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন?’’ এর পরেই বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়, ‘‘মামলাটি শুরুতে ছিল বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে। মামলাটি তাঁরই। কিন্তু তাঁর বেঞ্চ দু’ সপ্তাহ ধরে বসছে না। তাই অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। এই মামলায় দ্রুত শুনানির আর্জির প্রয়োজন ছিল না। বিচারপতি চন্দ দ্রুত শুনানির প্রয়োজনীয়তা নেই বলে জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃত ভাবে মামলাকারীর আইনজীবী বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে গিয়েছেন। এটা কিন্তু খুবই খারাপ হয়েছে।’’ এর পরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া নির্দেশ খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy