Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Death of Migrant Workers

পরপর পরিযায়ী-মৃত্যু, আর কবে সক্রিয় হবে পর্ষদ

কয়েক মাস আগে বীরভূমের দু’জন ওড়িশায় মারা যান। তার পর পরেই একই জেলার দু’জন মারা যান মুম্বইয়ের বহুতলে কাজ করার সময়ে।

পরিযায়ী শ্রমিক ইসরাইল শেখের শোকার্ত পরিবার। মুর্শিদাবাদের ফারাক্কায়।

পরিযায়ী শ্রমিক ইসরাইল শেখের শোকার্ত পরিবার। মুর্শিদাবাদের ফারাক্কায়। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০৫
Share: Save:

বীরভূম, মালদহ, মুর্শিদাবাদ...। এ রাজ্য থেকে ভিন্ রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা থামছেই না।

কয়েক মাস আগে বীরভূমের দু’জন ওড়িশায় মারা যান। তার পর পরেই একই জেলার দু’জন মারা যান মুম্বইয়ের বহুতলে কাজ করার সময়ে। সম্প্রতি মিজ়োরামে নির্মীয়মাণ রেলসেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছে মালদহের ২৩ জনের। শুক্রবার মুর্শিদাবাদের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে দিল্লিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে।

পরের পর পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। প্রথমত, শ্রমিকদের রাজ্যে কাজের বন্দোবস্ত নিয়ে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা কী? একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে শ্রমিকদের বাইরের রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বলে একটি অংশের দাবি। সরকার সরাসরি তা মানতে নারাজ। কিন্তু একশো দিনের কাজের বিকল্প কর্মসংস্থান নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভিন্ রাজ্যে যে শ্রমিকেরা যাচ্ছেন, তাঁদের তথ্য রাখার কী ব্যবস্থা করেছে সরকার? সর্বোপরি, করোনার সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই নাবালকেরা পড়া ছেড়ে কাজে বেরিয়েছিল। তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে কি?

ধরা যাক সাহিন আখতারের কথা। কুড়ি বছরের এই তরুণ পড়তেন মালদহের কোকলামারি প্রমীলাবালা হাই স্কুলে। লকডাউনের সময়ে স্কুল বন্ধ ছিল। বাড়িতে আর্থিক অনটন। তখন থেকেই ভিন্ রাজ্যে কাজের খোঁজে বাইরে যাওয়া শুরু তাঁর।

মিজ়োরামে নির্মীয়মাণ রেলসেতু ভেঙে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

দিল্লিতে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ ও ফরাক্কার বাসিন্দা তিন পরিযায়ী শ্রমিক। শুক্রবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান গোকুল মণ্ডল (৪৪), শুভঙ্কর রায় (৩১) এবং ইসরাইল শেখ (৩৩)। শনিবার রাত ১০টা নাগাদ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ধুলিয়ানে যান। সেখানে তিনি শুধু ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন পরিবারের হাতে। এর বাইরে রাজ্যের পরিযায়ী নীতি নিয়ে বিশেষ কিছু বলেননি। রবিবার তিনি মালদহের ইংরেজবাজারে গিয়ে ২৩টি শ্রমিক পরিবারের হাতে সরকারি সাহায্যের চেক তুলে দেন। সেখানেও রাজ্যপাল ও রেলের সমালোচনা ছাড়া বিশেষ কিছু বলেননি। কিন্তু পরিবারগুলি কতটা অসহায় অবস্থায় রয়েছে, সেটা বোঝা যায় মৃত মনিরুলের মা উদিয়া বেগমের কথায়। পরিবারগুলিকে লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ যাবতীয় সহায়তা দেওয়ার পরেও উদিয়া বেগম মন্ত্রীকে বলেন, ‘‘বৌমাকে সরকার কাজ না দিলে পরিবার ভেসে যাবে।’’ মন্ত্রী দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

এই জায়গাটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘বাংলায় উন্নয়ন হচ্ছে কোথায়? কেন এই রাজ্যের লোকেদের পেটের ভাত জোগাড় করতে মিজ়োরাম যেতে হচ্ছে?’’ তিনি এর যাবতীয় দায় মুখ্যমন্ত্রীর উপরে চাপিয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা এর সঙ্গে যোগ করেছেন তথ্য না-থাকার বিষয়টি। তাঁরা মনে করছেন, এটাই পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা। ফলে, ওই শ্রমিকেরা যখন সমস্যায় পড়ছেন, তখন তাঁরা কোথায় রয়েছেন, তাঁদের পরিচয় কী, এই সব ব্যাপারে অন্ধকারে থাকছে প্রশাসন। মৃত্যু হলে সেই খবর পৌঁছতেও সময় লেগে যাচ্ছে প্রশাসনের কাছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ‘নীতিহীনতা’র অভিযোগ উঠছে সেই কারণেই।

এই অভিযোগ সামলাতেই পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদকে পুনর্গঠন করেছে রাজ্য সরকার। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সদ্য রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামকে। তাঁর সংস্থা ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’ কোভিড-কালে পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করতে নানা ভাবে উদ্যোগী হয়েছিল। মালদহে পরিযায়ী-মৃত্যুর পরে তিনি সেখানে গিয়ে পরিজনের সঙ্গে দেখাও করেন। সামিরুল বলেন, ‘‘এত সংখ্যক শ্রমিকের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু এমন ঘটনা তো এই প্রথম নয়, আগেও ঘটেছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘আগে দেহ ফেরাতে যে অসুবিধা হত, এখন বোর্ড গঠনের পরে তা সহজ হয়েছে। সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নানাবিধ প্রকল্পও ঘোষণা করেছে।’’

রাজ্যে কাজ নেই, বিরোধীদের এই দাবির পাল্টা সামিরুল বলেন, ‘‘বীরভূম, মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তরের দু’-একটি জেলা থেকেই মূলত শ্রমিকেরা বাইরে যান।’’ তবে তিনি আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে এ-ও বলেন যে, ‘‘বাইরে যাতে শ্রমিকদের আর কাজে যেতে না হয়, তাঁদের যাতে এ রাজ্যেই কাজের সন্ধান দেওয়া সম্ভব হয়, সেটা দেখছে সরকার ও বোর্ড। নিজে ব্যবসা করতে চাইলে

গ্যারান্টর ছাড়া ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।’’

কিন্তু সে সবের থেকে সুরাহা কত দূর, তা জানেন না শ্রমিকেরাই। সাহিন আখতারের দেহ নিয়ে মিজ়োরাম থেকে গ্রামে ফিরেছিলেন বাবা তৌফিদ আখতার। অন্ত্যেষ্টির পরে ফিরে যাবেন মিজ়োরামের সেই এলাকায়, যেখানে তাঁর থেকে মাত্র ২৫ মিটার দূরে নির্মীয়মাণ সেতু থেকে পরে মারা যান সাহিন। তৌফিদের কথায়, ‘‘না ফিরলে সংসার চলবে কী করে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers West Bengal Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy