কেন্দ্রের আর একটি চিঠি এসে পৌঁছল রাজ্যের হাতে। ফাইল চিত্র।
আইএএস ক্যাডার রুলের সংশোধন করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। তার প্রতিবাদ জানিয়ে অতি সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রায় একই সময়ে কেন্দ্রের আর একটি চিঠি এসে পৌঁছল রাজ্যের হাতে। সূত্রের খবর, বদলির ক্ষেত্রে আরও কড়া পদক্ষেপের উল্লেখ রয়েছে এই চিঠিতে।
নতুন চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজ্যের কোনও অফিসারকে কেন্দ্র অন্য কোনও পদে বদলি করার পরেও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তিনি যদি সেখানে যোগদান না করেন, তা হলে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ়’ করে দেওয়া হবে।
কেন্দ্রের এই নির্দেশ কার্যকর হলে দৈনন্দিন কাজ চালানোর ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতার জায়গাটা ধাক্কা খাবে কি না, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে প্রশাসন মহলে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যে কর্মরত আইএএস অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ শিথিল হলে, দায়বদ্ধতার জায়গাটাও আরও নড়বড়ে হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত রাজ্য। প্রশাসনিক কাজে এর প্রভাব পড়বে কিনা, তা-ও ভাবাচ্ছে সরকারকে। তবে, কেন্দ্রের ডেপুটেশনে যেতে ইচ্ছুক অনেক অফিসারের কাছে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ ইতিবাচক বলে তাঁরাই জানিয়েছেন।
প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, ওই অফিসারের স্ট্যান্ড রিলিজ় হওয়ার অর্থ, সংশ্লিষ্ট পদে তাঁর বেতন বন্ধ হবে। পরবর্তী কালে তাঁর পেনশন পেতেও সমস্যা হবে। অর্থাৎ, সেই অফিসারের চাকরি জীবনই কার্যত প্রশ্নের মুখে পড়বে। সূত্রের খবর, এই চিঠি পেয়ে তারও জবাব তৈরি করছে নবান্ন। প্রশাসনের শীর্ষ মহল মনে করছে, এই নীতি কার্যকর হলে রাজ্য এবং অফিসারদের বক্তব্যের কোনও মূল্যই থাকবে না।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই ধারণা, আইএএস অফিসারদের দিয়ে এই নীতি কার্যকর করতে চাইলেও, শেষ পর্যন্ত আইপিএস এবং আইএফএস (ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস)-দের ক্ষেত্রেও তা কার্যকর হবে। কারণ, এই পদগুলো সর্বভারতীয় বলেই গ্রাহ্য করা হয়ে থাকে। মনে করা হচ্ছে, এর ফলে ভয়ানক চাপের মুখে পড়ে যাবেন অফিসারেরা। কারণ, কেন্দ্র বদলির নির্দেশ দেওয়ার পরে রাজ্য না ছাড়তে চাইলে তাঁদের চাকরি নিয়ে কার্যত টানাটানি শুরু হয়ে যাবে।
আইএএস ক্যাডার আইনের সংশোধন করতে চেয়ে কিছু দিন আগেই নবান্নে চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। রাজ্যের অবস্থান জানাতে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছিল তারা। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু যে একতরফা তা নয়, এটা সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সার্ভিসের অফিসারদের ডেপুটেশন নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যে সহযোগিতামূলক বাতাবরণ রয়েছে, তাও এই পদক্ষেপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মোদীকে লেখা চিঠিতে মমতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে একসময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ফলে তিনি রাজ্যের পরিস্থিতি এবং অফিসারদের বিষয়টি খুব ভাল করেই বোঝেন। রাজ্যের অমতে অফিসারদের টেনে নেওয়া হলে জনস্বার্থ যেমন বিঘ্নিত হবে, তেমনই আধিকারিকদের মনোবল ধাক্কা খেতে পারে। ফলে এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্যের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সম্মতি থাকা প্রয়োজন।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, নতুন চিঠিতে কেন্দ্র রাজ্যের মতামতের কোনও সুযোগই রাখেনি। এমনকি, অফিসারদের সম্মতিও এ ক্ষেত্রে ধর্তব্যের মধ্যে আসবে না। প্রশাসনিকমহল জানাচ্ছে, আগে রাজ্যের সম্মতি, অফিসারের ইচ্ছা এবং কেন্দ্রে পদ ফাঁকা থাকছে কি না-এই ত্রিমুখী বিষয়ের উপর ডেপুটেশন নির্ভর করত। এখন বিষয়টি পুরোপুরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। রাজনৈতিক ভাবেও এই আইনের অপব্যবহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই। প্রাক্তন এক আইএএস-এর কথায়, “রাজনৈতিক প্রভাবশালী কেউ যদি মনে করেন, অমুক অফিসারকে তাঁর পছন্দ নয়, তা হলে তিনি প্রভাব খাটিয়ে সেই অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। এর ফলে অফিসারেরা রীতিমতো সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বেন। কারণ তাঁদের সুবিচার পাওয়ার রাস্তাই কার্যত বন্ধ হবে। সর্বোপরি, চাকরি নিয়েই টানাটানি হবে সেই অফিসারের।”
আধিকারিক মহলের অনেকেরই ব্যাখ্যা, কোনও সিদ্ধান্তে অফিসারদের আপত্তি থাকলে তিনি কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বা ক্যাট-এর দ্বারস্থ হতে পারতেন। দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে যে কোনও অফিসার নিজের রাজ্যস্থিত ক্যাটে সুবিচারের জন্য যেতে পারতেন। কিন্তু এখন সব মামলাই দিল্লির ক্যাটে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। ফলে তাঁর সুবিচারের রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, আগের চিঠিতে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্র। এক, রাজ্য থেকে কেন্দ্রের ডেপুটেশনে যে সংখ্যায় অফিসার পাঠানোর রীতি, তা বজায় রাখতেই হবে। দুই, তা না হলে, রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে অফিসার বা অফিসারদের ডেপুটেশনে চাইবে কেন্দ্র। তবে রাজ্য আপত্তি করলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসার বা অফিসারদের কেন্দ্রের ডেপুটেশনে টেনে (স্ট্যান্ড রিলিভড) নেওয়া হবে। তিন, তার বাইরেও কোনও অফিসারকে নির্দিষ্ট কোনও পদে বসাতে চাইলে রাজ্যকে কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে নিতে হবে।
আগের এই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছেন মমতা। এ বার তার চেয়েও আরও ভয়ানক পদক্ষেপের ঈঙ্গিত দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy