প্রতীকী ছবি।
গোড়াতেই গন্ডগোল ছিল। সেই সূত্র ধরেই স্কুলের নিয়োগে দুর্নীতি স্পষ্ট হয়ে যায় আদালতের সামনে। ভুয়ো মেধাতালিকা, তথ্য লোপাট-সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর বিরুদ্ধে। গ্ৰুপ-ডি কর্মী নিয়োগ মামলায় অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমনটা তথ্যই উঠে আসে হাই কোর্টের গঠিত কমিটির হাতে।
স্কুলে গ্ৰুপ-ডি বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ মামলায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ স্থগিত করে প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির বাকি সদস্যেরা আশুতোষ ঘোষ (পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের সদস্য), পারমিতা রায় (মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি) এবং অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায় (হাই কোর্টের আইনজীবী)। গোটা অনুসন্ধানে সব থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ পালন করেছেন পারমিতা এবং আশুতোষ। কারণ, শিক্ষা দফতরের এই কর্মীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খুবই অভিজ্ঞ এবং দফতরে তাঁদের ভাবমূর্তি যথেষ্ট স্বচ্ছ বলেই মনে করা হয়। সোমবার ওই কমিটিই ৬৯ পাতার রিপোর্ট জমা দেয় হাই কোর্টে। সেখানে জানানো হয়, ৬০৯ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।
এই ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ প্যানেল বা মেধাতালিকা প্রকাশ করত না এসএসসি। ২০১৯ সালে হাই কোর্টের নির্দেশে তারা নম্বর-সহ সম্পূর্ণ তালিকা বার করে। ফলে কার, কত নম্বরে নাম রয়েছে সবই জানতে পারেন পরীক্ষার্থীরা। সোমবার আদালতে পেশ করা কমিটির রিপোর্ট বলছে, ওই মেধাতালিকা ভুয়ো ছিল। আসল তালিকা বার করেনি এসএসসি। নিজেদের পছন্দ মতো নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তার পর সেই সব নাম মধ্যশিক্ষা পর্ষদে সুপারিশ করে এসএসসি। তার ভিত্তিতেই নিয়োগপত্র দেয় পর্ষদ। অর্থাৎ নকল প্যানেল তৈরি করে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তবে আসল প্যানেল নিজেদের কাছে সংরক্ষিত রাখে এসএসসি।
এই ঘটনার সত্যতা জানা যায় কয়েক জন পরীক্ষার্থী তথ্যের অধিকার আইন (আরটিআই)-এ জানতে চাওয়ার পর। অনেকে আশাতীত ফল না করায় ওই আইনে নিজের নম্বর জানতে চেয়েছিলেন। ভুলবশত এসএসসি-র অফিস থেকে ভুয়োর পরিবর্তে আসল প্যানেল দিয়ে দেওয়া হয়। যার কারণেই এই নিয়োগ নিয়ে এখনকার এত মামলা-মোকদ্দমা। তবে আরও একটি বড় ভুল করেছে এসএসসি। কমিটির রিপোর্ট বলছে, ওই বছর এসএসসি সাধারণ স্বাক্ষর তুলে ডিজিটাল স্বাক্ষর চালু করে। তার পিছনে পর্ষদের মদতও ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, এসএসসি-র পাঁচটি আঞ্চলিক অফিস থেকে কৃতী পরিক্ষার্থীদের নাম সুপারিশ করা হয়। সেই নামের উপরেই সিলমোহর দেয় প্রধান অফিস। এই নিয়োগের ক্ষেত্রেও সুপারিশ এসেছিল আঞ্চলিক অফিস থেকে। কিন্তু প্রকৃতদের বঞ্চিত করে নতুন নাম ঢোকানো হয়। সুপারিশপত্রে ব্যবহার করা হয় আঞ্চলিক অফিসের চেয়ারম্যানদের নকল স্বাক্ষর। অর্থাৎ সই জাল করে চাকরি দেওয়া হয় অন্যদের।
হাই কোর্টের গঠিত ওই কমিটি তদন্ত করতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেয়েছে। তারা লক্ষ করেছে, নামের সঙ্গে মিল নেই অনেক নথির। কমিটির ধারণা, যে ওএমআর সিটে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল এখন তার কোনও অস্তিত্বই নেই। হয় পুড়িয়ে দেওয়া বা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি কম্পিউটারে থাকা নথিও মুছে ফেলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, মামলাকারীদের অনেকেই সিবিআইয়ের পরিবর্তে তৈরি করা এই কমিটির অনুসন্ধানের উপর ভরসা করতে পারেননি। অথচ অনিয়মের বেড়াজাল ভেদ করতে পেরেছে তারাই। কমিটিই প্রথম এই মামলায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম তুলে এনেছে। দোষীদের কোনও রেয়াত নয়। কোন আধিকারিকের বিরুদ্ধে কী কী ধারায় মামলা দায়ের করতে হবে, সবটাই নিজেদের সুপারিশে জানিয়েছে কমিটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy